পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سtt) হিন্দুসমাজে অবস্থায়যায়ী নবনব ব্যবস্থা অল্পপ্রবিষ্ট করিয়া দিছে। প্রাচীন গৃহস্থত্র ও ধর্শ্বস্বত্র প্রণেতাগণের গ্রন্থপাঠে জানা যায়, পুরাকালে অম্বুলোম ও প্রতিলোম উভয়বিধ বিবাহ প্রচলিত ছিল, অপেক্ষাকৃত আধুনিক কালেও অন্তলোম বিবাহ বিধিসিদ্ধ ছিল, এবং মেধাতিথি, মিতাক্ষর, স্মৃতিচন্দ্রিক, বিবাদরত্নাকর, মাধবীয়, সরস্বতীবিলাস, মদনপারিজাত, কুল্লুকভট্ট, এমন-কি দায়ভাগ পৰ্য্যস্ত কোন ভাষ্য বা ভাষ্যকারই ঐক্লপ বিবাহকে অসিদ্ধ বলেন নাই। বিজ্ঞানেশ্বরের কালেও মধ্যে-মধ্যে ঐরপ বিবাহ হইত বলিয়া তিনি লিখিয়া গিয়াছেন । কিন্তু ক্রমে দেশাচারই প্রবল হইয়া উঠিল, হিন্দুরাজশক্তির অভাবে হিন্দুর ব্যবহারশাস্ত্রের ক্রমবিকাশ রুদ্ধ হইয়া গেল, বচন শতেনাপি বস্তুনোহন্তথাকরণশিক্তে জীমূতবাহন এই Factum Waletএর নীতিদ্বারা ধৌথ পরিবারে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ঘোষণা করিলেও ঐ নীতির অপপ্রয়োগদ্বারাই প্রাচীনযুগের উদার ব্যবস্থাগুলির থৰ্ব্বতীসাধন করা হইল, এবং ক্রমে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আক্ষেপ সত্য হুইয়। উঠিল যে, হিন্দু শাস্ত্রান্থশাসন মানে না, দেশাচারের নিকট সে ধৰ্ম্মাধৰ্ম্ম বিসর্জন দিয়াছে। সুতরাং আমরা চাই নবযুগে নূতনসংহিত । রঘুনন্দনের সঙ্গে-সঙ্গে আমাদের স্বতিকারগণের বংশ লোপ হয় নাই, প্রিভি কৌন্সিল ও হাইকোর্টের বিচারপতিগণ সেই স্থানু অধিকার করিয়াছেন, কিন্তু র্তাহারা গৌণভাবে নিতান্ত অসম্পূর্ণরূপে ভয়ে-ভয়ে যেপরিবর্তন সাধন করিবেন, আমরা তাহ নির্দোষ ও সৰ্ব্বাঙ্গসুন্দরব্রুপে ব্যবস্থাপক সভায় বিধিবদ্ধ করিয়া লইয়। সমাজে প্রচলিত করিব। হিন্দুজাতির আত্মরক্ষার নিমিত্ত ইহা একান্ত আবশ্ব্যক হইয়া পড়িয়াছে। বড়োদারাজ্যে এরূপ আইন-সঙ্কলনকাৰ্য্য বহুকাল আবদ্ধ হইয়াছে, ভারতীয় ব্যবস্থাপক সভায় ডাক্তার গৌড়ও এই কার্ধ্যে কিয়ৎপরিমাণে ব্ৰতী হইয়াছেন। আক্ষেপের বিষয়, আইনব্যবসায়ী শিক্ষিত হিন্দুগণের নিকট তিনি আশাগুরূপ সাহায্য পাইতেছেন না। বঙ্গের ভূতপূৰ্ব্ব শাসনকৰ্ত্ত লর্ড রনাল্ড শে তাহার নবরচিত গ্রন্থে লিখিয়াছেন, ভারতবর্ষে যে-দুটি বিশাল জাতি পাশাপাশি বাস করে, তাহাদের লইয়া নেশন’ গড়িয়া উঠি প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩২ [ ২৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড বার প্রধান অন্তরায় এই যে,তাহাজের একটিরসহিত আরএকটির কোন আত্মীয়তার বন্ধন নাই, যেহেতু বৈবাহিক আদানপ্রদান-সম্বন্ধে হিন্দুধৰ্ম্ম একান্ত বিমুখ। যদিও কাফেরের নিকট কস্তাদানে মুসলমান-সমাজও কম বিমুখ নহে, তথাপি ভারতে এই দুই প্রধান ধৰ্ম্মাবলম্বীদের মধ্যে যে কোন বৈধশোণিতসম্পর্ক স্থাপিত হইতে পারে না, ইহা ভিন্ন দেশীয় পৰ্য্যটক মাত্রেরই নিতান্ত অদ্ভুত বলিয়া মনে হইবে, এবং ইহা যে ভারতে একজাতিগঠনের প্রধান বিয়, তাহ বিচক্ষণ রাজপুরুষের দৃষ্টি এড়াইতে পরিবে না। অসবর্ণ বিবাহের প্রচলন দ্বারা হিন্দুঞ্জাতির মধ্যে যথেষ্ট রক্তসংমিশ্রণ ঘটিয়াছে বলিয়াই বর্ণ-সাস্কৰ্য্য সম্বন্ধে হিন্দুশাস্ত্রে অনেক নিন্দাবাদ দেখিতে পাওয়া যায়। বস্তুতঃ ‘অমিশ্রজাতি আকাশকুস্বমেরই ন্যায় অলীক কল্পনামাত্র। এখনও কোন-কোন হিন্দুরাজার অন্তঃপুরিকাগণের মধ্যে মুসলমান মহিলা দেখিতে পাওয়া যায় । তাহদের সন্তান রাজান্তঃপুরে জন্মগ্রহণ করিলে হিন্দু বলিয়ু পরিগণিত হয়। কোন-কোন জীবিত হিন্দু নরপভির মাভার পরিচয় লইলে নাকি মুসলমান নামের সাক্ষাৎলাভ করা যায়। সেদিনও ‘ভরার মেয়ে’ বঙ্গীয় কুলীন ব্রান্ধণের কুল অলঙ্কড করিয়াছে, এবং ‘জল’কে ‘পানি’ এবং প্রদীপকে "চেরাগ’ বলিয়া আত্মপ্রকাশ করিতে বাধ্য হইহইয়াছে, কিন্তু ভজন্ত হিন্দুসমাজ হইতে বিতাড়িত হয় নাই । মুসলমান-প্রাধান্যের যুগে হিন্দুসমাজে কত মুসলমান সংমিশ্রণ ঘটিয়াছে, কে তাহার ইয়ত্তা করিবে? যদিও মিশ্র গ্রন্থে ও ঘটক-কারিকায় তাহার কতক পরিচয় পাওয়া যায়, এবং ঐচৈতন্যচরিতামৃতে পাঠান বৈষ্ণুব - গণের প্রসঙ্গ দেখিতে পাই, তথাপি আভিজাত্যগৰ্ব্বিত ইতিহাস রচনা-বিমুখ হিন্দুসমাজ এসকল ঘটনা যথাসাধ্য গোপন করিয়াই গিয়াছে বলিয়াe বোধ হয়। বিশুদ্ধ শোণিতের স্পৰ্দ্ধা পৃথিবীর কোনজাতিই করিতে পারে না, হিন্দুজাতিও নহে। বাংলার সপ্তশতী ব্রাহ্মণগণের উৎপত্তি ও বিলোপের খাটি ইতিহাস উদ্ধার করিতে পারিলে এ-বিষয়ে অনেক নূতন তথ্য জানা যাইত। কান্তকুজাগত পঞ্চব্রাহ্মণ হইতেই বা কিরূপে বঙ্গে ব্রাহ্মণবংশের এত বিস্তৃতি হইল, ইহাও বিবেচ্য। মুসলমান-জাতির