পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

న8 গুজররাজ সন্ন্যাসীকে বৌদ্ধ মনে করিয়া সমস্ত বৌদ্ধবিগের উপর অত্যাচার আরম্ভ করিবার উপক্ৰম করিলেন । এদিকে সন্ন্যাসী বিশ্বনন্দের কৌশলে ধৰ্ম্মপাল সমস্ত বৌদ্ধকে প্রাণপাত করিয়া রক্ষা করিবেন প্রতিজ্ঞ করিলেন। সম্রাট ধৰ্ম্মপাল সামগুরাজাদিগকে সঙ্গে লইয়া কান্তকুক্ত রাজ্য জয় করিতে যাত্রা করিলেন । ] তৃতীয় পরিচ্ছেদ । চক্রের পরিবর্তন । রজনীর দ্বিতীয় প্রহর অতীত হইয়াছে, বারাণসী নগরীর পথগুলি অন্ধকার, বিপণিসমূহের আলোকমালা নিভিয়া গিয়াছে। এই সময়ে একটি বৃহৎ অট্টালিকার সম্মুখে একজন মুণ্ডিতশীৰ্ষ সন্ন্যাসী অন্ধকারে আত্মগোপন করিয়া দাড়াইয়া ছিল। সন্ন্যাসী বোধ হয় কাহারও আগমনের প্রতীক্ষা করিতেছিল, কারণ সে দণ্ডে দণ্ডে অগ্রসর হইয়া জনশূন্ত পথ পরীক্ষা করিতেছিল। দ্বিতীয় প্রহর অতীত হইলে তোরণে তোরণে মঙ্গলবাদ্য বাজিয়া উঠিল, বারাণসীর অসংখ্য দেবালয়ে নৈশপূজার শঙ্খ ঘণ্টা ধ্বনিত হইল, ক্রমে সমস্ত শব্দ থামিয়া গেল, অন্ধকারাচ্ছন্ন নগর পুনরায় নিঃশব্দ হইল। এই সময়ে পাষাণাচ্ছাদিত পথে মতুয্যপদশব্দ শ্রত হইল, সন্ন্যাসী তাহ শুনিয়া দ্বারের পার্থে লুকাইল। কিয়ংক্ষণ পরে জনৈক অস্ত্রধারী পুরুষ অট্টালিকার সম্মুখে আসিয়া দাড়াইল। তখন সন্ন্যাসী অট্টালিকার অভ্যন্তর হইতে জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি কে?" উত্তর হইল, “আমি ভিল্লমালের অতিথি ।" "প্রমাণ কি ?” “আৰ্য্যসজেঘর আদেশে আমার নিকট ধৰ্ম্মচক্র প্রেরিত হইয়াছিল।” “সঙ্গে আনিয়াছ ?” “ķi i" “দেখি ?” সৈনিক বস্ত্রাভ্যন্তর হইতে গোলাকার ধাতুর্থও বাহির করিয়া সন্ন্যাসীর হস্তে প্রদান করিল, সন্ন্যাসী তাহ পরীক্ষা করিয়া কহিল, "ভিতরে আইস ।" দৈনিক "অট্টালিকার ভিতরে প্রবেশ করিয়া দেখিল, চারিদিকে ঘোর অন্ধকার। সে পথ দেখিতে ন পাইয়৷ জিজ্ঞাসা করিল, “কোন পথে যাইব ?” সন্ন্যাসী উত্তর না দিয়া তাহার হস্তধারণ করিয়া তাহাকে লইয়া চলিল। প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩২২ ് ഹുSumitaBot (আলাপ) ০৭:৫৬, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)സ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড অন্ধকারাচ্ছন্ন কয়েকটি কক্ষ পার হইয়া উভয়ে অট্টালিকার প্রাঙ্গণে উপস্থিত হইল। সৈনিক লক্ষ্য করিয়া দেখিল যে, বৃহৎ অট্টালিক ধ্বংসোন্মুখ, উপরের তলের কিয়দংশ পড়িয়া গিয়াছে, প্রাঙ্গণে বহু লতা গুল্ম জন্মিয়াছে এবং অট্টালিকার অবশিষ্টাংশ জনশূন্ত। তাহার প্রাঙ্গণ পার হইয়া আর-একটি অন্ধকারময় গৃহে প্রবেশ করিল এবং সোপানশ্রেণী অবলম্বন করিয়া ভূগর্ভে প্রবেশ করিল। সন্ন্যাসী অভ্যাসবশতঃ অনায়াসে সোপান বাহিয়া নামিয়৷ গেল। স্বরঙ্গ পথে অৰ্দ্ধদও চলিয়া উভয়ে পুনরায় সোপানশ্রেণী অবলম্বন করিয়া উপরে উঠিল, সন্ন্যাসী উপরের সোপানে দাড়াইয়া সম্মুখের রুদ্ধদ্বারে করাঘাত করিল। তৎক্ষণাং দ্বারের অপর পাশ্ব হইতে জিজ্ঞাসা হইল, "কে " "বুদ্ধমিত্র।” "এক আসিয়াছ ?” “সঙ্গে ভিল্লমালের অতিথি আছেন।” | "প্রমাণ পাইয়াছ ?” f o “ई। ।” রুদ্ধদ্বার মুক্ত হইল, উভয়ে আর-একটি অন্ধকার কক্ষমধ্যে প্রবেশ করিল, দ্বার পুনরায় রুদ্ধ হইল। সৈনিক ভীত হইয়। অসিতে হস্ত স্থাপন করিল। তখন দ্বাররক্ষক জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি কে " “আমি ভিল্লমালের অতিথি ।” "কাহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিয়াছ ?” "উত্তরাপথের আর্য্যসজেঘর চরণ দর্শনের মানসে আসিয়াছি।” “তুমি কি জাতি ?” "গুর্জর প্রতীহার ।” "তুমি কোন ধৰ্ম্মাবলম্বী ?” “আমি সদ্ধৰ্ম্মী, পুরুষানুক্রমে ত্রিরত্বের করিয়াছি।” “কি উদ্দেশ্বে আৰ্য্যসঙ্ঘের দর্শন কামনা কর ?” “পরমেশ্বর পরম ভট্টারক মহারাজাধিরাজ গুর্জরেশ্বর নাগভটদেবের আদেশে দূতস্বরূপ আৰ্য্যসঙ্ঘের সমীপে আসিয়াছি।” | “নিদর্শন আনিয়াছ ?” o অৰ্চনা ১ম সংখ্যা ] ধৰ্ম্মপাল సె(t Tisip, উত্তরস্বরূপ রুদ্রেণ রত্নত্রয়কে তিনবার প্রণাম “কি ?” করিলেন। তখন ভিক্ষু পুনরায় কহিলেন, “ত্রিরত্ন স্পর্শ “পরমেশ্বর পরমসৌগত মহামণ্ডলেশ্বর বাহুকধবলের করিয়া শপথ করুন।” - মুদ্রাঙ্কিত পত্র।” “কি শপথ করিব ?” “দেখি ” “শপথ করুন যে, আপনি অদ্য রাত্রিতে যাহা দর্শন সহসা আলোক জলিয়া উঠিল, সৈনিক - চক্ষুমার্জন করিতে করিতে প্রশ্নকৰ্ত্তার হস্তে একখানি পত্র প্রদান করিল। সে ব্যক্তিও একজন মুণ্ডিতশীর্ষ সন্ন্যাসী, তাহার পরিধানে গৈরিকরঞ্জিত বস্ত্র । গুম্ফ, শ্মশ্র ও মস্তক মুণ্ডিত ও দক্ষিণ হস্তে জপমালা। দ্বিতীয় সন্ন্যাসী পত্র পাঠ করিয়া কহিল, “উত্তম। তুমি আমার সঙ্গে আইস।” তিনজনে কক্ষ পার হইয়া একটি দ্বারের সমীপবৰ্ত্তী হইলেন। দ্বার রুদ্ধ, দ্বিতীয় সন্ন্যাসী তাহাতে করাঘাত করিলে কক্ষাভ্যন্তর হইতে প্রশ্ন হইল, “কে ?” দ্বিতীয় সন্ন্যাসী উত্তর দিলেন, “ভিক্ষু জিনদাস, ভিক্ষু বুদ্ধমিত্র ও গুর্জরেশ্বরের প্রতিনিধি নায়ক রুদ্রেণ " "গুর্জররাজের প্রতিনিধি কি অভিপ্রায়ে নিশীথ রাত্রিতে এখানে আসিয়াছেন ?” "উত্তরাপথের আর্য্যসঙ্ঘের দর্শনের মানসে।” "উপযুক্ত প্রমাণ ও নিদর্শন পাইয়াছ কি ?” “ई। ।” দ্বার মুক্ত হইল, রুদ্রেণ কক্ষে প্রবেশ করিলেন,তৎক্ষণাৎ দ্বার পুনরায় রুদ্ধ হইল। দ্বারের পাশ্বে আর-একজন মুণ্ডিতশীর্ষ ভিক্ষু দাড়াইয়৷ ছিলেন, তিনি রুত্রেণকে লইয়া কক্ষের মধ্যস্থলে অগ্রসর হইলেন। এই সময়ে কক্ষের চারিদিকে চারিটি উল্কা জলিয়া উঠিল। রুদ্রেণ দেখিতে পাইলেন যে, তিনি পাষাণনিৰ্ম্মিত বেদীর সম্মুখে দাড়াইয়৷ আছেন, বেদীর উপরে ত্রিরত্বের মূৰ্ত্তি স্থাপিত আছে ও তাহার পশ্চাতে তিনজন অতি বৃদ্ধ ভিক্ষু কুশাসনে উপবিষ্ট আছেন। তাহাদিগের পশ্চাতে কিঞ্চিদূরে কুশাসনে আরও দ্বাদশ জন ভিক্ষু বসিয়া আছেন। বেদীর সম্মুখে উপস্থিত হইয়া দ্বাররক্ষক রুদ্রেণকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “নায়ক রূদ্রেণ, আপনি কি সদ্ধম্মী ?” "श ।” “ত্রিরতুে আপনার বিশ্বাস আছে কি ?” করিবেন বা শ্রবণ করিবেন তাহা অন্যের নিকটে প্রকাশ করিবেন না ?” "শপথ করিলে মহারাজাধিরাজকে দৌত্যের ফলাফল জানাইব কেমন করিয়া ?” বৃদ্ধ ভিক্ষুত্রয়ের মধ্যে একজন কহিলেন, “গুর্জরেশ্বর ও মহামণ্ডলেশ্বর বাহুকধবল ব্যতীত তৃতীয় ব্যক্তির নিকটে কোন কথা প্রকাশ করিবেন না ।" রুদ্রেণ তখন ত্রিরত্ব স্পর্শ করিয়া তিনবার শপথ করিলেন। পূৰ্ব্বোক্ত বৃদ্ধভিক্ষু তখন জিজ্ঞাসা করিলেন, “গুর্জরেশ্বর আপনাকে কি অভিপ্রায়ে আৰ্য্যসঙ্ঘের সমীপে প্রেরণ করিয়াছেন ? আমরা আর্য্যসঙ্ঘের প্রতিনিধি।” তাহার কথা শুনিয়া রুদ্রেণ র্তাহাদিগকে প্রণাম করিয়৷ কহিলেন, "পরমেশ্বর পরমভট্টারক পরমবৈষ্ণব মহারাজাধিরাজ নাগভটদেব আৰ্য্যসজেঘর সহিত সন্ধিস্থাপনে প্রয়াসী। পরম সৌগত মহামণ্ডলেশ্বর বাহুকধবলদেবের পরামর্শানুসারে মহারাজাধিরাজ বৌদ্ধসঙ্ঘের প্রতি বিদ্বেষ পরিত্যাগ করিয়াছেন। তাহার বিশ্বাস এই যে, আর্য্যসঙ্ঘের সহিত সন্ধি স্থাপিত হইলে অচিরে গৌড়যুদ্ধের অবসান হইবে এবং মহারাজাধিরাজের মিত্র কান্তকুঞ্জেশ্বর পুনরায় অপহৃত অধিকার প্রাপ্ত হইবেন ।” “আৰ্য্যসঙ্ঘের সহিত গৌড়যুদ্ধের সম্পর্ক কি ?” "পরম সৌগত সজঘনায়কগণ দাসের অপরাধ মার্জন৷ করিবেন ; আমি দূত মাত্র। মহারাজাধিরাজের বিশ্বাস যে, আর্য্যসঙ্ঘের আহুকুল্য ব্যতীত ক্ষুদ্র গৌড়েশ্বর কখনই মধ্যদেশ অধিকার করিতে পারিত না।" “গুর্জরেশ্বর আর্য্যসঙ্ঘের সহিত কি ভাবে সন্ধি স্থাপনে প্রয়াসী ?” "মহারাজাধিরাজ আপনাদিগকে জানাইতে আদেশ করিয়াছেন যে, সন্ধি স্থাপিত হইলে, গুর্জররাষ্ট্রে সঙ্ঘের অপহৃত সম্পত্তি পুনঃপ্রদত্ত হইবে এবং গুর্জররাজ আধ্য