পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৩৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ჯ8ხ আন্দু বিন্দুমাত্র উৎসাহ না দেখাইয়া বলিল "আচ্ছ। विघ्नाश्निन ?" গণক ভ্ৰকুঞ্চিত করিয়া করকোষ্টি দেখিতে লাগিলেন, বলিলেন, “বিদ্যাস্থানে বুধ, কিন্তু শনির কোপ আছে, সেজন্য উপস্থিত সময় পৰ্য্যন্ত তোমার কিছু হতে দিচ্ছে না, ভবিষ্যতে তোমার মনস্কামনা পূর্ণ হবে। বুদ্ধিতে কিন্তু বাপু তুমি অদ্বিতীয় লোক হবে, তা থেকেই ধনবান হবে।” আন্দু হাসিল—“আচ্ছা ধৰ্ম্মস্থানে কি দেখুন।" গণক সে কথার উত্তর না দিয়া বলিলেন, “পরমায়ু যথেষ্ট আছে, আশী বছর পর্য্যন্ত ; ভাগ্যে দ্বি-পত্নী যোগ আছে। তোমার বয়স কত ?—” আন্দু বলিল "তেইশ বছর।" গণক গম্ভীর মুখে বলিলেন "শীঘ্রই তোমার পত্নীবিয়োগৰোগ আছে, তবে এখনি ওর একটু প্রতিকার করলে মঙ্গল হবে, খরচ করতে পারবে ?” আন্দু অষ্ট্র-হান্ত দমন করিয়া বলিল “ঠাকুর, আমি যে অবিবাহিত।—” ঠাকুর রুষ্ট হইয়া বলিলেন “তুমি কি জ্যোতিষশাস্ত্রকে ব্যঙ্গ কৰ্ত্তে চাও,—* জান্দু সবিনয়ে বলিল “আজ্ঞে না, সত্যই আমি অবিবাহিত।" দর্শকগণ চঞ্চল হইয়। উঠিল। গণক ঠাকুর আব্দুর হাতের উপর ক্রফুটবদ্ধ ললাটে অত্যন্ত ঝুকিয়া পড়িয়া নিজের অভ্রান্ত গণনা-বিদ্যার আকস্মিক ভ্রমের তদন্তে নিযুক্ত হইলেন। আন্দু তাহার বিপদ দেখয় সদয় হইয়া বলিল "আচ্ছা ঠাকুর, ধৰ্ম্মস্থানে কি রকম কি দেখছেন ?" ঠাকুর রেখা-বিজ্ঞানের দুরূহ শ্লোকরাশি আবৃত্তি করিয়া বলিলেন "জীবনে তুমি দুবার সাংঘাতিক পীড়ায় ভূগেছ।" আন্দু অস্বীকার করিয়া বলিল “আজ্ঞে না, একবার।" “অারে। একবার, তত বেশী ন হোক, তবে তেমনি—” আন্দু বলিল "একবার নয়, অল্প ভোগ তিনবার ভূগেছি। আচ্ছ। সে যাক, আপনি অতীতকে ছেড়ে দিয়ে ভবিষ্যং দেখুন। ধৰ্ম্মস্থানে আমার কি যোগ আছে ?" এমন নিতান্ত অবাধ্য, সমস্ত-অস্বীকারকারী, শাস্ত্র-জ্ঞানহীন নাস্তিককে লইয়া কি গণনা-বিদ্যা চলে ?—আন্দু ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড প্রবাসী-ভাদ্র, ১৩২২ [

  • ヘヘヘヘヘヘー、ペ ヘヘヘヘヘヘヘ.

তৃতীয় বার ধৰ্ম্মের কথা জিজ্ঞাসা করিতেই তিনি প্রবল তাচ্ছিল্যে তাহার হাত ছাড়িয়া বিজ্ঞভাবে চোখ মুখ ঘুরাইয়া বলিলেন, "ধর্ণ, ধৰ্ম্ম ! ধৰ্ম্মের কথা আমি কিছু বলব না, তোমার মুখে এখনো দুধের গন্ধ রয়েছে, ছেলেমাহুষ তুমি, ধৰ্ম্মের কি বুঝবে ?" তাহার কথা কহিবার সদস্তু-ভঙ্গীত্বে আলুর নির্বাত পরাভব স্থির করিয়া দর্শকের দল হে হো করিয়া হাসিয়া উঠিল। যেমন বাহাদুরী করিতে আসিয়াছিল লোকট। তেমনি জন্ম হইয়াছে -- আন্দু কিন্তু হটবার পাত্র নহে। দৃঢ়স্বরে বলিল “ও কি বলছেন, জ্যোতিষ-বিজ্ঞানে ধৰ্ম্মের জন্যে বয়সের মাপ জোক আছে না কি ?—সে হবে না, আপনি ঠিক করে বলুন, ধৰ্ম্মস্থানে আমার কি গ্রহ আছে।”—আন্দু হাতখান আবার বাড়াইল । তিনি পুনশ্চ হাতটা ঠেলিয়া দিয়া সগৰ্ব্বে হাসিয়া বলিলেন "ধর্শ্বের আর কি দেখব, বলেছি তো তোমার ধন হবে ।" । আন্দু বলিল "ধনের জন্তে আমি লালায়িত নই, সত্যি বলছি, আমি ধৰ্ম্মস্থানটা জানবার জন্যে ব্যস্ত।" গণক-ঠাকুর মুরুবি-আন ধরণে হাই তুলিয়া আলস্য ভাঙ্গিয়া বলিলেন “শুভ হবে, শুভ যোগ আছে, যখন হবে তখন আর ভাবনা কি ? ধনই তো ধৰ্ম্ম !" চমৎকার! ধনই ধৰ্ম্ম ! আন্দু আর বসিল না, উঠিয়া বলিল, “ঠাকুরজী, ধন তো বাহিক সম্পদ, তার সঙ্গে ধৰ্ম্মের সম্পর্ক কি ? ধৰ্ম্ম ষে আধ্যাত্মিক ব্যাপার !" - গণকঠাকুরের মাথায় সে কথার স্বন্ধ তাৎপর্ঘ্য চুকিল ন। পুনঃ পুন: হাই তুলিয়া বলিলেন, "কেন, ধনের দ্বারাই তে সব, দান ধ্যান—“ বাধা দিয়া আন্দু দলিল "ঐ একটি কাজ দান-কিন্তু ধনের দ্বারা তো ধ্যান চলবে না ঠাকুরজী-ধান যে মনের সম্পত্তি!" - গণক-ঠাকুর কাফরে পড়িলেন। আজ পর্য্যন্ত এসব জটিল তর্ক লইয়া তিনি মাথা ঘামান নাই, স্বতরাং পরা: ভবের দৈন্তে অপমানে রুষ্ট হইয়া বলিলেন "তোমাদের মেচ্ছ ৫ম সংখ্যা ] - শাস্ত্রে, ঐ রকম বলুক, আমাদের হিন্দুশাস্ত্রে ধনই ধর্শের মূল বলে।" ----- o "ভূল কথা "–ও ধারের বেঞ্চি হইতে সেই সৌম্যদর্শন বৃন্ধটি জবাব দিলেন ভূল কথা। শ্বের পথে, ধনের আহ সদিক প্রয়োজন আছে বটে, কিন্তু ধনই যে ধর্থের মূল একথা হিন্দুশাস্ত্রে নেই!" - বৃদ্ধটি এতক্ষণ দর্শকদিগের কোলাহলে আকৃষ্ট হইয়া হামি-হাসি মুখে আন্দুর সহিত গণক ঠাকুরের তর্কযুদ্ধ দেখিতেছিলেন, এইবার জবাব দিয়া প্রতিভরে হস্তের ইঙ্গিতে আন্দুকে ডাকিয় সম্বেহে বলিলেন "এস ভাই নাস্তিক সাহেব, আমি তোমাকে ধৰ্ম্মস্থানের শুভাশুভ গণন-সঙ্কেত বুঝিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু, সে গণন৷ সাধনসাপেক্ষ, চিত্তস্থিরই সে জ্যোতিষীর মূল বিজ্ঞান —ভাইসাহেব, ভবিষ্যৎকে জানবার জন্যে অন্যায় চেষ্টা ছেড়ে, বৰ্ত্তমানের কৰ্ত্তব্যগুলো ভগবানের নামে নির্ভর রেখে করে চল ভাই, চেষ্টার পরিমাণেই সফলতার ক্ষৰ্বি -আমি বলছি, তোমার "স্থানে যত বড়ই অশুভগ্রহ থাক, তুমি যদি পরিপূর্ণ চেষ্টায় ধৰ্ম্মসাধন কর, তাহলে দুষ্টগ্রহ নিশ্চয় হার মানবে – ' - সরিয়া আসিয়া আন্দু তাহাকে অভিবাদন করিয়া বেঞ্চির উপর হাত রাখিয় তাহারপায়ের কাছে বসিল । ( > t ). বৃদ্ধ সমাদরে আন্দুকে তুলিয়৷ আগ্রহে তাহার সহিত আলাপ জুড়িলেন। আন্দু শুনিল, তাহার নাম রামশঙ্কর চৌবে, তিনি বঙ্গদেশের কোন চতুষ্পাঠীতে এতদিন সংস্কৃতাধ্যাপকের কার্য্য করিয়া এখন অবসর লইয়া বাটাতে হিয়াছেন, সেকেন্দ্রাবাদে তাহার নিবাস, সম্প্রতি দোলযাত্র উপলক্ষে পুরীতে গিয়াছিলেন, এখন পুরী হইতে ফিরিতেছেন, পণ্ডিতজীর সংসারে কেহই নাই, একটিমাত্র দৌহিত্র আছে, সেও কলিকাতায় পিতৃব্যের নিকট থাকিয়া লেখাপড়া করিতেছে। পণ্ডিত নিজের কাহিনী সব কহিয়া স্মিণ্ড হাসিতে উপসংহার শেষ করিলেন, বলিলেন “সংসারের মধ্যে আমায় তিনি কেমন করে রেখেছেন l জান ?—শিকলকাট। পার্থীর মত, কিন্তু তবু আমি দাড় সেখ আন্দু কাণ্ড ჯ8პა কামড়ে বসে আছি। ત્ર জান ? মায়ায় নয় ভাই, মনস্থির করবার জন্যে ।" o ওদিকে গণক-ঠাকুর, অবিশ্বাসী অধাৰ্শ্বিকদিগের নিকট জ্যোতিষশাস্ত্রের রহস্তোদঘাটনে কিরূপ কঠিন নিষেধ আছে, তাহাই অস্পষ্ট ইঙ্গিতে তীব্রম্বরে সকলকে বুঝাইতে লাগিলেন। তাহার পূর্ণ মর্য্যাদ। কিন্তু আর ফিরিল না, ভক্তদলে আর ভক্তি-উৎসাহের সাড়া পাওয়া গেল না। তাহারা হাত দেখাইতে চায় হুজুগের খাতিরে, হুজুগ যদি ব্যর্থ হইল, তাহা হইলে তাহার কঙ্কালসার দেহটার উপর তাহাদের কিসের মমতা ! যাহাই হউক এ দুর্ভোগ তাহাদের বেণীক্ষণ সহ্য করিতে হইল না, পরবর্তী ষ্টেশনে গণক-ঠাকুর নামিলেন। তিনি অদৃশ্য হইবামাত্র যাত্রীদলে, পরম উল্লাসে র্তাহার কুংস কীৰ্ত্তন আরম্ভ করিল। আন্দুকে বিশেষভাবে শুনাইয়া শুনাইয়া তাহারা ভবিষ্যৎবক্তা গণক-ঠাকুর যে লোক-তিনটির হাত দেখিয়াছিলেন তাহদের ভবিষ্যতে সম্ভাবিত ধনদৌলত আসবাব-পত্রের ধুয়া ধরিয়া স্পষ্ট ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করিতেও ছাড়িল না। সচেত লোকের, প্রকৃতিই এই,—যতক্ষণ যেটাকে সত্য বলিয়া জানে, ততক্ষণ সেট। অন্ধভাবে অঁাকড়াই থাকে, কিন্তু যে মুহূর্তে সেটা মিথ্যা বলিয়া প্রতিপন্ন হয়, সেই মুহূৰ্ত্তে তাহার উপর নিৰ্ম্মম খড়গহস্ত হইয়া উঠিতে কিছুমাত্র দ্বিধা বোধ করে ন। তাহদের হাস্য পরিহাসের মাত্রা এত উন্ধে উঠিল, যে বিরক্ত হইয়া আৰু তাহদের ক্ষাৰ হইতে অনুরোধ করিল। এবং একটিমাত্র অনভিজের অপরাধে সমস্ত জ্যোতিষশাস্ত্র যে ভ্রান্ত, এ ধারণা তাহাদের ত্যাগ করিতে বিনীতভাবে উপদেশ দিল । - এদিকে অরক্ষণের আলাপেই পণ্ডিতজীর সহিত আঙ্গুর এমনি গাঢ় সৌহৃদ্য জমিল যে, হঠাৎ দেখিলে অনেকেই মনে করিত যে, ইহারা বুঝি বহুদিনের পরিচিত, দুই নিবিড় ঘনিষ্ঠতা-আবদ্ধ আত্মীয়। আন্দুও ভাবিয়া বিস্ময় বোধ করিল, এত সহজে এমন গভীর আলাপ তাহার আর কাহারে সহিত কখনো হয় নাই! অপরিচিত লোকের সহিত সে সহজে মিশিতে ডরাইত। এই ভক্তিভাজন বুদ্ধটি তাহার শ্রদ্ধার উপর এমনি গভীর এমনি মধুর আধিপত্য অক্লেশে বিস্তার করিয়া বসিলেন, যে, আন্দু তাহার সরল