পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] জীবনদোলা Vobνη বহুকাল বেহারেই ছিলেন। এথন কাজ থেকে বিশ্রাম নিয়ে দেশে রয়েছেন।” সঞ্জর দেখিল, চঞ্চলার মুখ আরক্ত ও কঠিন হইয়া উঠিয়াছে। ব্যাপার কি ঘটিল সে বুঝিল না। সে বলিল, “আপনি কি আমার উপর বিরক্ত হ’লেন ? এত অল্পদিনের আলাপে এত আত্মীয়তা পাতানে আমার বোধ হয় অন্যায় হচ্ছে। আমাকে ক্ষমা করবেন।” চঞ্চল সামলাইয়া লইয়া বলিল, “না, আপনার কোনো অস্কায় হয়নি। অন্তায় আর একজনের হয়েছিল, সে কথা আপনাকে বল্ব কিনা বুঝতে পারছি না। অপরের অন্যায়ের জন্য আপনার উপরই রাগ হয়েছিল, সেটা আমারই দোষ হয়েছে।” সঞ্জয় ধিস্মিত ও ব্যথিত হইয়া বলিল, “নিশ্চয় আমারও কোনো দোষ আছে যার জন্যে আপনি ষিরক্ত হয়েছেন। দয়া ক’রে সেটা কি আমাকে বলবেন?” অপরের দোষ ব’লে সেটাকে চাপা দিতে চেষ্টা করবেন না। চঞ্চল। বলিল, “আপনার বাবাকে আমি চিনি ।” সঞ্জয় চুপ করিয়া তাকাইয়া রহিল। চঞ্চল বলিতে লাগিল,“তিনি বহুকাল আমার অভিভাবক ব’লে পরিচিত ছিলেন। এখানে তিনিই আমাকে রেখে যান।” সঞ্জয় খানিকট ভীত ও খানিকট। আশান্বিত হইয়৷ জিজ্ঞাসা করিল, “তবে কি আপনি আমারই কোনো আত্মীয়া ?” চঞ্চল আরক্তমুখে বলিল, “হ্যা, অত্যন্ত নিকট আত্মীয়া । আমার অভিভাবকই যে আমার পিতা তা আমি পরে জানতে পারি।” আপনি হয়ত এখনও সেকথা জানেন না । সঞ্জয়ের মাথা ঘুরিতে লাগিল। একি রহস্ত ? সে কি স্বপ্ন দেখিতেছে ন জাগিয়া আছে ? চঞ্চলার অস্তিত্বের কথা তাহার পূজনীয় পিতার জীবনের এ রহস্তাবৃত অধ্যায়ের কথা সে ত কোনো দিন শোনে নাই । চঞ্চলার কথা মিথ্যা নয় ত ? কিন্তু কেন অকারণে বিশেষ করিয়া তাহার পিতার নামে সে এ মিথ্যা কথা রটাইবে ? পিতা কি বিবাহ করিয়া চঞ্চলার মাতাকে ত্যাগ করিয়াছিলেন না তার চেয়েও অস্কায় কিছু করিয়াছিলেন ? সঞ্চয় সাহল করিয়া কিছু জিজ্ঞাসা করিতে পারিল না। শুধু বলিল, “আমার পিতা আপনার ও আপনার মা’র উপর কতখানি অন্যায় করেছিলেন আমি জানি না। কিন্তু আপনার কথা সত্য হ’লে অস্কায় যে করেছেন সে নিশ্চয় । আমি পিতার সমস্ত অপরাধের জন্য আপনার ক্ষমা ভিক্ষা করছি। আমাকে ক্ষমা করবেন কি ?” চঞ্চলা কথা বলিল না । ভালবাসা ও আক্রোশের একটা দ্বন্দ্ব তাহার মনের ভিতর চলিতেছিল । এই সঞ্জয় আত্মীয় স্বজন বন্ধু আশ্রিত সকলের আদৃত, সকলের সম্মানাহ, হয়ত একদিন দেশের স্বপুত্র বলিয়া সকলের নিকট সমাদৃত হইবে ; অথচ ইহারই ভগিনী হইয়া সে আজ লোকের কাছে নিজের পরিচয় পৰ্য্যস্ত দিবার অধিকারী নয়। কেন, কেন ? সঞ্জয়েরই বা এ সমাদর লাভে কি নিজস্ব কৃতিত্ব আছে, আর তাহারই বা কি পাপে সে এমন বঞ্চিতা ? ইচ্ছা করিতেছিল এখনই সঞ্জয়কে এখান হইতে দূর করিয়া দেয়, লোক-সমক্ষে বলিয় বেড়ায় কেমন পিতার পুত্র সে। কিন্তু আবার সেই সঞ্জয়ের উপরই মনটা তাহার ঝুঁকিয়ু পড়িতেছিল। বয়সে সে চঞ্চলার চেয়ে বেশ বড়, তবু ছোট ভাইটির মত কেমন "দিদি বলিয়। একদিনের এই কয়েকটা মুহূর্তেই কত কাছে আসিয়া পড়িয়াছে। খুব শৈশবে সে মাকে চিনিত, ভালবাসিত, কিন্তু তারপর হইতে কই আর কোনো দিন আত্মীয়ের দেখা কি ভালবাসার কোন স্পর্শ সেত পায় নাই । আজ এতদিন পরে যাহাকে পাইল, সে ত সত্যই তাহার আত্মীয়, তাহার আপনার ভাই। তাহাকে সে কেমন করিয়া দূর করিয়া দিবে ? কোনো রকমে ইহাকে কি ধরিয়া রাখা যায় না ? এ সম্বন্ধ কি লোকচক্ষেও চিরস্থায়ী করা যায় না ? চঞ্চলার মনের ভিতরটা হাজার চিস্তায় কল্পনায় সম্ভব অসম্ভব কত কি ভাবের ধাক্কায় তোলপাড় করিতেছিল। সে অনেক কষ্টে বলিল, “আঞ্জ আমাকেও ক্ষমা করবেন, আমি বেশী কথা বলতে পারছি না। যেদিন ভাই বলে ডাকৃতে পারব কিম্বা সকল সম্পর্ক ভুলে যেতে পারব সেদিনই আবার আপনার সঙ্গে অনায়ালে সহজভাবে কথা বলব।” চঞ্চল। ঘরের ভিত্তর চলিয়া গেল। তাহার দুই চোখ