পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ጓሩ» বৰ্ত্তমানে রবীন্দ্রনাথ হার্ভার্ডে সুপরিচিত। র্তাহার Sadhana—সাধনা গ্রন্থের প্রবন্ধগুলি এই বিশ্ববিদ্যালয়েই পঠিত হইয়াছিল। জগদীশচন্দ্রও একবার হার্ভার্ডে বক্তৃতা দিবার জন্য আহত হইয়াছেন। তাহ ছাড়া শ্ৰীযুক্ত রামকৃষ্ণ গোপাল ভাণ্ডারকার এখানকার প্রত্নতাত্বিক মহলে প্রসিদ্ধ। বলা বাহুল্য ভারতবর্ষ এখনও সুপ্রচারিত নয় । . শুনিলাম—সম্প্রতি একটা নূতন নিয়ম করা হইয়াছে। তাহার ফলে ভারতীয় ছাত্রেরা হিন্দী, মারাঠী, বাঙ্গালা অথবা অন্য কোন মাতৃভাষায় পারদর্শিত দেখাইতে পারিলে ভাষা-পরীক্ষা সম্বন্ধে অনেকটা অব্যাহতি পাইবে । ইংরেজী ভাষাকে ইহাদের দ্বিতীয়-ভাষা-স্বরূপ গ্রহণ করা হইবে। ইংরেজ অথবা ইয়াঙ্কি-ছাত্রেরা ইংরেজীর সঙ্গে ল্যাটিন অথবা ফরাসী ভাষা না শিপিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশাধিকার পায় না। ভারতীয় ছাত্রদের পক্ষে ল্যাটিন অথবা ফরাণী শিথিয় প্রবেশিকা পরীক্ষা দেওয়া কঠিন । এজন্য তাহাদের মাতৃভাষার সঙ্গে মাত্র ইংরেজী ভাষায় জ্ঞান পরীক্ষিত হইবে । ইহাতে ভারতীয় ছাত্রদিগের স্ববিধা হইল সন্দেহ নাই । একয়দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরী, মিউজিয়াম, পাঠাগার ইত্যাদি দেখিতেছি। সঙ্গে সঙ্গে কিছু পড়াশুনাও করা যাইতেছে। পৰ্য্যটকগণের শরীর খুব সুস্থ ও শক্ত থাকা আবশ্যক। প্রতিদিন সকাল ৮টা হইতে রাত্রি ১টা পৰ্য্যন্ত কৰ্ম্মঠ থাকিতে হয় । কাইরে হইতে এইরূপ নিত্যকৰ্ম্ম-পদ্ধতি সুরু হইয়াছে। লোক দেখা, জিনিষ দেখা, আন্দোলন দেখা সৰ্ব্বত্রই প্রায় একরূপ । মাশুল দিয়৷ যখন আসা গিয়াছে তখন কিছুই বাদ দিতে প্রবৃত্তি হয় না। কাজেই শারীরিক পরিশ্রম অত্যধিক । তাহার উপর পড়াশুনার চাপও কম নয়। বিগত দশ বৎসরের ভিতর বিশ্বচিন্তায় অনেকদিকে নূতন নূতন তত্ত্ব প্রচারিত হইয়াছে। ভারতবর্ষে বসিয়া এ সকলগুলির সাক্ষাংলাভ ত দূরের কথা—অনেক সময়ে উল্লেখ পৰ্য্যন্ত শুনিতে পাই না। ভারতবর্ষে নূতন চিন্তা ৩০ বৎসর পরে পৌছিয়া থাকে। অথচ বর্তমান জগতের এই-সমুদয় তত্বের ও তথ্যের মোটামুটি জ্ঞান না থাকিলে অন্ধের ন্যায় পৰ্য্যটন করা প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩২২ হয়,—অন্তত: কোন বিচক্ষণ ব্যক্তির সঙ্গে কথাবার্তা বলিবার অধিকার জন্মে না। ফলতঃ পৰ্য্যটনকারীকে মস্তিষ্ক সৰ্ব্বদা সজাগ রাখিয়া চলিতে হয়। টাকা পয়সা খরচ ছাড়া শারীরিক এবং মানসিক খরচও পৰ্য্যটকগণের ব্যয়ের মধ্যে ধরা উচিত । এই দুই প্রকার বায়ের জন্য প্রস্তুত না থাকিলে দেশের বাহিরে আসিয়া লাভ নাই । কোন প্রধান নগরের মিউজিয়ামগুলির সঙ্গে হার্ভার্ডের সংগ্ৰহালয়সমূহের তুলনা করিবার প্রয়োজন নাই। কারণ এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও অধ্যাপকগণের নিত্যব্যবহারের উপযোগী বস্তুসমূহ সংগৃহীত হইয়াছে। পুথিগত বিদ্যাকে সরস ও সজীব করিবার জন্য এই-সমুদয় মিউজিয়ামের উৎপত্তি। কাজেই নিউইয়র্কের জীব-নমুনার Hezszfzig ( Natural History Museum ) azt বোটানিক্যাল গার্ডেন অথবা লণ্ডনের ব্রিটিশ মিউজিযম দেখা থাকিলে হার্ভার্তে নৃতন করিয়া কোন দ্রব্য দেখিবার প্রয়োজন হয় না । &Rättöð (Botanical Museum ) উদ্ভিদ-সম্বন্ধীয় মিউজিয়মে বিশেষ উল্লেখযোগ্য কয়েকটা বস্তু দেখিলাম। কাচের প্রস্তুত উদ্ভিদ লতাপাতা ও ফুল এপানকার কয়েকটা ঘরে প্রদর্শিত হইতেছে। এগুলি দেখিতে ঠিক প্রাকৃতিক পদার্থের অতুরূপ । সম্মুখে দাড়াইয়াও বিশ্বাস হয় না যে এগুলি প্রকৃতির অনুকরণে মানুষের তৈয়ার জিনিষ। জাৰ্ম্মানির কয়েকজন শিল্পী এইরূপ কৃত্রিম উদ্ভিদ প্রস্তুত করিতে পটু। তাহাদের সঙ্গে হার্ভাডা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা করিয়াছেন যে র্তাহার। অন্য কাহারও নিকট এই সমুদয় বস্তু বিক্রয় করিতে পরিবেন না। যেমন যেমন দ্রব্যগুলি প্রস্তুত হয় তেমন তেমন এইসমুদয় হার্ভার্ডের সংগ্রহালয়ে তাহারা পাঠাইয় থাকেন। কাজেই প্রতিবৎসর সংগ্রহালয়ের দ্রব্যসংখ্যা বাড়িয়া যাইতেছে । ক্রমশ: উদ্ভিদবিজ্ঞানের সকল বিভাগই হয়ত এই সমুদয় কাচের নমুনার সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যাইবে। জাৰ্ম্মানিতে কাদামাটির কাজ, চীনামাটির কাজ ইত্যাদি অত্যুৎকৃষ্টরূপে করা হয়। অস্থিবিদ্যা জীব-বিদ্যা শরীর- , বিদ্যা ইত্যাদি বিভাগের জন্য নানাপ্রকার 'মডেল’ জাৰ্ম্মান কুম্ভকারের প্রস্তুত করিয়া থাকেন। এই সমুদয় মডেল [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড | ৪র্থ সংখ্যা ] কতকগুলি মড়ার মাথা দেখিলাম। . হইয়াছে। বা নিদর্শন দুনিয়ার সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং ল্যাবরেটরীতে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। কলিকাতায়ও এই সমুদয় দ্রব্য দেখা যায়। কাচনিৰ্ম্মিত মডেল এই প্রথম দেখিলাম। যেন তেন প্রকারেণ কাজ সারা নয়— এগুলি বৈজ্ঞানিক ল্যাবরেটরীতে ব্যবহার করা চলিতে পারে। এই সমুদয় মডেলে আকৃতির বৈচিত্র্য, রংয়ের বৈচিত্র্য ইত্যাদি সবই যথারীতি রক্ষিত হইয়াছে। প্রাকৃতিক বস্তুর অভাব হইলে আজকাল চিত্রের সাহায্যে উদ্ভিদবিজ্ঞান শিখান হয়। ভবিষ্যতে এই-সমুদয় কাচনিৰ্ম্মিত নিদর্শনের ব্যবহার হইতে পারিবে । • প্রধানতঃ লোহিতাঙ্গ ইণ্ডিয়ানদিগের জীবনযাত্রা বুঝাইবার জন্য এই সংগ্ৰহালয় প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু প্রাচীন মেক্সিকো ও পেরু এবং জগতের অন্যান্য স্থানেরও মৃনাধিক পরিচয় প্রদত্ত হইয়াছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও অধ্যাপকগণ নৃতত্ব শিখিবার জন্য এই সংগ্ৰহালয়কেই ল্যাবরেটরী ও বক্তৃতালয়রূপে ব্যবহার করেন। একগৃহে জগতের নানাস্থান হইতে নানাজাতীয় নরনারীর মাথা সংগৃহীত রহিয়াছে। ভারতীয় মস্তকও কতকগুলি দেখিলাম। অধ্যাপক লুশান বলিতেছিলেন এই মাথা-সংগ্রহে তিনি জগতে अश्डौिम्न । ভূতত্ত্ব, ভূগোল, ও খনিজতত্ত্ব-বিষয়ক গৃহে অন্যান্য সাধারণ বস্তুর সঙ্গে কতকগুলি প্রাচীন ইয়োরোপীয় মানচিত্র দেখিলাম। এডিনবারার ‘আউটলুক টাওয়ারে' অধ্যাপক প্যাটিক গেডিজের সংগৃহীত মানচিত্রগুলি এইরূপ। এতদ্ব্যতীত অষ্টাদশ শতাব্দীর ইয়োরোপীয়েরা কিরূপ গুলিগোল কামানবন্দুক ইত্যাদি ব্যবহার করিতেন তাহার সামান্য পরিচয় প্রদত্ত হইয়াছে। সেগুলির সঙ্গে আজকালকার জাৰ্ম্মান-আবিষ্কারসমূহের তুলনা করা বাতুলত৷ মাত্র । কিন্তু সেগুলির সঙ্গে সংস্কৃত সাহিত্যের শুক্রনীতিবর্ণিত যুদ্ধসম্ভারের তুলনা সহজেই চলিতে পারে। অষ্টাদশ শতাব্দীর অষ্টেও বন্দর এবং ট্রিয়েষ্ট বন্দর ও চিত্রে প্রদর্শিত চিত্রের মধ্যে দেখা গেল উত্তরসাগরে ব্যবহৃত এবং ভূমধ্যসাগরে ব্যবহৃত অর্ণবযান। এই-সমুদয় অর্ণবযানও সমসাময়িক ভারতীয় জাহাজ অপেক্ষ উৎকৃষ্টতর বোধ পাতালের অক্সফোড" 8ፃፃ


---------്.-- হইল না। অষ্টাদশ শতাব্দীর জগং সৰ্ব্বত্রই কি প্রায় একরূপ ছিল না ?

সেমিটিক মিউজিয়াম দেখিলাম। ভারতবর্ষের পশ্চিমসীমান্ত প্রদেশ হইতে এশিয়ামাইনরের উপকূল পৰ্য্যস্ত জনপদের অতীত ইতিহাস এই সংগ্রহালয়ে বুঝিতে পারা যায়। প্রদর্শিত দ্রব্যনিচয়ের সংখ্যা ও পরিমাণ বেশী নয়। অধিকাংশই ব্রিটিশ মিউজিয়াম, পারীর লুভর মিউজিয়াম এবং বার্লিন ও কনষ্টাণ্টনোপল নগরদ্বদের সংগ্রহালয়ে রক্ষিত নিদর্শনসমূহের নকলচিত্র অথবা নকলমূৰ্ত্তি । কিন্তু অল্প আয়াসে এশিয়ার এই অঞ্চলের মোটা কথা এখানে শিথিতে পারা যায়। প্রত্যেক দ্রব্য বুঝাইবার জন্য সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদত্ত হইয়াছে। প্রথমে প্রাচীন এসিরিয়া ও ব্যাবিলনিয়ার সভ্যতা দেখা গেল। প্রাচীন মিশরের মূৰ্ত্তি, খোদিত লিপি ইত্যাদির কথা সহজেই মনে পড়িল। নরপতিগণের মূৰ্ত্তি এবং দেবগণের মূৰ্ত্তি একুরূপ। মিশরেও অনেক ক্ষেত্রে রাজাই দেবতা। যুদ্ধবিগ্রহ, নগর-আক্রমণ, মৃগয়া, অশ্বপরিচালনা তীরধতুকপরীক্ষা, ইত্যাদি সামরিক চিত্রই বেশী। প্রাচীন মিশরের ফারাওগণ এবং প্রাচীন পারশ্যের হিটাইট সভ্যতার প্রবর্তৃকগণ অনেকটা একধরণের জীবনযাপন করিতেন । হিটাইটদের সভ্যতার নিদর্শন ধরিবার উপায় কঠিন নয়। মাথার টুপি, দাড়ি, এবং পোষাক দেখিলেই এসিরিয়া ও মিশরের প্রভেদ বুঝিতে পারা যায়। অবশু প্রত্নতত্ত্ব অত ছেলেমামুষি নয় । মিশরের ছাচে এসিরিয়ায় ওবেলিস্ক নিৰ্ম্মিত হইত। একটা ওবেলিস্ক দেখিলাম। তাহাতে খৃষ্টপূৰ্ব্ব নবম শতাব্দীব নরপতি শালমানেসার তাহার সামরিক কীৰ্ত্তির বিবরণ লিপিবদ্ধ করাইয়াছেন । প্রাচীন মিশর কিম্বা প্রাচীন এসিরিয়া ও ব্যাবিলনিয়ার কথা উঠিলে প্রাচীন ভারতের কথা সহজেই মনে আসে। কিন্তু বড়ই বিস্ময়ের কথা—ভারতবর্ষ সম্বন্ধে খৃষ্টপূৰ্ব্ব চতুর্থ শতাব্দীর পূর্ববর্তী কোন বস্তু বা ঘটনার অকাট্য প্রমাণ এখনও পাওয়া যায় নাই । সেমিটিক সংগ্রহালয়ের দ্বিতীয় বিভাগ প্যালেষ্টাইন