পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২৪ সাধনার স্বারা ভারতবর্ষ রাষ্ট্রীয় পরাজয়কেও অকল্যাপের গ্লানি হইভে মুক্ত রাখিতে পারিয়াছিল। শুধু তাই নয়, অস্ত্রনিপুণ দুৰ্দ্ধৰ্ব শক্রকেও ভারতবর্ষ কল্যাণ-ধৰ্ম্মে দীক্ষিত করিয়া একান্ত আপনার করিয়া লইতে পারিয়াছিল । তাই দেখিতে পাই ষবন ধৰ্ম্মদেব, শক ঋষ ভদত্ত, কুষণ বাহুদেব ভারতবর্ষের কল্যাণ-ধর্শ্বকে স্বীকার করিয়া লইয়া ভারতবর্ধেরই সাধনায় আত্মনিয়োগ করিয়াছিল। তাই দেখিতে পাই, যে “যুগদোষ-দুরাচারঃ” যবনের একদিন প্রলয়-শঙ্খ ফুংকার করিতে করিতে ভারতের সমরাঙ্গনে অবতীর্ণ হইয়াছিল,সেই ষবনেরাই আর-এক দিন শ্রদ্ধাবনত হৃদয়ে মৈত্রীমন্ত্রের উদগীতা শাক্য ঋষির মূৰ্ত্তি নিৰ্ম্মাণে নিবিষ্ট হইয়াছে ; তাই বিদিশা নগরের এক প্রাস্তে যবনদূত হেলিওডোরাস ভক্তিনম্র হৃদয়ে স্বীয় উপাস্ত দেবতা ভগবান বাস্থদেবের উদ্বেতে গরুড়স্তম্ভ নির্মাণ করিতেছে এবং “দমস্তাগোহ প্ৰসাদ:" ভারতে এই মহামন্ত্রকেই সত্যধৰ্ম্ম বলিয়া ঘোষণা করিতেছে। যে দুৰ্দ্দস্তি শকগণের প্রবল সংঘাতে একদিন উজ্জয়িনীর রাজসিংহাসন প্রকম্পিত হুইয়াছিল, আর-এক দিন সেই শকরাই ভারতীয় ধৰ্ম্মপ্রতিভার নিকট মস্তক অবনত করিয়া ভারতের কল্যাণকর্থে অগ্রণী হইয়া দাড়াইয়াছে। তাই মহাক্ষ রূপ রাজুলের পত্নী "নক্ষ্মসি অকসা" ভগবান শাক্যমুনির উদ্বেতে গুপ এবং সৰ্ব্বাস্তিবাদী সঙ্ঘের জন্য বিহার নিৰ্ম্মাণ করাইয়া দিতেছেন ; দীনীকপুত্র নহপান-জামাতা শক উসবদাত (ঋষভদত্ত) ব্ৰক্ষণদিগকে গো-স্ববর্ণ দান করিতেছেন, তীর্থস্থানে আশ্রয়ুশালা এবং পথিকদের জন্ত “আরাম তড়াগ-উদপান” নিৰ্ম্মাণ করাইতেছেন। সেইজন্যই যখন দেখা বায়, মেচ্ছ কুণরাজ কণিষ্ক নাগাৰ্জ্জুন, অশ্বঘোষ, বসুমিত্র প্রভৃতি শ্রেষ্ঠ বৌদ্ধ আচাৰ্য্যদের পৃষ্ঠপোষকতা করিতেছেন ও সমগ্র বৌদ্ধ জগতের প্রতিনিধিদিগকে লইয়া বৌদ্ধ মহাসঙ্গীত আহবান করিতেছেন, তখন আমরা বিস্ময় প্রকাশ করি না । এইরূপে ভারতবর্ষ ধর্শ্বের দ্বারা বিজেতাকেও জয় করিয়া লইয়াছিল । যে বিজেতৃগণ ভারতীয় ক্ষত্ৰশক্তিকে পরাভূত করিয়া ভারতবর্ষকে অস্ত্রাঘাতে ক্ষতবিক্ষত করিতে ক্রটি করে নাই, সেই বিজেতৃগণই শ্রদ্ধা ও বিশ্বয়ের সহিত ভারতের প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড ধৰ্ম্মশক্তির নিকট বিজয়গৰ্ব্বকে অবলম্বিত করিতে বাধ্য হইয়াছিল। এইরূপে ভারতবর্ষ কল্যাণ ধৰ্ম্ম স্বারা বহু পরাজয় ও পরাধীনতার মধ্যেও নিজেকে গ্লানি ও দুৰ্গতি হইতে মুক্ত রাখিতে পারিয়াছিল। শুধু তাই নয়, এইরূপেই ভারতবর্ষ ধৰ্ম্মবিজয়ের দ্বারা অস্ত্রবিজয়ের গৌরবকে মান করিয়া দিয়া বিজেতাকেও জয় করিয়া লইয়াছিল । ইহাই ভারতবর্ষের বিশেষত্ব, ইতাই ভারতবর্ষের ইতিহাসের শিক্ষা । ঘে-সময় ভারতবর্ষের ক্ষত্রিশক্তি সফলতার চরম সীমায় পেীfছয়ছিল, যে-সময় ভারতবর্ষের বাহুবলের নিকট পরাভব স্বীকার করিয়া গ্রীকৃবীর সেলুকাসকেও হিন্দুকুশের অপর পারে প্রত্যাবৰ্ত্তন করিতে হইয়াছিল এবং যে-সময় গন্ধীর হইতে তাম্রলিপ্তি এবং হিমাচল হইতে কৃষ্ণ পৰ্য্যস্ত সমগ্রদেশ পাটলিপুত্রের রাজসিংহাসনতলে আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিল, সে-সময় অকস্মাৎ ভারতবর্ষের সৈন্তাবাস-সমূহে বিজয়-ভেরী নীরব হইয়া গেল, রণতুরঙ্গের হ্রেসাধ্বনি দিগস্তের বাতাসে মিলাইয় গেল । সেদিন ভারতের ঋষি সম্রাটু প্রিয়দর্শী অশোক জয়স্কন্ধাবার পরিত্যাগ করিয়া ভগবান শাক্যমুনির ধৰ্ম্মসঙ্গে আশ্রয় লইয়া বজ্র কণ্ঠে দিকে দিকে ঘোষণা করিলেন— “এযে চ মুখমুতে বিজয়ে দেবানাং প্রিয়স যে প্রমাষিজয়ো ।” অর্থাৎ অস্ত্রের দ্বারা যে বিজয়লাভ তাহা অতি তুচ্ছ, ধৰ্ম্মের দ্বারা যে-বিজয় সেই বিজয়ই শ্রেষ্ঠ বিজয় । যেদিন এই মহাবাণী উদ্যেবিত হইল সেইদিন হইতে ভারতের ইতিহাসে এক মহান যুগান্তর উপস্থিত হইল। সেইদিন হইতে ভারতের নগরে প্রাস্তরে “ভেরীঘোষ” সংগ্রামবার্তা রটন না করিয়া ধৰ্ম্ম বার্তা ঘোষণা করিতে লাগিল। সেইদিন হইতে ভারতের দূতগণ ছুটিয়া চলিল দেশে বিদেশে সময়ঘোষণা লইয়া নহে, ধর্শের বাণী শান্তির বাণী লইয়া । তাহারা গেল সমস্ত দেশে "ছয় শত ষোজন দূরে" গেল সিরিয়ায়, মিশরে, সাইরিনিতে, এপিরাসে মৈত্রীর বাণী লইয়া ; তাঙ্গর চোল, চের, পাণ্ডা, সতিয়ুপুত্র ও তাম্রপণিতে (সিংহল) আর গেল সুবর্ণভূমিতে (ব্রহ্মদেশ ) । সেইদিন হইতে