পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নষ্টচন্দ্র 懿 r চারু বন্দ্যোপাধ্যায় অনিল মেসোপোটেমিয়ায় গিয়ে অনলকে খবর দিয়েছে, সে কোনো স্বযোগে ফ্রান্সে যাচ্ছে এবং সেখান থেকে শীঘ্রই ইংলণ্ডে যাবে ; সে যদি ইংলণ্ডে যেতে পারে তা হ’লে সেখানে সে লেখা-পড়া করবে ; তখন তার হয়ত মাসে মাসে কিছু টাকার দরকার হতে পারে ; আবশ্বক হ’লে তাদের সমস্ত সম্পত্তি বিক্রয় করে’ বা বন্ধক রেখে টাকা পাঠাতে হবে, একথাও সে অনলকে আগে থাকৃতে জানিয়ে রেখেছে । অনিল যে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে চলে যেতে পেরেছে, এই ংবাদে অনল যেমন আনন্দিত হয়েছিল, অনিলকে মাসেমাসে দু-তিন শত টাকা পাঠাতে হবে ভেবে তেমনি উদ্বিগ্ন হ’য়ে উঠেছিল। অনিলকে কলকাতায় পড়তে পাঠিয়ে অবধি সে ত এক-রকম বৈরাগ্য অবলম্বন করেছিল; এখন একেবারে কৃচ্ছসাধন আরম্ভ করলে ; প্রত্যেকটি পয়সা সে সস্তপণে জমিয়ে রাখছিল, কি-জানি কখন অনিলের তলব আসে । অনলের পরামর্শে ও চেষ্টায় বাস্থন্দিয়া এষ্টেট থেকে ম্যাজিষ্ট্রেটের ওয়ার-ফাণ্ডে ও অন্যান্য দুই-একটা অম্লষ্টানে বিশেষ মোট-মোটা দান করাতে এবং নিজের জমিদারীর ভিতর স্থানে-স্থানে স্কুল হাস্পাতাল পথ ও জলাশয় প্রতিষ্ঠা করে দেওয়াতে ষ্টেটু কোর্ট-অব-ওয়ার্ড সে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ম্যাজিষ্ট্রেট ত্যাগ করেছেন ; জমিদারীর কত্রী শ্ৰীমতী ধনিষ্ঠ দাসী যে নিজের জমিদারী পরিচালনায় ষথেষ্ট নিপুণ ও মনোযোগিনী এ-সম্বন্ধে ম্যাজিষ্ট্রেট র্তার মন্তব্য রেভেনিউ বোর্ডে জানিয়েছেন। ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছ থেকে এই খবর শ্রীমতী ধনিষ্ঠা দাসীর নামে এসে পৌছল এবং জমিদার প্রফুল্ল মুস্তফীর বাপের আমলের দেওয়ান রাজকুমার-বাবু যখন এই শুভ সংবাদ কত্রী বউরাণীকে গিয়ে শোনালেন, তখন বিকাল বেলা । ধনিষ্ঠ হাসিভর মুখে দেওয়ানকে বললে—আপনি এখনি বাজার থেকে যত টাকার সন্দেশ আর বাতাস পাওয়া যায় আনিয়ে গোবিন্দদেবের ভোগ দিইয়ে হরির লুট দেবার ব্যবস্থা করে দিন গে। আর কাল ঠাকুরের পূজা আর ভোগের বিশেষ আয়োজন করে দেবেন। আর দুধ দই ক্ষীর সন্দেশের বায়ুন আজকেই দিয়ে দিন, যত শিগগীর হয়, ব্রাহ্মণ-ভোজন, কাঙালী-ভোজন করাতে হবে । বাস্বন্দিয়াতে রীতিমত উৎসব লেগে গেল। জমিদারের অকস্মাৎ মৃত্যুর শোক ভূলে’ সমস্ত জমিদারী স্বাধীনতা লাভের আনন্মে উৎসবময় হ’য়ে উঠল । দেউড়িতে নহবৎ বাজ তে লাগল ; প্রতি তোরণে-তোরণে দেবদারু-পাতার তোরণ, আম্র-পল্লবের মালা, কদলী-বৃক্ষও পূর্ণ ঘট স্থাপিত হ’ল ; ক্রমাগত বোমের আওয়াজে লোকের কান ঝালাপালা হয়ে উঠল ; সন্ধ্যার পর কাছারী-বাড়ীর সাম্নের মাঠে অনেক টাকার আতস বাজি পুড় ল । গয়লা ময়র। জেলে প্রভৃতির আনা-গোনায় কাছারী-বাড়ী সরগরম ; অনেক রাত্রি পর্য্যস্ত কাছারীতে কাজের বিরাম নেই । অনেক চেষ্টা করেও ঠিক তার পরদিনই ব্রাহ্মণভোজন করাবার মতন উপকরণ-সামগ্রী সংগ্ৰহ হ’য়ে উঠল না ; ব্রাহ্মণ ভোজন ও কাঙালী-ভোজন হবে একদিন পরে। ইতিমধ্যে উৎসবট জুড়িয়ে না যায় বলে’ও বটে এবং বৃহৎ ভোজের দিন কাছারীর ও বাড়ীর সমস্ত আমূল কৰ্ম্মচারী পেয়াদা পাইক ও চাকর-দাসীরা কৰ্ম্মেই ব্যস্ত থাকবে, তারা নিজের আনন্দ করবার অবসর পাবে না বলে’ও বটে, মাঝের ফঁাকের দিনে তাদের সকলকে মধ্যাহ্ন-ভোজনের নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। মধ্যাহ্ন অনেকক্ষণ উত্তীর্ণ হ’য়ে গেছে। বেলা প্রায় ছুটি। সবে ব্রাহ্মণের বৈঠকখান-বাড়ীর দরদালানে খেতে বসেছে ; সেই দালানের সাম্নের রকে অন্যান্স জাতির ভদ্রলোকদের পাতা পাড়া হয়েছে, ব্রাহ্মণের