পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- २b প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩২২ বৃদ্ধি করিতে পারে না। এরূপ গ্রন্থের আমরা কেন আদর করিব ? এরূপ উপগ্রন্থকে, মহাগ্রন্থের গায়ে পরগাছা গ্রন্থকে বিলাতে rechauffee বলে, অর্থাৎ বাসি চপ, কট্‌লেটু পরদিন গরম করিয়া টাটুকা জিনিষ বলিয়া বেচিবার চেষ্টা করা হইতেছে এরূপ মাল। বাঙ্গলা সাহিত্যে যদি এইরূপ গরম-করা বাসি ইতিহাসের বেশী কাটুতি হইতে দেওয়া যায় তবে সাহিত্য-ভোক্তাদিগের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে বিশেষ শঙ্কিত হইতে হইবে । এরূপ গ্রন্থের নিৰ্ম্মম সমালোচনা করা একটি অবশ্যকৰ্ত্তব্য কাৰ্য্য, যদিও ইহ অত্যন্ত অপ্রীতিকর। এ কাজ ব্যক্তিবিশেষ না করিয়া স্বধীমণ্ডলী করিলে ভাল দেখায়, এবং তাহাতে বেশী ফল হয় । যেখানে অনুবাদ ব্যবহার না করিলে চলে ন৷ সেখানে সৰ্ব্বশেষে রচিত অথবা সৰ্ব্বাপেক্ষা বিশুদ্ধ অনুবাদটি অবলম্বন করিতে হইবে। এই দেখুন, সম্রাট জাহাঙ্গীরের আত্ম জীবনীর ইংরেজী দুই অনুবাদ অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে প্রাইস ও এণ্ডারসন নামক দুইজন সাহেব বাহির করেন ; তাহ অত্যন্ত অশুদ্ধ ফার্সী পুথী অবলম্বনে লিখিত, এবং অনুবাদকেরাও অনেক স্থলে অর্থ ভূল বুঝিয়াছেন। ঐ পুস্তকের বিশুদ্ধ ফার্স পাঠ অবলম্বন করিয়া রজাস সাহেব যে ইংরেজী অনুবাদ রচনা করেন, তাহাতে মূল্যবান ভৌগোলিক টীকা ও সংশোধনী যোগ করিয়া দিয়া বেভরিজ সাহেব তাহ কয়েক বৎসর হইল প্রকাশ করিয়াছেন । যদি আমরা প্রথমোক্ত অশুদ্ধ ইংরেজী অনুবাদের বাঙ্গল। অনুবাদ করি, রজাসের অনুবাদ দেখা আবশ্যক বিবেচনা না করি, তবে এরূপ অনুবাদে বঙ্গসাহিত্য পরিপুষ্ট হইল এ কথা বলা যায় না। সেইমত, চীন পৰ্য্যটকদিগের ভ্রমণকাহিনীর, মানুশীর গ্রন্থের এবং অশোকের অনুশাসনের একাধিক ইংরেজী অনুবাদ অাছে। তাহার মধ্যে সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ অনুবাদটিই বাঙ্গলা লেখকের ব্যবহার করুন এই বলিয়া জেদ করা সুধীমণ্ডলীর কৰ্ত্তব্য। কথন কঞ্চন বাধ্য হইয়। অতুবাদের অতুবাদ ব্যবহার করিতে হয়। কিন্তু কোটেসনের কোটেসন তন্ত কোটেসন কেন ব্যবহার করিব ? ইংরেজীতে একটি বড় কাজের কথা - আছে, “Always verify your references,” offs [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড. ヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘ・エ যাহার মত উল্লেখ করিলে তিনি ঠিক সেই কথাগুলি. বলিয়াছেন কিনা তাহ ভাল করিয়া দেখিবে। আমি o পরের বচনটি তুলিয়া দিলাম, তাহা কাহার বচন এবং কোন ৷ গ্রন্থ হইতে আমি পাইয়াছি তাহ নির্দেশ না করিলে | সাহিত্যিক অসাধুত হয়, এবং ভ্রম সংশোধনেও বাধা পড়ে। ইতিহাসে লেখক বিস্তৃত ও বিশুদ্ধ প্রমাণপত্নী দিতে | বাধ্য। আইনের পুস্তক যেমন গুড়িগুড়ি অক্ষরে ছাপা নজীরের উল্লেখে পূর্ণ না হইলে চলে না, তেমনি ইতিহাসও বৰ্জাইস অক্ষরের ফুটনোটে আবৃত হওয়া আবশ্যক । ইহ পাণ্ডিত্য ফলাইবার উপায় নহে, ইহা না থাকিলে . গ্রন্থের মূল্যহানি হয়। প্রত্যেক প্রকৃত ঐতিহাসিক প্রতি । পৃষ্ঠার পাদদেশে টাকা দিয়া তাহাতে প্রামাণিক গ্রন্থের নাম, সংস্করণ বা প্রকাশের বৎসর, পৃষ্ঠাঙ্ক প্রভৃতি পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে শুদ্ধ করিয়া উল্লেখ করা অবশ্য-কৰ্ত্তব্য বলিয়া জ্ঞান করেন। আমাদের বড় দোষ যে আমরা অনেকেই নিজের রচিত । ইতিহাস বা প্রবন্ধে এইরূপ আদি বৃত্তাস্তের নাম ও পৃষ্ঠাঙ্ক উল্লেখ করার পরিশ্রমটুকু সহিতে চাহিনা ; হয়ত প্রথমে কতকগুলি গ্রন্থের নাম মাত্র করিয়া ছাড়িয়া দিই। ইহাতে অামাদের জ্ঞানকৃত ও অজ্ঞানকৃত ভ্রমগুলি সংশোধন করিবার উপায় থাকে না, এবং জ্ঞানপিপাস্ক পাঠকও নিজে আদিবৃত্তান্ত পড়িয়া কোন বিষয়ে বেশী জানিবার পথ দেখিতে পান না । এই যে সব প্রণালী এ পর্য্যস্ত নির্দেশ করিলাম, তাহ হিসাব রাখার মত শুধু পরিশ্রমের কাজ, ইহাতে বিশেষ মেধার আবশ্যক নাই । আমরা যদি এই কাজ অবশ্যকৰ্ত্তব্য বলিয়া মনে করি এবং আলস্য ত্যাগ করি, তরে | আমাদের মধ্যে সকলেই এ কাজ করিতে পারেন । এখন ইতিহাস রচনার আরও উচ্চতর সোপানে চড়া । যাউক। ইতিহাসলেখক ব্যক্তিগত ভ্রম সংশোধনের যথাসাধ । চেষ্টা করিবেন ; একই ঘটনার উপর ভিন্ন ভিন্ন দিক হইতে । আলোকপাত করবেন। শত্রুপক্ষ ইহা বলিয়াছে মিত্ৰ । পক্ষ উহা বলিয়াছে, বিদেশী ভ্রমণকারী এরূপ দেখিয়৷ গিয়াছে, স্বদেশী কবি ওরূপ সাক্ষ্য দিয়াছে—এই সকল । তথ্য একত্র করিয়া, তাহার মধ্যে কোন সাক্ষীটি বিশ্বাস । যোগ্য এবং কতদূর পর্য্যস্ত বিশ্বাসযোগ্য তাহ স্থির করিলে, . ১ম সংখ্যা।] তবে অতীত ঘটনার ইতিহাসে কোন পক্ষ প্রথমে একতফর্ণ ডিক্ৰী পান, তবে ുസ്സ്.സംസ প্রকৃত স্বরূপ জানা যায়। যদি তাহা একদিন আপসেট হইবেই হইবে, কারণ জগতের জ্ঞানের আদালতে আপীল কথন তমেয়াদি দোষে বারিত হয় না ; শত শত বৎসর পরেও অন্যায় মতের বিরুদ্ধে নালিশ করা চলে ; আপীলের চূড়ান্ত সীম৷ সত্যনিৰ্দ্ধারণ পৰ্য্যন্ত গিয়া তবে থামে। যদি মার্জন করেন তবে আমার নিজের অভিজ্ঞতা হইতে দুটি দৃষ্টান্ত দিতে চাই। আমি এখন মির জুমলার আসাম ও কুচবিহার জয়ের ইতিহাস লিখিতে প্রবৃত্ত আছি ; এজন্য একপক্ষে মুঘল সংবাদদাতার ফার্স গ্রন্থ ও বাদশাহী ফার্সী ইতিহাস, অপরপক্ষে আসামী দের লিখিত বুরপ্পী এবং একজন ডাচ জাহাজী সৈন্তের কাহিনী ব্যবহার করিতে হইতেছে। সেইমত, শিবাজীর ও শম্ভাঙ্গীর কার্য্যকলাপের জন্য মূঘল বাদশাহুদিগের পক্ষে লিপিত ফার্সী ইতিহাস, দুইজন সমসাময়িক নিরপেক্ষ হিন্দুর লিখিত ফার্স ইতিহাস, বিজাপুর ও গোলকুণ্ডার সুলতানদের জন্য লিখিত ফার্সী ইতিহাস, মারাঠী ভাষায় লিখিত বথর ও পত্রাদি, এবং ইউরোপীয় বণিকদের সাক্ষা,—এই পাচ প্রকার বিভিন্ন উপাদান সংগ্ৰহ করিতে হইয়াছে। ঘটনার সত্যনিৰ্দ্ধারণ করিয়াই ঐতিহাসিকের কার্য্য শেষ হইল না। অতীত যুগের বাহ আবরণ, তাহার গায়ের চামড়াটি, চক্ষুর সম্মুখে সহজে আনা যায় ; কিন্তু তাহার হৃদয়টি দেখাইতে ন পারিলে প্রকৃত ইতিহাস হয় না। শুধু রাজা, রাজ্যপরিবর্তন, যুদ্ধ বিগ্রহ লইয়। ইতিহাস নহে। ইতিহাস দর্শননামের যোগ্য, কিন্তু পদেপদে দৃষ্টান্ত নজীর . দেখাইয়৷ এই দর্শন লিখিতে হয়। দার্শনিক না হইলে প্রথম শ্রেণীর ঐতিহাসিক হওয়া যায় না। কিন্তু এরূপ লেখক ক্ষণজন্ম পুরুষ ; আমাদের পরিষৎ বা সম্মিলন তাহাকে স্বষ্টি করিতে পারে না। স্বতরাং স্বধীমণ্ডলীর চেষ্টায় এ মহাকার্য্যের যতদূর সাহায্য হইতে পারে, কেবল তাহার বিষয়েই আমি বলিব । ( ১ ) প্রত্যেক বিভাগের প্রধান প্রধান বিষয়ে ও শাখায় যে কয়থানি বই হইতে নূতনতম ও সৰ্ব্বাধিক মূল্যবান জ্ঞান লাভ করা যাইতে পারে তাহার তালিকা প্রকাশ । সেই বিষয়ে দেশী বিদেশী পণ্ডিতমণ্ডলী এ ইতিহাস চর্চার প্রণালী পৰ্য্যস্ত কতদূর অগ্রসর হইয়াছেন তাহার ঠিক বিবরণ এইসব বই হইতেই আমরা পাইব । পূৰ্ব্বে অর্জিত জ্ঞানের সিড়ির উপর না দাড়াইলে আমরা বিদ্যা-বুক্ষের উচ্চতর শাখায় চড়িতে পারি না । ( ২ ) পরিষৎ ও অন্য সুধামণ্ডলী অথবা মহাহুভব জমিদারগণ এইসব সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ পুস্তক, প্রাচীন মুদ্রার সচিত্র তালিকা, লগুন ও বঙ্গীয় এসিয়াটিক সোসাইটি-দ্বয়ের গত ৩০ বৎসরের পত্রিক, ইণ্ডিয়ান এণ্টিকোম্বেরী ও এপিগ্রাফিয়া ইণ্ডিকা, সার্বেয়ার জেনেরালের আফিস হইতে প্রকাশিত ১ ইঞ্চি = ৪ মাইল স্কেলের ভারতবর্ষের ম্যাপ, প্রভৃতি অত্যাবশ্যক উপকরণ সংগ্ৰহ করিয়া রাখিবেন। সেগুলির মধ্যে বাছিয়া বাছিয়া এক এক বাক্স গ্রন্থ ক্রমান্বয়ে সমস্ত শাখা-পরিষং ও মফস্বলের বিশ্বাসযোগ্য পুস্তকালয় ঘুরিয়া আসিবে। আমাদের গবর্ণমেণ্ট চিকিৎসা-বিভাগে এইরূপ ভ্ৰাম্যমান পুস্তকালয় স্থাপন করিয়া মফস্বলের ছোট ছোট শহরের ডাক্তারদের জ্ঞানের বিস্তার ও নবীনতার উপায় করিয়া দিয়াছেন । (৩) মূল পরিষদের এক বিভাগ খুলিতে হইবে যাহার নিকট আবেদন করিলে জিজ্ঞাসু নিজের চর্চার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কর্তৃক রচিত প্রমাণপঞ্জী পাইবেন। পরিষং বাছিয়া ইতিহাসের প্রতি শাখার জন্য এক বা দুই জন বিশেষজ্ঞ স্থির করিবেন, এবং জিজ্ঞাস্থর পত্ৰখানি উপযুক্ত শাখার বিশেষজ্ঞের নিকট পাঠাইয়া দিবেন, তিনি তাহার উত্তর দিবেন। এইসব বিশেষজ্ঞের নাম ও. ঠিকানা পরিষৎ-পত্রিকায় সৰ্ব্বদা ছাপা থাকিবে, এবং উহার জিজ্ঞাস্থদের নিকট যেসব সমালোচনাপূর্ণ প্রমাণপঞ্জী (critical bibliography) offsfērā stēts 2*fr= হইবে । ১৯০৭ খ্ৰীষ্টাব্দের মডার্ণ রিবিউএ শিখ-ইতিহাস সম্বন্ধে এরূপ একটি তালিকা প্রকাশিত হয়। আমাদের সম্মিলন বঙ্গভাষাভাষীদিগের। সুতরাং ঐতিহাসিক চর্চার অত্যাবশ্বক গ্রন্থগুলি বাঙ্গলা আকারে সাধারণের হাতে দিতে না পারিলে আমাদ্রের কৰ্ত্তব্যে ক্রটি হইবে । এই দেখুন প্রতি বৎসর শত শত বঙ্গভাষী সংস্কৃত ‘ পরীক্ষা দেয় । তাহারা ইংরেজী জানে না, এবং অসংখ্য বাঙ্গল মাসিকের পৃষ্ঠায় ঐতিহাসিক প্রবন্ধগুলি জিয়