পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

| ২য় সংখ্যা ] সঙ্গীতে পরিবর্তন Sbrసి যথাসময়ে প্রথমে কাশীপুবে যাই ; সেখানে কাসিম আলি খ ( রবাধী ) ছিলেন । সন্ধ্যার সময় খ। সাহেবের বীণাবাদন হইল। শ্রোতাগণের মধ্যে রাজা এবং আমরাই কয়জন । খা সাহেব একঘণ্টা আলাপ করিয়া গান করিলেন এবং বিষ্ণুপুরের একজন মৃদঙ্গী মৃদঙ্গ বাজাইলেন। বীণার সঙ্গে গান বন্দে আলি খরি শুনিয়াছিলাম আর এই শুনিলাম ; পরে আর শুনিতে পাই নাই । পরদিন গুড্‌াথেষ্ট থ৷ সাহেব আসিয়া উপস্থিত হইলেন । রাজা অত্যন্ত সরল ও অমায়িক প্রকৃতির লোক ছিলেন। তিনিও প্রাতে আসিয়া আমাদের সহিত যোগ দিলেন। আমাদের গান হইল ও খ। সাহেব বীণাতে সংগত করিতে লাগিলেন। আমরা "তুরিমন স্মরণ” ললিত রাগের গান করিলাম। খ। সাহেব বড়ই খুসী হইলেন এবং তিনি ৪ *সঘন বন ছায়ো” ললিতের ধ্রুপদ গান করিলেন এবং বীণাতে সংগত করিতে লাগিলেন। রাজাও অত্যন্ত খুশী হইলেন । আহারাস্তে পুনরায় বৈকাল বেলায় বীণা আরম্ভ হইল ও খ। সাঙ্গেব সাময়িক রাগ আলাপ ও গান করিলেন। সন্ধ্যার পর অহিরাস্তে রাজার সহিত রামদাস-বাবুর সঙ্গীত সম্বন্ধে নানাবিধ কথোপকথন হইতে লাগিল। কলাবিৎদিগের মতের সহিত কথকদিগের মেলে না, অনেক স্থলে কলহ ও হয়, অথচ খ{ সাহেবরা হাতে-কলমে অর্থাৎ যন্ত্রে কিম্ব কণ্ঠে স্পষ্ট করিয়া দেখাইয়া দেন। আমাদের গান এবং বিষ্ণুপুরের ঢঙ্গের গান বিভিন্ন রকমের ঠইলেও তাহাতে যে বিশেষত্ব নাই তাহা বলা যায় না। যদুভট্ট নামে একজন গায়ক সেখানে ছিলেন, তাহার কণ্ঠ ভাল ছিল এবং তিনি অসাধারণ মেধাবীও ছিলেন। কিন্তু ভাল মাথা থাকিলেই যে কাহারও নিকট শিষ্যত্ব স্বাকার করিবেন না ইহা হইতে পারে না। রাজা এই সম্বন্ধে গোস্বামী মহাশয়কে একটি ঘটনা শুনাইলেন । যদুভট্ট কোন সময়ে দরবারী কানেড়া গান করিতেছিলেন এবং কাসিম আলি থা শুনিতেছিলেন। গান শেষ হইবার পর খ৷ সাহেব বীণাতে ঐ রাগের আলাপ করিলেন এবং পরে একখানি গান করিলেন। স্পষ্ট দেখা গেল, মত দুইজনের গানে বহু ভেদ । ভট্ট মহাশয় থ সাহেবকে বলিলেন, আমাকে বীণ। শিখান। থা সাহেব বলিলেন, “বীণা নিজ বংশ ( অঙলাদ ) ব্যতীত কাহাকেও শিথাইবার আদেশ নাই। তবে তুমি সেতার কিম্বা গান শিখিতে পার ” ভট্ট মহাশয় বলিলেন, “আমি বীণাই শিখিব ; আপনি যদি না শিথান তবে অক্ষত্র শিখিব।” ইহার উভয়েই রাজ-দরবারে থাকিতেন ; থ-সাহেব যখন দরবারে বাঙ্গাইতেন ভট্ট মহাশয় রাজকৰ্ম্মচারীদের ঘরে লুকাইয়া থাকিয় সেই ব্যঞ্জনা অভ্যাস করিতেন। এইরূপ পাচ ছয় মাস কাটিয়া গেল । থী সাঙ্গেব কেবল গুণী ছিলেন না, তিনি একজন পণ্ডিত ছিলেন। সঙ্গীত দ্বারা যৌগিক উপদেশ দিবার শক্তি র্ত্যহাতে ছিল তাই তিনি মধ্যে মধ্যে রাজার বিনায়ুমতিতেই তাহার নিকট আসিয়া উপদেশ দিতেন। কোন সময়ে ভট্টগ্রী সেতার:বাঙ্গাইতেছিলেন এবং রাজা শুনিক্ৰেছিলেন, এমন সময়ে থ৷ সাহেব হঠাৎ সেখানে উপস্থিত হইলেন । ভট্ট মহাশয় তন্ময় হইয় সেইসকল তানগুলি বাজাইতেছিলেন যেগুলি লুকাইয়া শিখিয়াছিলেন। র্য। সাহেব জিজ্ঞাসা করিলেন,"ভট্টঞ্জী,এই তানগুলি কোথায় শিখিলে ?” ভট্টজী বলিলেন, "এগুলি আমাদেরই ঘরের ” খ সাহেব বললেন, “এ বিষ্ণুপুরের ঢং কখনই নহে ; তুমি চুরি করিয়া শিথিয়াছ।" একথা বলিয়া রাঞ্জাকে বলিঙ্গেন, “আপনার চা করদের জিজ্ঞাসা করুন, ভট্টজী তাহাদের ঘরে লুকাইরা থাকেন কি না এবং আমি যখন বাজাই তখন সেগুলি লুকাইয়া অভ্যাস করেন কি না।” অংশু ভট্টজী ধরা পড়িয়া গেলেন, সত্য কথা বলিলে হয়ত কাশীধামের অর্জনজীর মত তিনিও খ। সাহেবেরই নিকট বিষ্ঠালাভ করিতে পারিতেন। চুরি করিয়া কেহ কেহ বিদ্যা অর্জন করিতে পারেন বটে, কিন্তু তথাপি গুরুর নাম লোপ করা কর্তব্য নহে। রাঙ্গ এইরূপ কথোপকথনের পর আমাদিগকে উৎসাহ দিয়া বলিলেন, “গুরুসমীপে থাকিয়া গুরুর সেবা করিয়া বিদ্য শিক্ষা কর।” পরদিন প্রাতেই জামরা কাশীপুর হইতে বিষ্ণুপুর যাত্রা করিলাম। সেখানে স্বগীয় রামশঙ্কর মিশ্র মহাশয়ের ভ্রাতু-পুত্র ( নাম স্মরণ নাই ) আমাদিগকে অতিশয় যত্নের