পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

eয় সংখ্যা ] সত্তর বৎসর శ్రీల একেবারে নষ্ট হইয়া গিয়াছিল। নূতন বৌদ্ধ সমাজে বর্ণভেদ ছিল না। শ্রমণ ও গৃহস্থ, বৌদ্ধের এই দুই শ্রেণীতেই বিভক্ত হইয়াছিলেন । বৌদ্ধ ধৰ্ম্মের প্রভাব ক্রমে ক্ষীণ হইয়া পড়িলে এবং বৌদ্ধ সমাজের শক্তি নষ্ট হইলে আধুনিক অথবা মধ্যযুগের ব্রাহ্মণ্য-প্রভাবের প্রতিষ্ঠা হয়। এই যুগসন্ধি সময়ে যে-সকল নিষ্ঠাবান বৌদ্ধ নিজেদের শীল ও সিদ্ধান্ত পরিত্যাগ করেন নাই, ব্রাহ্মণের। র্তাহদিগকে অস্পৃষ্ঠ করিলেন। এই ভাবেই সাহ, সুবর্ণবণিক, যোগী প্রভৃতি আধুনিক হিন্দুসমাজে অস্পৃহ হইলেন। নতুবা কুলে, শীলে, বিদ্যায় বা বিনয়ে, সদাচারে বা সাংসারিক সম্পদে ইহার উচ্চশ্রেণীর হিন্দু অপেক্ষ কোন অংশে হীন ছিলেন না এবং হীন নহেন। ইহার ব্রাহ্মণের নিকটে নিজেদের ধৰ্ম্ম বিশ্বাস এবং সমাজ-ব্যবস্থা বিসর্জন দিতে নারাজ হইয়াই ব্রাহ্মণ্য প্রধান হিন্দু সমাজের অস্পৃশ্ব হইয়াছিলেন । বিগত ২৫/৩০ বৎসরের মধ্যে আমাদিগের দেশের পণ্ডিতেরাই এসকল তথ্য প্রচার করিয়াছেন। আমার বাল্যকালে এসকল কথা কারও জান ছিল না, সুতরাং তখনকার লোকে সাহাদিগকে শুড়ি ভাবিয়াই সমাজের বাহিরে রাখিয়াছিল । হিন্দু সমাজ এখনও প্রকাগু ভাবে এই পুরাতন অবিচারের প্রায়ুশ্চিত্ত করে নাই । তবে আধুনিক শিক্ষার প্রভাবে একদিকে যেমন বর্ণাশ্রম ভাঙ্গিয়া পড়িতেছে, অন্যদিকে সেইরূপ সাহা, সুবর্ণবণিক এবং যোগী প্রভৃতি সম্প্রদায়ের অস্পৃশুভার মূল কারণ জানিয়া তথাকথিত উচ্চ শ্রেণীর হিন্দুরা এখন আর ইহাদিগকে আগেকার মতন হীন চক্ষে দেখেন না । ( २ ० ) সহরের হিন্দু সমাজে সাহ এবং একদিকে অন্তপক্ষে কায়স্থবৈদ্য প্রভৃতি তথাকথিত উচ্চ শ্রেণীর ভদ্রলোক দিগের মধ্যে বেশ একটা রেষারেধি ছিল। কিন্তু আশ্চর্য্যের কথা এই, হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে কোন প্রকারের কৌমগত ( communal ) বিবাদবিসম্বাদ ছিল না। জমী-জেরাৎ লইয়া যেমন হিন্দুতে হিন্দুতে সেইরূপ হিন্দু মুসলমানেও মাঝে মাঝে দাঙ্গা হাঙ্গামা হইত। কিন্তু ধৰ্ম্ম লইয়। উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে কখনও কোন ঝগড়াঝাটি হুইত না। শ্ৰীঃট সহরের, এবং বোধ হয় সমগ্র জেলার মধ্যেই, সহরতলীর মজুমদারের মুসলমান সমাজের অগ্রণী ছিলেন। আমার বাল্যকালে সৈয়দ বকৃত মজুমদার মহাশয় এই পরিবারের কৰ্ত্ত ছিলেন। ইনি অতি নিষ্ঠাবান পুরুষ ছিলেন । একাধিকবার "হজ" করিয়া হাঙ্গী উপাধি পাইয়াছিলেন । ধনে, মানে, বিদ্যায়, শীলতায় ইহারা সহরে অতিশয় সন্ত্রস্ত বলিয়া বিবেচিত হইতেন । ইহাদের বাড়ীতে সহরের মধ্যে সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ ইমারৎ ছিল। যেমন প্রাসাদ, সেইরূপ তার সাজসজ্জাও ছিল । সম্মুখে বিস্তীর্ণ ফুলের বাগান। ভিতরে বেলোয়ারী ঝাড়লণ্ঠন-শোভিত বৈঠকখান, ইংরেজী ফ্যাসানে সৃজিত। বড় বড় ইংরেজ রাজকৰ্ম্মচারীরা শ্ৰীহট্টে যাইলে ইহাদের আতিথ্য গ্রহণ করিতেন। তখন শ্ৰীহট্ট বাংলার ছোটলাটের এলাকাভুক্ত ছিল। লাটসাহেব সফরে যাইয়া শ্রীহট্টে উপস্থিত হইলে মজুমদার মহাশয়দের বাড়ীতে সমারোহ সহকারে অভার্থিত হইতেন । আসামে একট পৃথকৃ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করিবার প্রস্তাব হইলে তদানীন্তন বড় লাট লর্ড নর্থব্রুক ১৮৭৩ ইংরেজীতে শ্রীহট্টে গিয়াছিলেন। সে-সময়ে, আমার মনে আছে, মজুমদার সাহেবের খুব ঘটা করিয়া তাহাকে ভোজ দিয়াছিলেন। কিন্তু সেকালে শ্রীহট্টের হিন্দু ও মুসলমান সকলেই জানিত যে, মজুমদার মহাশয়দের পূর্বপুরুষের হিন্দু ছিলেন। হিন্দু সমাজে তাহাদের উপাধি ছিল দাস দস্তিদার। দস্তিদার নবাবী উপাধি। দাস কৌলিক পদবী । আমার মায়ের মাতামহ বংশ দাস ছিলেন। ইহাদেরও দস্তিদার উপাধি ছিল। হরমণি দস্তিদার নামে আমার এক মাতুল ছিলেন। তিনি সচরাচর গ্রামের বাড়ীতেই বাস করিতেন। সহরে আসিলে আমাদের বাসাঁতেই উঠিতেন। সে সময়ে প্রায়ই মজুমদার সাহেবদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করিতে যাইতেন । র্তাহারা নিজেদের জ্ঞাতি বলিধাই অভ্যর্থনা করিতেন। শ্ৰীহট্টের উপকণ্ঠেও এক ঘর দাস দস্তিদার ছিলেন। ঐহট্টের হিন্দু সমাজে ইহানের শ্রেষ্ঠ আসন ছিল।