পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२3b” আপন মহিমাতে সে আশ্রয় নেবে এ কথা ভুলতে পারে না । তার পক্ষে অক্রিয়ভাবে গ্রহণ করা ভিক্ষুকত, অক্রিয়ভাবে আঘাত পাওয়া কাপুরুষতা, অক্রিয়ভাবে অন্তকে অবলম্বন কর অধীনতা । মানুষই বলেছে— সৰ্ব্বং পরবশং দু:খং সৰ্ব্বমাত্মবশং মুখম্। অর্থাং পরবশ্বতায় বাহিরের আরাম থাকতে পারে কিন্তু আত্মার দুর্গতি। কেননা স্ব কর্তৃত্ব আত্মার ধৰ্ম্ম । লোভে, ভয়ে বা অভ্যাসে যার সেই নিজের ভিতরকার ধৰ্ম্ম স্নান হয়েছে সে জীবলোকে বেঁচে আছে পশুপক্ষীদের সঙ্গে এক পৰ্য্যায়ে, কিন্তু সে মরেচে যে-ক্ষেত্রে মানুষ আত্মাকে উপলব্ধি ক’রে ধন্য । বিশ্ববিধাতাকে পাই তার হুষ্টিশক্তিতে—আত্মারও পরিচয় পাওয়া যায় তার হুষ্টির উদ্যোগে । সেই পরিচয়ের উৎকর্ষ কখন হয় ? যখন দেখি স্বাক্টকৰ্ত্ত তার স্বষ্টির উপকরণের চেয়ে বড়। উপকরণকে তিনি আপনার অমুকুল ক’রে নেন। নিজের জীবনকে মাচুর্য নিজে স্বষ্টি করবে, এইখানে তার আত্মার কর্তৃত্ব। তার স্বথ দুঃখ, লাভ ক্ষতি, খ্যাতি নিন্ম, যা-কিছু বাইবে থেকে তার ভাগ্যের দান, এসমস্তকে উপকরণকুপে সে পেয়েচে, এই নিয়ে তাকে আত্মপ্রকাশ করতে হবে। চিত্রশিল্পী ফেরেখা, যে-বর্ণ যে-পট, যে তুলি, এমনকি ফেবিষয় নিয়ে ছবি আঁকেন সেগুলিকে স্বতন্ত্র করে দেখলে তারা তুচ্ছ। আংশিক আকারে তাদের অর্থ নেই, স্থায়িত্ব নেই, তারা আবর্জনা। কিন্তু রূপকার তাদের সমস্তকে নিয়ে যখন তার চিত্তের কোনো একটি ধ্যানকে ক্ষপের সম্পূর্ণত দেন-তখন তারা নিত্যতার মহিম লাভ করে। তখন তারা কেউ বাইরের মূল্য দাবী করে আপন আংশিকতাকেই উগ্ৰ ক’রে দেখায় না। উপকরণ তুচ্ছ হ’লেও গুণা তাকে নিয়ে যখন আপনাকে প্রকাশ করেন তখন সেই সমগ্ররূপের স্বষ্টি নিত্যধৰ্ম্ম লাভ করে, যে নিত্যধৰ্ম্ম স্বৰ্ধচন্দ্রে, স্বষ্টিকর্তার হাতের কাজের যে-রস সেই রস ফুটে ওঠে ছবিতে। আমাদের জীবনকেও যে পরিমাণে সম্পূর্ণতা দিই সেই পরিমাণে আপন গুণ দুঃখ, আপন ধনসম্পদের চেয়ে সে বড় হয়ে ওঠে, স্বতরাং প্রবাসী--আষাঢ়, ১৩৩৪ { ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড সে-সমস্ত ঢাকা পড়ে। তখন সেই জীবনের মধ্যে নিত্যধৰ্ম্ম প্রকাশ পায়। নিজের জীবনস্থষ্টিতে যারা গুণী তাদের আমরা বলি অমর | এই অমরত বাহকালের অমরত নয়। যা পূর্ণ, যা স্বন্দর, তা যতক্ষণই থাকে ততক্ষণই নিত্যকে প্রকাশ করে। একটি ছোট বনফুল, সে নিত্যেরই রূপ, সে অল্পকালের মধ্যে ঝরে গেলেও চিরকালের ধন । তেমনি যে মামুযের মধ্যে আত্ম সমস্ত বাহ উপাদানকে আত্মসাৎ ক’রে জীবনকে নিজের ক’রে প্রকাশ করেছে, তার খ্যাতি থাকু আর না থাকু, কালকে সে বিস্তৃত আকারে অধিকার করুক আর ন; বরঞ্চ তার মধ্যে লিত্যেরই প্রতিরূপ দেখা দেয়। যে-কাল খণ্ড খণ্ড মুহূর্বে মুহূর্তে মৃত্যুর ছায়া, সেই অসম্পূর্ণ কালকে সে জয় করে। এই শিরীষ ফুল, এ যে সুন্দর হয়ে ফুটেছে এই এর সার্থকতা—অনাদর নিন্দ বা মৃত্যু কিছুতেই এই সার্থকতাকে নষ্ট করতে পারে না। সৃষ্টির ইতিহাসে এই যে নিভোর লীলা, সীমার মধ্যে অসীমের আবির্ভাব, এর আর অবসান নেই। সেই লীলার সঙ্গে আত্মার স্বষ্টিকর্থের যদি স্বর তাল মেলাতে পারি তাহলে প্রত্যেক নিমিযেই অমৃতের স্বাদ পাব। আঞ্জ নববর্ষে এই কথাটি আমাদের মনে ধ্বনিত হোক যে, যেন বাহিরের অবস্থার উপরে ভূয়ী হ’তে পারি। যেন আত্মশক্তিতে আত্মা প্রতিষ্ঠিত হয়, বহু বিষয়ে পরাসক্ত হয়ে না থাকে। অন্তরে আছেন ঘে-প্ৰভু বাহিরে দাস যেন তাকে অবমানিত না করে। বাধাবিঘ্ন দৈন্তের মধ্যে চিত্ত বারবার স্নান হয়, বারবার আপনাকেই অবিশ্বাস করি, বাহিরের উপরই আস্থা রাখি, আত্মার এই পরাভবকে একান্ত সন্ত্য য’লে যেন না মানি। আত্মার গতিপথে উখনিটাই সত্য,পতনটা চরম নয়—এই বাঞ্জাকেই আজ নববর্ষের কাছ থেকে গ্রহণ করি, আর জয়মৃত্যু ক্ষতির কুহেলিক-অন্তরালে যে জ্যোতিঃস্বরূপ আছেন, প্রাণের ধার ক্ষয় নেই, ঐশ্বর্ধ্যের র্যার অন্ত নেই, আনন্দের উৎস যিনি, তাকে আজ নমস্কার করি। ১ বৈশাখ, ১৩৩৪ । कुञ्ज्किब्लक