পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q○8

    • ヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘ

প্রবা বিকৃত মুখে কপাল টিপিয়া ধরিয়া আন্দু বলিল "বড় মাথা ধরেছে।" রহিম অসন্তুষ্ট হইয়া বলিল—“ত ধরবে না মাথা, ঠিক দুকুরে রোদের তেজে মাথার চাদি উড়ে যায়, তখন তুমি টে। টো করে ঘুরে বেড়াও, নাওয়া খাওয়া কিছুরই বিলি বন্দেজ নেই। তার পর মগজের কাছে আলো জেলে রেখে সন্ধ্যে থেকে কেবল সেলাই আর সেলাই !—ত৷ যাও, ঘুরে বেড়াচ্ছ কেন ? একটু ঘুমুলে সেরে যাবে, ८*/i& 6१ों यां8 ।” রহিম চলিয়া গেল। তখন চৌধুরী-বাড়ীর সকলেই প্রায় নিস্তব্ধ হইয়াছে। আন্দু ফটক বন্ধ করিয়৷ বারান্দ পার হইয়া নিজের ঘরে গিয়া দরজা দিল। অন্ধকারে বিছানায় পড়িয়া ভাবিতে লাগিল । হঠাৎ বিছানা হইতে উঠিয়া দ্বার খুলিয়া বাহিরে আসিল। আন্দু বারান্দার প্রান্তবৰ্ত্তী ঘরথানির সামনে আসিয়া শুদ্ধবিকৃত কণ্ঠে ডাকিল “ঠাকুরঙ্গী |" ঘরে ঘরে চাকরেরা তখন সকলেই ঘোর নিদ্রায় অভিভূত। কেবল ঠাকুরজীর ঘরে তখনো আলে জলিতেছিল। দরজা জানালার ফাক দিয়া আলো দেখা যাইতেছিল, ঠাকুরজী অল্পক্ষণ পূৰ্ব্বে পাকশাল হইতে সকলের শেষে বাহির হইয়া আসিয়াছেন । কাশিয়া কণ্ঠ পরিষ্কার করিয়া আন্দু আবার ডাকিল "ঠাকুরঙ্গ ঘুমিয়েছেন কি ?” এবার ভিতর হইতে জবাব আসিল । আন্দু বলিল “দোরটা একবার খুলুন, একটু দরকার আছে।” আলো জালিয়া বিছানা পাতিয়া সমস্ত কাজ কৰ্ম্ম সারিয়৷ ঠাকুরজী মেঙ্গেয় বসিয়া ধীরে সুস্থে আয়েস করিয়৷ পান দোক্ত। চিবাইতেছিল, আন্দুর ডাকে উঠিয় দরজা খুলিয়া দেখিল, দুই হাতে চৌকাঠের শুদ1 ধরিয়া সামনে সুকিয়৷ ক্লান্ত ভাবে আলু দাড়াইয়া আছে । ঠাকুরঞ্জী বলিল "এপ্লনে জেগে কেন ভাই ?" ঠাকুরজী উড়িষ্যাবাণী। o আন্দু মুক্ত দ্বারপথে ঘরে ঢুকিয়া বলিল, “যুম হচ্ছে না। আপনি দোয়াত কলমটা একবার দিন।" দেয়াত কলম দিয়া ঠাকুরজী বলিল—“বস্বে না একবার ?" ^ヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘノー [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড । ു দ্বিরুক্তি না করিয়া দরজার পাশে দেয়ালে ঠেস্ দিয়া আন্দু তৎক্ষণং বসিয়া পড়িল, যেন সে বসিবার জন্য প্রস্তুত হইয়াই আসিয়াছিল। ঠাকুরজী মেজের উপর স্বতন্ত্র ভাবে বসিয়া বলিল “পান থাবে ?” আন্দু বলিপ "দিন, সাজা আছে ? নেই? তবে থাক থাক—” - “না না এখুনি সেজে দিচ্ছি" বলিয়া থলিয়ার ভিতর হইতে বটুয়া বাহির করিয়া ঠাকুরজী পান সাজিতে বসিল। একটু ইতস্তত করিয়া আন্দু বলিল—“ঠাকুরজী, আপনার ভাইঝির বিয়ে এথনো হয় নি ?" একটি ছোট নিশ্বাস ফেলিয়া দুঃখিত ভাবে ঠাকুরঞ্জী বলিল—“আর ভাই বিয়ে । ভাই মারা যাবার পর থেকে ভাইয়ের সংসার, নিজের সংসার, সবই আমার ঘাড়ে পড়েঙ্গে, পরের বাড়ী মাথা বিকিয়ে রইচি, যতক্ষণ এখান থেকে টাকাটি পাঠাচ্ছি ততক্ষণে হাড়ি চড়ছে, এই ত অবস্থা ; এদিকে মেয়েটিও বড় হয়ে উঠেছে, বিয়ে না দিলেই নয়। কি যে করি, কিছুই ভেবে পাচ্ছি নে ৷” আন্দু সোজা হইয়া বসিল । “আচ্ছা বলুন দেখি কত টাকা হলে আপনাদের বিয়ে হয় ?” ঠাকুরজী বলিল—“ত যে যেমন খরচ করতে পারে। আমাদের মত লোকেরও দেড়শো দুশোর কম তো হবার যো নেই,—” হঠাৎ অত্যন্ত উৎসাহিত ভাবে আন্দু বলিয়া উঠিল,— “শুতুন শুনুন একটা কথা বলি ।” ঠাকুরজী পানে চুন খয়ের দিয়া, তীক্ষধার ছোট স্বদেশী জাতিটিতে সুপারি কুচাইতেছিল ; আন্দুর কথার ভঙ্গীতে কাৰ্য্য স্থগিত রাপিয়া বলিল—“কি বল দেথি-” "চৌধুরীসাহেবের কাছে আমার কিছু টাকা জমান আছে, জানেন বোধহয়— "ই। ত। জানি ।” "সেই টাকা আমি আপনাকে দিচ্ছি, আপনি দেশে গিয়ে ভাই-বিটির বে দেন।” ঠাকুরজী চুপ করিয়া ভাবিতে লাগিল। পানে সুপারি দিয়া পান মুড়িয়া আঙ্গুর হাতে দিল, তার বটুয়াট। আবার থলিয়ার মধ্যে পুরিয়া থলিয়ার মুখ বন্ধ করিয়৷ দিল। তারপর পরম্পর সম্বদ্ধ হাত দুটি হাটুর উপর রাথিয়, সোজাসুজি আন্দুর দিকে ফিরিয়া বসিল । বলিল “দেখছ তো ভাই আমার হাল চাল, সে টাকা যে শী গ্রী শোধ করতে পারব তাতে মনেই হয় না,—” বধা দিয়া তাড়াতাড়ি আন্দু বলিল “ন না, সেজন্য আপনার কিছু ভাবনা নেই, আমি আপনাকে তিন বচ্ছর সময় দিলুম, তিন বছর পরে যখন হোক আপনি দিবেন,—" "তিন বছর কি, তিন মাস বল ।” "তিন মাস কেন ?" "তোমার নিজের বিয়ে থাওয়া আছে, সে সময় তে৷ খরচ পত্র চাই।" "আমার বিয়ে ”—আন্দু মৃদু হাসিল ; “সে যাই হোক মোদ আমি তিন বছরের মধ্যে আপনার কাছে টাক৷ চাইচি না এটা ঠিক।” - "ও, তাহলে আমার বড় উপকার করা হবে ভাই । তিন বচ্ছরের মধ্যে আমি যেমন করে হোক অল্পে অল্পে তোমার দেন শোধ করে অস্ব।”—ঠাকুরঞ্জার স্বর কু গুঞ্জতায় ভরা। আন্দু যেন একটা কঠিন দুৰ্দ্দশার হস্ত হইতে মুক্তি লাভ করিল, আরামের সহিত আলস্য ভাঙ্গিয়া বলিল "বেশ কালই তা হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।” “একটা কথা, সুদ কত করে ?” "স্থদ আবার কি ?—চৌধুরী-সাহেবের কাছে আমার টাকা অমনি জমা আছে, আপনার কাছেও তাই থাকবে। ঠাকুরজী, আন্দু কি আপনার ছোট ভাই নয় ?" আলুর আবদারের স্বরে ঠাকুরজীর চোখ ছলছল করিতে লাগিল, এমন স্নেহমাথা সহানুভূতি, কোমলহৃদয় আন্দু ছাড়া আর কাহারে কাছে সে পায় না। একে এই দুঃসময়ে তাহার মত সঙ্গতিহীন দরিদ্রকে বিশ্বাস করিয়া এত অর্থ কর্জ দেওয়া, তাহার উপর স্বদ পর্যন্ত মকুব ; কৃতজ্ঞতায় ঠাকুরজীর কণ্ঠ অবরুদ্ধ হইয়া গেল, তাহার অক্ষম রসন, উচ্চারণের উপযুক্ত ভাষা । খুজিয়া পাইল না। পর সে-সব সরঞ্জাম গুটাইয়া বটুয়ায় পুরিল, পিতলের | গতিক বুঝিয়া আন্দু তাড়াতাড়ি উঠিয়া পড়িল। "মনে রাখবেন, তিন বছরের পর এসে যদি ও টাকার তাগাদ না করি, তা হলে জানবেন ও-টাক আপনারই, আমি আপনাকে দিয়েছি, হাজার হোক ছোট ভাই তো!" হাস্তোংফুল্ল মুখে শেষের কথা কয়টি বলিয়া আন্দু চট্‌ করিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল। ঠাকুরজী কিছু ** বলিবার অবকাশ পাইল না। ( २२ ) নিজের ঘরে আসিয়া দরজায় খিল লাগাইয়া আন্দু আলো জালিল বিছানার নীচ হইতে এক টুকরা কাগজ বাহির করিয়া দেয়াত কলম লইয়া লিখিতে বসিল। বারান্দার ক্লক-ঘড়িতে টং করিয়া একটা বাজিল। আন্দু লিখিতে লাগিল, "শ্ৰীশ্ৰীহক পাক । নবিজী রসুল । শ্ৰীচরণে বহুং বহুং ভুসলীম।— কোন বিশেষ কারণ-বশত: আদ্য হঠাং আমি অন্যত্র চলিলাম, আপনাকে পূৰ্ব্বে জানাইতে পারি নাই, অপরাধ ক্ষমা করিবেন। - আমি কত দিনে আবার ফিরিয়া আসিব, এবং পুনরায় ফিরিব কি না, তাহার কিছুই স্থিরতা নাই, সে জন্য বিনীত নিবেদন এই যে, আমার স্বব্যবসায়ী বন্ধু পিয়ার সাহেবকে অতঃপর আমার স্থানে নিযুক্ত করিবেন। সে বেকার বসিয়া আছে, তাহাকে খোজ করিব মাত্র পাইবেন। আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস, তাহার দ্বারা আপনার কাজ কৰ্ম্ম স্বশস্থলে চলিবে । আমি জানি লোকটি খুব সং এবং সাহসী, সেই জন্যই ভরসা করিয় তাহার কথা জানাইতেছি । অবশ্য আপনিও পরীক্ষা করিয়া দেখিবেন। আমার দ্বিতীয় অহুরোধ—আমার পুরানো সেলাইয়ের কলটি খুকুমণি ক্রয় করিবার ইচ্ছা করিয়াছিলেন। কলটি তাহাকে দিবেন। আমার মাহিনীর দরুন মজুদ ১৬৫২ টাকা যাহা আপনার নিকট আছে, তাহ ব্রাহ্মণ ঠাকুরকে দিবেন, আমি ঐ সমস্ত টাকা তাহাকে দিলাম জানিবেন। আমি এখন কোথায় যাইব, কি করিব, তাহার কিছুই স্থিরতা নাই, সুতরাং সে সম্বন্ধে কিছুই জানাইতে