পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা | বিবিধ প্রসঙ্গ · কলিকাতা অনাথ-আশ্রিম (t) সঞ্জীবনীর প্রত্যেক সংখ্যায় ১৩২৯ সাল হইতে নারীনিগ্রহের আহ্বপূর্বক তালিকা দেওয়া হইতেছে। কেবল ২৪শে চৈত্রের কাগজখানিতেই যে পঞ্চাশটি অত্যাচরিতা নারীর বৃত্তান্ত দেওয়া হষ্টয়াছে, তাহা হইতে দৃষ্ট হয়, যে, তন্মধ্যে ২৯ জন সধবা, ভিনজন বিধবা, চারিঞ্জন কুমারী, বাকী চৌদ্দজনের অবস্থা অজ্ঞাত । ইহা হইতে প্রতীত হয়, যে, বিধবাদের উপরই অধিকাংশস্থলে দুবৃত্ত লোকেরা অত্যাচার করে, এই ধারণ। বর্তমান তালিকা অনুসারে সত্য নহে। মোটের উপরও সত্য না হইতে পারে। অত্যাচরিতা পঞ্চাশটি নারীর মধ্যে ১৫ জন মুসলমান, ৩০ জন হিন্দু, বাকী ৫ জনের ধৰ্ম্ম অজ্ঞাত। ইহা হষ্টতে বুঝা যাইবে, যে, নিগৃহীতাদের মধ্যে মুসলমান নারীর সংখ্যা কম নহে । সচ্চরিত্র ও বিবেচক মুসলমানের অবশ্য অত্যাচারী ও অত্যাচরিতাদের ধৰ্ম্মনির্বিশেষে পাশবিক অত্যাচারকে ঘৃণ করেন । কিন্তু যাহার। সাম্প্রদায়িক অন্ধত বশত: মনে করে, যে, ধর্ষিতা নারী হিন্দু এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি মুসলমান হইলে সংবাদটাই মিথ্যা কিম্বা নারীটিরই দোষ ছিল, তাহাদের তাবিয়া দেখা উচিত, যে, মুসলমান পুরুষেই মুসলমান নারীর উপর অত্যাচার বড় কম স্থলে করে না । ৫০টি অত্যাচারসংবাদের মধ্যে ২৫টিতে অত্যাচারীরা কেবল মুসলমান, ১০টিতে অত্যাচারীরা কেবল হিন্দু, তিনটিতে অত্যাচারীরা হিন্দু ও মুসলমানের সম্মিলিত দল, এবং বাকী ১২টির বিশেষ বৃত্তান্ত জানা নাই । ইহাতে হিন্দুমুসলমান উভয়েরই ভাবিবার বিষয় এবং লজ্জার কারণ আছে । কেবল দুইটি ঘটনায় দুবৃত্ত হিন্দু মুসলমান নারীর উপর অত্যাচার করিয়াছে তদ্বিষয়ক তদন্ত বা মোকদ্দমার ফল অজ্ঞাত। অধিকাংশ স্থলে অত্যাচারীরা মুসলমান এবং অত্যাচরিতার হিন্দু। বঙ্গের মুসলমান ও হিন্দু পুরুষ ও নারীগণ জাগিয়া মাতৃভূমির কলঙ্ক অপনোদন করুন। রাজবন্দীদের স্বাস্থ্য বিনা বিচারে যে-সকল লোককে রাজবন্দী করিয়া রাখা হইয়াছে, তাহাদের স্বাস্থ্যের প্রতি তাহাদের ভারপ্রাপ্ত সরকারী কৰ্ম্মচারীর কিরূপ মনোযোগী, খবরের কাগজে তাহাদের নানা ব্যারামের সংবাদ হইতে তাহ অনুমান করা কঠিন নহে ৷ এবিষয়ে তাহাদের অভিযোগ যথাস্থানে পৌঁছে, ন, মাঝপথে মারা. যায়, তাহা বুঝিবার উপায় নাই । ওরা " এপ্রিল তারিখের বেঙ্গলী ও অন্ত কোন কোন কাগজে ছাপা হইয়াছিল, যে, আগ্র-অযোধ্যা প্রদেশের ফতেগড় সেন্টাল জেলে আবদ্ধ পূর্ণানন্দ দাসগুপ্ত এবং নলিনীরঞ্জন রায় নানা ৰাধিতে ভুগিতেছেন । কোন প্রকার ব্যায়ামের, এমন-কি ভ্রমণেরও বন্দোবস্ত না থাকায় তাহীদের পীড়া বাড়িভেছে । একটি সঙ্কীর্ণ জায়গায় তাহাদিগকে দিনরাত থাকিতে হয় । জেলের এলাকাভুক্ত স্থানে মুক্তবায়ুসেবনের কয়েকটি ভাগ জায়গা থাকা সত্ত্বেও এবং জেলের অধ্যক্ষের নিকট বার বার অনুরোধ করা সত্বেও, তাহাদিগকে ব্যায়াম ও মুক্ত বায়ু সেবনের অনুমতি দেওয়া হয় নাই । শুনা যায়, যে, স্থানীয় কৰ্ম্মচারীরা বলেন, যে, বাংলা-গবন্মেন্টের একটি ছকুমে তাঙ্গাদের হাত-পা বঁধে। হুকুমটির তাৎপৰ্য্য এই, যে, বন্দীদের জন্ত মুক্তবাতাস, থেলা ও ব্যায়ামের বন্দোবস্ত করিতে হইবে, কিন্তু তাহ বাংল-গবন্মেণ্টের সম্মতিক্রমে করিতে হইবে। কিন্তু যদিও বহুসংখ্যক দরখাস্ত ও স্মারকলিপি বাংলা গবৰ্ম্মন্টেকে পাঠান হইয়াছে, তথাপি এই সম্মতি আসে নাই । বেঙ্গলী প্রভৃতি কাগজে যাহা বাহির হইয়াছে, তাহা যদি নির্ভল সংবাদ হয়, তাহা হইলে তাহ বড় চমৎকার ব্যাপার। রাজবন্দীদিগের স্বাস্থ্যের জন্য যাহা দরকার, তাহা করিবার নিয়ম আছে। কিন্তু বাংলা গবন্মেণ্টের সম্মতি ব্যতিরেকে তাহা করিবার জো নাই। প্রথমতঃ, ইহাই ত এক অদ্ভুত ব্যবস্থা। আর যদি ব্যবস্থা তাহাই হয়, তাহা হইলে দরখাস্ত ও স্মারকলিপি সত্ত্বেও সম্মতি দেওয়া হয় না কেন ? বাংলা গবন্মেটি বলিতে অবশ্য বুঝায় সকৌন্সিল বঙ্গের গবর্ণর বাহাদুর । দরখাস্ত আদি একায়িক তাঙ্গদের কাছে পৌছায় না, হয় ত কোন কৰ্ম্মচারীর মারফতেও পৌছায় না । কোন সেক্রেটরী ব) আণ্ডার-সেক্রেটরী বা অধস্তন কৰ্ম্মচারী কি তাহ চাপা দিয়া রাখেন না, তাহার উপর একট। যা হোক কিছু নিষেধাত্মক হুকুম দিয়া কাজ খতম করেন ? এই বিষয়ে কলিকাতাস্থ ইণ্ডিয়ান জানালিষ্ট স্ এসোসিয়েশুনের সম্পাদকের বঙ্গীয় সেক্রেটারিয়েটের সহিত পত্র ব্যবহার করা উচিত। রাজবাদীদের বঁচিয়া থাকিবীর জন্য দৈনিক আহারের প্রয়োজন । কিন্তু এরূপ হুকুম ত নাই, যে, বাংলা গবন্মেন্টের সম্মতি না যাইলে তা হাদিগকে খাইতে দিতে পারা যাইবে না। তাহা হইলে মুক্ত বাতাস, খেলা ও ব্যায়ামের বেলায় কেন এরূপ হুকুম করা হইয়াছে ? কলিকাতা অনাথ-আশ্রিম সম্প্রতি এই আশ্রমের সভার বার্ষিক অধিবেশন হইয়া গিয়াছে। ইহার সম্পাদক রায় বাহাদুর ডাক্তার চুণীলাল বস্থ মহাশয়ের রিপোর্ট হইতে জানা যায়, যে, টিতে এক শত অনাথ বালকের ভরণপোষণ হয়।