পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] জীবনদোলা ২২৯ একটি ১১।১২ বছরের মেয়েকে তাঁহাদের শাস্ত করিয়া পাঠে মনোযোগী করিতে পাঠাইভে হইত। গুরুম সময় মত তাহার পাঠটা পরে লইতেন। এখানে আসিয়া গেীরীর মনের শৈশবের সে ইস্কুলের স্মৃতি লজ্জায় যেন কোথায় লুকাইয়া গেল । সকাল হইতে মস্ত মস্ত পাঁচ ছয় থানা গাড়ী মেয়ে বোঝাই করিয়া ক্রমাগত যাওয়া-আসা করিতেছে ; তিন চার থানা বাড়ী জুড়িয়া দুইতিন শ মেয়ে ঘরে ঘরে পনের বেলি জন শিক্ষয়িত্রীর কাছে কত রকম বিদ্য শিক্ষা করিতেছে ; কোথাও গান হইতেছে, কোথাও ড্রিল হইতেছে। মস্ত মস্ত ঘণ্টা দিনে পাঁচ সাত বার বাড়ী কঁপাই বাঞ্জিয় উঠিতেছে, এত অর্থ ও শক্তির সমবায়ে এত বিরাট আয়োজন । না জানি এখানকার মেয়েরা কি আশ্চৰ্য্য বুদ্ধিমতী ও বিদ্যাবতীই হইয় উঠে ! গৌরী বিস্ময়ে স্তম্ভিত হইয়৷ গেল। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তাহার মনে একটা উজ্জল ভবিবাতের ছবিও ফুটয় উঠিল । মনটা আনন্দে নৃত্য করিয়৷ বলিল, “আমার জীবন আঞ্জ হইতে সার্থক হইতে চলিল ।” সে দেখিয় বিস্মিত ও পুলকিত হইল ধে,ইস্কুলে পড়িতে .আসার পক্ষে তাহার বয়সটা কিছু আশ্চৰ্য্য রকম বেশী নয় । তাহার চেয়ে অনেক বড় মেয়েরাও এখানে আনন্দে হাসিয়া থেলিয়া নেহাৎ ছেলে মানুষের মত ছুটাছুটি করিয়া বেড়াইতেছে । যে-বয়দের মেয়েদের সে বাড়ীতে দুই তিন ছেলের ম৷ হইতে দেখিয়ছে তাহারাও ধে এমন শিশুর মত হাসিয়া খেলা করিয়া বেড়াইতে পারে গৌরী তাহা কোনোনি ভাবে নাই। দেখিয় তাহার মনের অকাল বাৰ্দ্ধক্যটাও যেন খসিয়া পড়িতে চাহিতেছিল। ইস্কুলের যাহারা শিক্ষয়িত্রী তগৰ্হাদের অধিকাংশেরই বয়স অল্প হইলেও গেীরীর চক্ষে তাহা অসম্ভব রকম বেশী ঠেকিতে লাগিল । দুইচার জন ত সত্যসত্যই তাহার মায়ের বয়সী । এভ বয়সেও যে মেয়েমানুষ অবিবাহিত থাকিয়া লেখাপড়ার চর্চা ও অর্থ উপার্জন করিতে পারে এরকম ধারণ। গৌরী স্বপ্নেও করিতে পারিত না । সে পিতার মুখে শুনিয়া বলিয়াছিল বটে ষে, নিজের পায়ে নিজে দাড়াইবে । কিন্তু গৃহসংসারের বাহিরে এমন একেবারে সম্পূর্ণ নিজের হাতে নিজের সমস্ত ভার লইয়া ষে মেয়েরা কখনও থাকিতে পারে তাহা গৌরীর কল্পনার অতীত ছিল । তাহার কল্পিত আত্মনির্ভর ও এই আত্মনির্ভরে যে আকাশ-পাতাল প্রভেদ তাহা সে দুই চার দিন দেখিয়াই বুঝিল । পুরুষের সাহায্য একেবারে না লইয়াও যে স্ত্রীলোক স্বচ্ছন্দে ও সানন্দ্ৰে বাচিয়৷ থাকিতে পারে দেখিয়া গেীরীর মন হইতে দুর্ভাবনার একটা বোঝা নামিয় গেল। কেমন একটা গৰ্ব্বে মনটা ভরিয়া উঠিল । প্রথম পরিচয়ে বিদ্যালয়ের যে আশ্চৰ্য্য কুন্দর ও মহান রূপ গৌরী দেখিল তাহা তাহার' নিজের চোখের দৃষ্টির গুণ হইলেও তাহাই তাহার নূতন জীবন-পথের একটা উজ্জল আলোক-স্বরূপ হইয়ু৷ জলিতে লাগিল । এ আলোকে সে তাহার গন্তব্য স্থানে অনায়াসেই পৌছিবে ভাবিয়া আনন্দে মাতিয়া উঠিল । ইস্কুলের অন্যান্ত মেয়ের মত খাওয়াদাওয়া হাসি-খেলার সঙ্গে পড়াশুনাকে এক পৰ্য্যায়ভুক্ত করিয়া সে দেখিতে পারিল না। ইহা তাহার কাছে একট। ব্রত হইয়া দাড়াইল, গুরুবাক্য তাহার বেদবাক্য হইয়| উঠিল । সে বাড়ী অসিয়া শঙ্করকে বলিত, “দাদা, এক-একটা ক্লাশে এক বছর ক’রে কেন থাকৃতে হয় ? যে যেমন তাড়াতাড়ি পারে, তা’কে তেমন ক’রে এগিয়ে যেতে দেয় ন। কেন ?" শঙ্কর বলিত, “তাতে তোর লাভটা কি হ’বে ?” গৌরী উৎসাহে উত্তেজিত হইয়া উঠিয়া বলিত, “না হ’লে আমি সকলকে দেখাব কি ক'রে ষে আমিও নিজের সব ভার নিজে নিতে পারি ? বড় যে দেরী হ’য়ে যাবে। তুমি জান না ত, আমাদের ইস্কুলের হেমনলিনী দিদি আর তার বোন দু’জনে মিলে কত রোজগার করেন ? তারা একখানা বাড়ীই ক’রে দিয়েছেন নিজেদের মাকে । অবিশুি তার বোন ডাক্তার ব’লে বেশী রোজগার করেন। তার আবার গাড়ী অাছে, তা ছাড়া ভাইকে বিলেত পাঠিয়েছেন । কিন্তু তাদের বাড়ীতে একজনও পুরুষ মানুষ নেই। কি আশ্চৰ্য্য বল ত ” শঙ্কর বলিভ, “হ্যা, আশ্চধ্যি বটে। তাই বুঝি তোরও