পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৩৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রবাসী—অশ্বিন, ১৩২২ [ ১৫৭ ভাগ, ১ম খণ্ড > বশিষ্ট জল-প্রপাত । যাত্রীগণের নিকট হইতে অধিক দক্ষিণ আদায় না করিলেও বিনা খরচে থাকিতে পারে—নিকটবৰ্ত্তী মুদির দোকান তাহাদের কোনো অভাব নাই । কামাখ্যা হইতে আমরা নৌকায় উমানন্দের মন্দিরে গেলাম। মন্দিরটি ব্রহ্মপুত্রের একটি দ্বীপের উপর অবস্থিত—গৌহাটির খুব নিকটে । মন্দিরটি দেখিলে মনে হয় যেন ব্রহ্মপুত্রের স্বচ্ছ নিৰ্ম্মল জলে একখানি ছবি ভাসিতেছে। ফিরিবার পথে অশ্বাক্রোন্ত মন্দিরে গিয়াছিলাম। মন্দিরটি ব্রহ্মপুত্রের বাম তীরে একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত। মন্দিরে শ্ৰীকৃষ্ণের কৃষ্ণপাথরে খোদিত একটি সুন্দর অনন্তশয্যা-মূৰ্ত্তি আছে । নিকটেই আর-একটি দর্শনীয় স্থান—বশিষ্ট-আশ্রম । কামাখ্যা-মন্দিরের পাদদেশ হইতে প্রায় সাড়ে পাচ ক্রোশ দূরে। গৌহাটি নগর হইতে আশ্রম যাইবার একটি সুন্দর রাস্ত আছে । একটি ডাকবাংলা আছে, সেখানে লোকে হইতে আহার্য্য সংগ্ৰহ হইতে পারে । আশ্রমের পশ্চাতে একটি সুন্দর জলপ্রপাত আছে । শ্ৰীপ্ৰফুল্লচন্দ্র সেন । নাম গান ७ :भाद्र 6दश्वान-¢गोन प्रय८११ भt८१ একতার শুধু এক নিশিদিন বাজে – বন্ধু, সে তোমারি নাম কোমল মধুর, ন। জানি কি বলে মোরে, গাহে কোন স্বর ! আমি শুধু কায়ামন আরো স্তষ্ক করে স্বপ্ন-সমাহিত হই মহানন্দ-ভরে । - ঐপ্রিয়ম্বদা দেবী । o() -৬ষ্ঠ সংখ্য। ] বিদ্যাপতির শিবগীতি বিদ্যাপতিকে আমরা বৈষ্ণব কবি অথবা প্রেমিক কবি বলিয়াই জানি, অ তএব সেই ভাবেই তাহার সমালোচনা করিয়া আসিতেছি । বিদ্যাপতির যশ তাহার বৈষ্ণবপদাবলীর উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকিলেও ইদানীং অনেকে এই সন্দেহের উত্থাপন করিতেছেন যে তিনি আদৌ বৈষ্ণব ছিলেন কি না । তাহার দেশে নাকি তিনি শৈব কবি বলিয়া পরিচিত। তাহার বৈষ্ণবপদাবলীর সংখ্যার তুলনা তাহার শৈব কবিতাগুলির সংখ্য। তো নগণা, কিন্তু অবৈষ্ণব মিথিলায় তাহদেরই প্রতিষ্ঠ। বেশী, বৈষ্ণব বঙ্গে সেগুলি অনেকে জানেনই না। র্তাহার শৈবত্ব-প্রতিপাদক উপাখ্যানও মিথিলায় প্রচলিত আছে। এ গল্পটিও যেমন অবিশ্বাস্ত, বঙ্গে প্রচলিত বিদ্যাপতির লছিমা প্রসক্তি সম্বন্ধীয় গল্পটিও তেমনি অবিশ্বাশু । ইহাদের উপর নির্ভর করিয় তাহার ধৰ্ম্মমত কি ছিল তাহ নি:সংশয় ভাবে স্থাপন করিবার প্রয়াস নিষ্ফল। যদি কবির হৃদয় তাহার ধৰ্ম্মমতের প্রমাণ বলিয়। ধরা যায় তাহ হইলে তাহাকে বৈষ্ণব না বলিয়া উপায় নাই। প্রাচীন বয়সে যে-কবির হৃদয়ে সমগ্র শ্ৰীমদ্ভাগবত স্বহস্তে লিখিবার প্রবৃত্তি ও উৎসাহ আসিয়াছিল তাহাকে বৈষ্ণবন। বলি কেমন করিয়া ? ৭ে-কবির হৃদয় প্রশ্রবণ হইতে অজস্র ধারায় রাধাকৃষ্ণের প্রেমরস নি:স্থত হইয়। ভক্তহৃদয়ে আনন্দ ও উৎসাহের এবং প্রেমিকের হৃদয়ে অপূর্ণ স্ফক্টির স্বাক্ট করিয়াছে, তিনি শৈবকুলজাত বা কোনও সময়ে শৈবমতাবলম্বী হইলেও যে বৈষ্ণবধৰ্ম্মের পক্ষপাতী ছিলেন না, এ কথার সারবত্তা কোথায় ? ফলকথা এই যে বিদ্যাপতির দেশে ধৰ্ম্মমতের জন্য দ্বন্দ্ব কখনই এত প্রখরতা লাভ করে নাই যে বৈষ্ণব হইলেই শৈবের নিন্দ করিবে, অথবা শৈব হইলেই বৈষ্ণব-বিদ্বেষী হইবে। প্রায় সকল প্রাচীন কবিই বিভিন্ন ধৰ্ম্মমতগুলির মধ্যে সমন্বয়-স্থাপনের পক্ষপাতী ; বিদ্যপতিও সেই ভাবেই বৈষ্ণব হইয়াও শিবের গীত, শক্তির গীত, রামবন্দন, গঙ্গা, বন্দন। প্রভৃতি গান করিয়াছেন, এই মতই বোধহয় সমীচীন। বিদ্যাপতির শিবগীতির চর্চা করিলে তাহাকে যে বিদ্যাপতির শিবগীতি १>>* -- .... একজন বিশিষ্ট শৈব বলিয় মনে হয় তাহ নহে । বরঞ্চ বেশ বুঝা যায় যে ঐ শিবগীতির উপলক্ষে বিদ্যাপতি একটি গৃহচিত্র অঙ্কিত করিয়াছেন। সেই গৃহচিত্রে আমরা অনেকগুলি সজীব মূৰ্ত্তি দেখিতে পাই ; অনেক গুলি সামাজিক রহস্য ও জানিতে পারি। প্রাচীন কাব্যগুলির মধ্যে যে একট। প্রাণময়ত্ব দেখা যায় বিদ্যাপতির শিবগীতির মধ্যে তাহা বেশ অনুভব করিতে পারা যায়। বিদ্যাপতির দেশে সে সময়ে মুসলমান প্রভাব খুব বিস্তৃত হয় নাই সত্য, কিন্তু চতুৰ্দ্দিকের প্রভাব মিথিলাতেও অল্পবিস্তর প্রবেশ করিতেছিল তাহাতে সন্দেহ নাই। ফলে ধনী ও নিধনের ভেদ তখনই বেশ স্বচিত হইয়াছিল। বিদ্যাপতি দুঃখ করিয়া বার বার সে কথার উল্লেখ করিয়াছেন। সমাজে গুণের পরিবৰ্ত্তে ধনের আদর হইতে আরম্ভ হইয়াছিল। বিদেশী রাজ হওয়ার ফলে কাচ ও কাঞ্চন সমান দরে বিকাইতেছিল। রাজার কাছে প্রতিপত্তি লাভ করিত সংসারে প্রতিষ্ঠাশীল আড়ম্বরপূর্ণ লোকে , নিস্পৃহ নিধন গুণবান ব্যক্তিও তাহাদের সমক্ষে হীন বলিয়া গণ্য হইত। বিদ্যাপতির শিবগীতিতে এই ভাবটি বেশ ফুটিয়াছে। অমন যে সদগুণসম্পন্ন শিব, ধনী হিমালয়ের গৃহে তাহারও আদর নাই। জামাই আসিয়াছেন, ধনী শ্বশুর মুখ ফিরাইয়াও দেখেন না, তাহার অনুচরবর্গ শিবকে উপহাস করে । ঐশ্বৰ্য্যমদমত্ত বিদেশীয়ের করকবলিত হওয়ায় ভারতের আভ্যন্তরিক পরিবর্তনের ইহাই প্রথম নিদর্শন । বিদ্যাপতির শিব-পাৰ্ব্বতী-সম্বন্ধীয় পদাবলী শিবভক্তের হৃদয়োচ্ছাস নয়, এ কথার প্রমাণ সেই গীতগুলিই, অন্ত প্রমাণের আবশ্যক করে না। এখানে মহাদেবের মহাদেবত্ব একেবারে বিলুপ্ত, গৌরীরও জগংমাতৃত্ব নিঃশেষরূপে লুক্কায়িত। কুমারসম্ভবের মহান স্বাদশ খৰ্ব্ব হইয়া গিয়াছে; এখানে হিমালয় ও মেনকা সম্পন্ন দম্পতীমাত্র, হরপাৰ্ব্বতী নিধন গৃহস্থ দম্পতী ভিন্ন আর কিছুই নয়। হিমালয় সদ্বংশজাত বৃদ্ধ ও নিধন বরে কন্যাসম্প্রদানে কৃতসংকল্প হইয়াছেন ; মেনকা কাদিয়া কাদিয়া আকুল হইয়াছেন এবং যে পঞ্জী-কার শিবের সহিত গৌরীর বিবাহসম্বন্ধ করিয়াছেন তাহাকে গালি পাড়িতেছেন। বঙ্গে যেমন কুলজী গ্রন্থ থাকিত, মিথিলাতেও তেমনি পঞ্জী গ্রন্থ থাকিত যাহাতে