পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sう8cm〜 6थषांज्नौ ১৩৪৪ আছেন। কি কৌশলে তাহার নিকট সিনেমা বা ফুটবল খেলা দেখিবার টিকিটের পয়সা আদায় করিয়া লওয়া যায় সেটা তাহার এত দিনে ভাল ভাবেই অভ্যাস করিয়াছে, এবং ছেলেদের এই সব ছোটবড় উপদ্রব সহ করিবার মত উৎসাহ এবং অধ্যবসায় সত্যবালার অাছে। হরিবাবু প্রতিবেশীদের সহিত ঘনিষ্ঠ হইবার চেষ্টা করিলেন। কিন্তু সে-ঘনিষ্ঠতার মধ্যেও কোথায় যেন ফাক থাকিয় গেল। প্রতিবেশীদের মধ্যাহ্ন এবং অপরাষ্ণুের দাবার আড়ায় হরিচরণ বাবু নি:সঙ্গ বোধ করিতে লাগিলেন । খেলিবার অধ্যবসায় তাহার ছিলই না, উপরন্তু মাত্র দুই জন খেলোয়াড়কে ঘিরিয়া আর আট-দশ জনের সহিত দল বাধিয়া দাড়াইয়া থাকিবীর উৎসাহও তিনি পাইলেন না। অর্থাৎ ইহাদের মধ্যে কাজকর্থের তাগাদ যাহাদের নাই, হরিবাবু দেখিলেন তাহারা আলস্য এবং কৰ্ম্মবিমূখত কেমন অনায়াসে অভ্যাস করিয়া ফেলিয়াছে। পবরের কাগজের পাতায় আইন-আদালতের বিচিত্র বিবরণগুলি পড়িতে পড়িতে সমস্ত সকালট কাটাইয়া দেওয়া ইহাজের পক্ষে যেমন সহজ, খবরের কাগজ ৰেদিন হাতের কাছে মেলে না, সেদিন অমুক সরকার হইতে অমুক বস্থর কলঙ্কের আহমানিক কাহিনীর বিচিত্ৰতর রস উপভোগ করিতে করিতে সময় কাটাইয় দেওয়াও র্তাহাদের পক্ষে কঠিন হয় না। কিন্তু ত্রিশ বছর ধরিয়া হরিচরণ বাবু ঠিক ইহার উন্ট দিকে চলিয়া আসিয়াছেন, স্বতরাং যাহাদের তিনি নিকটে আনিবার চেষ্টা করিলেন, তাহারা তাহাকে দূরে রাখিয়া দিল । খবরের কাগজের উপর হরিচরণবাবুর আস্থা ছিল না। তবু সেদিন সকালে উঠিয় তিনি সেঙ্গ ছেলেটাকে ডাকিয়া বলিয়া দিলেন, আজ থেকে ইংরিজী কাগজ একখানা রোজ আমার চাই, বুঝলি ? বেণী কোন কথা বলিবার প্রয়োজন ছিল না। ছেলেটি তখনই পয়সা লইয়া চুটিয়া বাহির হইল, নগদ দামে একথান কাগজ কিনিয়া আনিল এবং আগামী কাল হইতে রোজ সকালে বাড়ী বসিয়া যাহাতে কাগজ পাওয়া যায় তাহার ব্যবস্থা করিয়া আসিল । হরিচরণ বাবু সেদিন সমস্ত দ্বপুর বিছানায় পড়িয়া কাগজ পড়িলেন। খবরগুলি একে একে পড়া হইল, সম্পাদকীয় প্রবন্ধগুলিও এক সময় ফুরাইয়া গেল, এমন কি ‘ওয়াণ্টেণ্ড' কলম এবং বিজ্ঞাপনগুলি পৰ্য্যস্ত তিনি বাদ দিলেন না। পরদিন সকালে কাগজওয়ালার ভাক শুনিয়া হরিচরণবাবু বাহিরে আসিতেছিলেন, হঠাৎ তাহার মনে হইল, ডান পায়ের হাটুর কাছটা যেন কন কন করিতেছে । ঠাণ্ডায় বা শুইবার দোষে এমন হওয়া বিচিত্র নয় মনে করিয়া হরিচরণবাবু ব্যাপারটা গ্রাহ করিলেন না ; বাহিরে গিয়া কাগজওয়ালার সহিত কথাবাৰ্ত্ত কহিলেন এবং কাগজ লইয়া পড়িতে মুরু করিলেন। বেলা বাড়িত্বে লাগিল, কিন্তু হাটুর ব্যথা কমিবার কোন লক্ষণই দেখা গেল না। হরিচরণ বাবুর মুখে চিন্তার ছায়া পড়িল । কিছুক্ষণ তিনি রোদে পা ছড়াইয়া চুপচাপ বসিয়া রহিলেন, তার পর চাকরটাকে ডাকিয় হুকুম দিলেন ভাল করিয়া ভেল মলিশ করিবার। ব্যথা কিন্তু গেল না । দুপুরবেলায় সত্যবালার সহিত দেপা হইল। সেই মাত্র ভাড়ার-ঘরে চাবি দিয়া তিনি লেপের ওয়াড় শেলাই করিতে বসিয়াছেন। হরিচরণ বাৰু বিমৰ্ষ, করুণ মুখে তাহার নিকটেই বসিয়া পড়িলেন। এমন ব্যাপার অনেক দিন হয় নাই । সত্যবালার লজ্জা করিতে লাগিল . হরিচরণ বাবু সবিস্তারে পায়ের ব্যথার ইতিহাসট। র্তাহার কাছে খুলিয়া বলিলেন। তিনি মনে মনে কল্পনা করিয়া আসিয়াছিলেন যে তাঙ্গর হাটুর এই কষ্টকর অবস্থার কথা শুনিয়া সত্যবালা আতঙ্কে বিহবল হইয়া পড়িবেন, এখনই ডাক্তার ডাকিবার জন্য ব্যস্ত হইয়া উঠিবেন। কিন্তু সেরকম কোন লক্ষণ দেখা গেল না। সত্যবালা বলিলেন, দিন-রাত বাড়ী বসে থাকলে এমনি হয় বইকি মাতুষের । দেখ দেখি, বাড়ুজ্যেদের বড়কপ্তাকে । বয়সে তোমার চেয়ে দু-দশ বছরের বড়ই হবেন, তবু রোজ সকালে উঠে পায়ে হেঁটে যান গঙ্গাস্বান করতে। মানুষের নড়াচড়া একটু চাই-ই, নইলে বাতে ধরবে ষে । যে-জাশঙ্কাট। হরিচরণ বাবু এতক্ষণ সযত্নে এড়াইয়া চলিতেছিলেন, সত্যবালার মুখের কথায় সেট যেন একেবারে স্পষ্ট হইয়া উঠিল! হয়ত শেষ পৰ্য্যস্ত র্তাহাকে বাতেই ধরিগ, নিশ্চয় করিয়া কিছুই বলা যায় না !