পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

T o ১ম সংখ্যা ] বাঙ্গলার প্রাচীন গৌরব প্রথম গৌরব—হস্তি-চিকিৎসা বেদের আর্য্যগণ যখন ভারতবর্ষে আসিয়াছিলেন, তখন প্তাহার হাতী চিনিতেন না। কারণ, ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে হাতী পাওয়া যায় না । বেদের আর্য্য জাতির প্রধান কীৰ্ত্তি ঋগ্বেদে “হস্তী” শব্দটি পাচ বার মাত্র পাওয়া যায়। তাহার মধ্যে তিন জায়গায় সায়ণাচাৰ্য্য অর্থ করিয়াছেন, হস্তযুক্ত ঋত্বিক বা পদযুক্ত ঋত্বিক। দুই জায়গায় তিনি অর্থ করিয়াছেন, হাতী। এ দুই জায়গায়ই, হস্তী মৃগের স্থায়, “মূগা ইব হস্তিন", “মূগো ন হস্তী” এইরূপ প্রয়োগ আছে। ভারতবর্ষে আসিয়া যখন র্তাহার হাতী দেখিলেন, তখন তাহারা তাহাকে হাতওয়ালা মৃগ বলিলেন । ঋগ্বেদে হাতীর নাম ত ঐ দুই বার আছে। ও যে ঠিক হাতীরই নাম, সে বিষয়েও একটু সন্দেহ। কারণ, "হাতওয়ালা" মৃগ বলিতেছে, যদি স্পষ্ট করিয়া “শুড়ওয়ালা" বলিত, তবে কোন সন্দেহই থাকিত না। আরও সন্দেহের কারণ এই যে, সংস্কৃতে হাতীর অনেক নাম আছে—করী, গজ, দ্বিপ, মাতঙ্গ—ইহার একটি শব্দ ও ঋগ্বেদে নাই, এমন কি ঐরাবতের নাম পৰ্য্যন্তও নাই । যাহার কাল হাতীই চিনিত না, তাহার। সাদা হাতী কেমন করিয়, জানিবে ? ঋগ্বেদে হাতীর নাম থাকুক বা না থাকুক, তৈত্তিরীয় সংহিতায় উহার নাম আছে। খৃঃ পূৰ্ব্ব ষষ্ঠ শতকে হাতী পোষা চলিত হইয়াছিল। বুদ্ধদেবের এক হাতী ছিল। র্তাহার ভাই দেবদত্তেরও হাতী ছিল। বুদ্ধদেব কুস্তী করিতে করিতে একটা হাতী শুড় ধরিয়৷ ছুড়িয়া ফেলিয়া দেন, তাহাতে হাতী যেখানে পড়ে সেখানে একটি ফোয়ার হইয়া গিয়াছিল। উদয়ন রাজার "নলাগিরি” নামে একটি প্রকাও হাতী ছিল। তাহার নিজের ও চওপ্রদোতের বড় বড় হাতীশাল ছিল, হাতী ধরারও খুব ব্যবস্থা ছিল। এই যে হাতী ধরা ও পোষমানান, তাহার চিকিৎসা, তাহার সেবা, যুদ্ধের জন্য তাহাকে তৈয়ার করা–এসব কোথায় হইয়াছিল? আমরা এখন ষে দেশে বাস করি, যাহা আমাদের মাতৃভূমি, সেই বঙ্গদেশই এই প্রকাও জন্তুকে বশ করিতে প্রথম শিক্ষা বাঙ্গলার প্রাচীন গৌরব 〉を始。 দেয় । যে দেশের এক দিকে হিমালয়, এক দিকে লৌহিত্য ও এক দিকে সাগর—সেই দেশেই হস্তিবিদ্যার প্রথম উৎপত্তি। সেই দেশেই এমন এক মহাপুরুষের আবির্ভাব হয়, যিনি বাল্যকাল হইতেই হাতীর সঙ্গে বেড়াইতেন, হাতীর সঙ্গে ধাইতেন, হাতীর সঙ্গে থাকিতেন, হাতীর সেবা করিতেন, হাতীর পীড়া হইলে চিকিৎসা করিতেন, এমন কি এক রকম হাতীই হইয়া গিয়াছিলেন। হাতীরাও তাহাকে যথেষ্ট ভাল বাসিত, তাহার সেব। করিত, তাহার মনের মত খাবার যোগাইয় দিত, ব্যারাম হইলে তাহার শুশ্ৰুষা করিত । অঙ্গদেশের রাজা লোমপাদ বঙ্গবাসীর স্বপরিচিত । তিনি রাজা দশরথের জামাই ছিলেন। তাহার একবার সখ হইল, হাতী আমার বাহন হইবে। ইন্দ্র স্বর্গে যেমন হাতী চড়িয়৷ বেড়ান, আমিও তেমনি করিয়া হাতীর উপরে চড়িয় বেড়াইব । কিন্তু হাতী কেমন করিয়া বশ করিতে হয়, তাহা তিনি জানিতেন ন। তিনি সমস্ত ঋষিদের নিমন্ত্ৰণ করিলেন। ঋষির পরামর্শ করিয়া কোথায় হাতীর দল আছে, খোজ করিবার জন্য অনেক লোক পাঠাইয়া দিলেন। তাহার এক প্রকাও আশ্রমে উপস্থিত হইল। সে Aাশ্রম “শৈলরাজাশ্রিত", "পুণ্য" এবং সেখানে “লৌহিত্য সাগরাভিমুখে বহিয়৷ যাইতেছে।" সেখানে তাহারা অনেক হাতী দেখিতে পাইল এবং তাহদের সঙ্গে একজন মুনিকেও দেখিতে পাইল। দেখিয়াই তাহারা বুঝিল যে, এই মুনিহ হাতীর দল রক্ষা করেন। তাহারা ফিরিয়া আসিয়া রাজা ও ঋষিদিগকে খবর দিল । রাজা সসৈন্য সেই আশ্রমে উপস্থিত হইয়৷ দেখিলেন, ঋষি আশ্রমে নাই; তিনি হস্তিসেবার জন্য দূরে গমন করিয়াছেন। রাজা হাতীর দলটি তাড়াইয়া লইয়৷ চম্পানগরে উপস্থিত হইলেন ও ঋষিদের . পরামর্শ-মত হাতীশালা তৈয়ার করিয়া সেখানে হাতীদের বাধিয়া রাখিয়া ও খাবার দিয়া নগরে প্রবেশ করিলেন। ঋষি আসিয়া দেখিলেন, তাহার হাতীগুলি নাই। অনেক দিন খুজিয়৷ খুজিয়া শেষে চম্পানগরে আসিয়া তিনি দেখিলেন যে, তাহার হাতীগুলি সব চম্পানগরে বাধা আছে, তাহারা রোগ। হইয়া গিয়াছে, তাহাদের গায়ে ঘা হইয়াছে, নানা রূপ রোগের উৎপত্ত্বি হইয়াছে। তিনি তৎক্ষণাং লতা, পাত, শিকড়,