পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] বিবিধ প্রসঙ্গ—নির্বাচনাদি সম্বন্ধে কংগ্রেস কমিটির নিৰ্দ্ধারণ 85 পাশ্চাত্য দেশগুলি একে একে বুঝিতে সমর্থ হইয়াছে, এবং সেই সাধারণ স্বার্থ রক্ষার জন্তু তাহারা সম্প্রদায়ুগত মতভেদ ও শ্রেণীগত স্বার্থকে নিম্নস্থান দিয়া সাধারণহিত সাধনে ও সাধারণ স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করিয়াছে। সৰ্ব্বোপরি, তাহারা দেশের স্বাধীনতা রক্ষার বা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করিয়াছে । এই যে বোধ, মনের এই যে ভাব এবং এই যে তাহার বাহ প্রকাশ, তাহাকে সংক্ষেপে স্বজাতিকতা বা ন্যাশস্থালিজম যলা যাইতে পারে। এই স্বাঞ্জাতিকতার বিকার বশত: অনিষ্টও খুব হইয়াছে। স্বাঞ্জাতিকতার প্রভাবে অনেক দেশের লোক অন্য দেশের স্বাধীনতা হরণ করিয়াছে, উহার ধন লুণ্ঠন ও শোষণ করিয়া আদিতেছে, এবং উহার অধিবাসীদিগকে মনুষ্যত্বের উচ্চ আসন হইতে অবনমিত করিয়। দ্বিপদ পশুবিশেষে পরিণত করিয়াছে । কিন্তু স্বাঞ্জাতিকতা ধৰ্ম্মসঙ্গত উপায়ে কেবলমাত্র স্বদেশের স্বাধীনত রক্ষা বা পুনরুদ্ধার ও স্বদেশের হিত সাধনে ব্যাপৃত থাকিলে, তাহ দোষের বিষয় ত নয়ই, পরন্তু এইরূপ স্বজাতিকতা ব্যতিরেকে কোন দেশেরই মঙ্গল হইতে পারে না । আমাদের দেশেও স্বাঞ্জাতিকতা ব্যতিরেকে কখনও জাতীয় আত্মকর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হইতে পরিবে না। জাতীয় আত্মকর্তৃত্ব পূর্ণ স্বাধীনতার আকার ধারণ করিবে, কিম্বা শুধু অভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্বরাজের নামান্তর হইবে, তাহার বিচার এখানে করিব না। কেবল ইহা বলাই এখানে যথেষ্ট, যে, অভ্যস্তরীণ বিষয়ে কর্তৃত্ব লাভ করিতে হইলেও স্বাঞ্জাতিকতার প্রয়োজন। হিন্দু, মুসলমান, খৃষ্টিয়ান, বৌদ্ধ প্রভৃতির রাষ্ট্রীয় ও ঐহিক স্বার্থ আলাদা আলাদা কিনা, জমাদার ও রায়তের স্বর্থ আলাদা কিনা, ধনিক ও শ্রমিকের স্বাৰ্থ আলাদা কিনা, মহাজন ও খাতকের স্বার্থ আলাদা কিনা, তাহার বিচারও এখানে করিব না। স্বীকার করা যাকৃ, যে, এইসকল ভিন্ন ভিন্ন মানবসমষ্টির পৃথকৃ পৃথক্ স্বার্থ আছে। তাহা স্বীকার করিয়াও ইহাই বলিতে চাই, যে, এইসকল ংকীর্ণতর স্বার্থের উপরে দেশের সাধারণ স্বার্থ একটি আছে, যাহা রক্ষা করিতে হইলে সংকীর্ণতর স্বার্থগুলিকে দ্বিতীয় স্থান দিয়া সাধারণ স্বার্থের জন্য একতাবদ্ধ হইতে হইবে । কোনও সম্প্রদায় বা শ্রেণীর সংকীর্ণতর সব স্বার্থ৪ বিদেশীর প্রভূত্বে সম্পূর্ণরূপে সিদ্ধ হইতে পারে না। কারণ বিদেশী প্রভুর,আমাদের কোন একটা সমষ্টির স্বার্থের দিকে বরাবর দৃষ্টি না রাখিয়া কখনও এক সম্প্রদায় বা শ্রেণী, কখন বা অস্ত সম্প্রদায়ু যা শ্রেণীর দিকে ঝুঁকিয়া ভেদবুদ্ধি জাগাইয়া রাখাই নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আবশ্বক মনে করিবে, এবং বরাবর তাছাই করিয়া জাগিতেছে । t$=33 অতএব বিদেশীর প্রভুত্বের পরিবর্তে দেশী লোকদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করা সৰ্ব্বাগ্রে প্রয়োজন। দেশী ব্যবস্থাপক ও শাসকসমষ্টি কেবল মাত্র কোন এক বা দুই সম্প্রদায়ের লোক দ্বারা গঠিত না হইয়া, যোগ্যতা অনুসারে নানা সম্প্রদায়ের লোক দ্বারা যাহাতে গঠিত হয়, এরূপ উপায় অবলম্বন করা উচিত। ইংলগুে ধনিক ও শ্রমিকদের মধ্যে খুব ঝগড়া আছে, রোমান কাথলিক ও প্রটেষ্টাণ্টদের মধ্যে মতভেদ আছে, ভূস্বামী ও কৃষকদের স্বার্থভেদ আছে, কৃষক ও বিদেশ হইতে খাদ্য আমদানীকারী লোকদের মধ্যে স্বার্থের পার্থক্য আছে ; তাছাড়া, র্যাডিক্যাল, লিবার্যাল, শ্রমিক, টোরী প্রভৃতিদের রাজনৈতিক মতভেদ আছে । তথাপি তথাকার পালেমেণ্ট অর্থাৎ ব্যবস্থাপক সভায় এই সব ভিন্ন ডিন্ন সমষ্টির জন্য আলাদা আলাদা নির্দিষ্টসংখ্যক প্রতিনিধি নিৰ্ব্বাচনের ব্যবস্থা নাই, সুতরাং এক একটি সমষ্টির দ্বারা নিজেদের আলাদা প্রতিনিধিদের স্বতন্ত্র নিৰ্ব্বাচনের ব্যবস্থাও নাই ! এইজন্য সকল সমষ্টির সকল ভোটার বা নিৰ্ব্বাচককে একত্র ভোট দিয়া প্রতিনিধি নিৰ্ব্বাচন করিতে হয় । ফলে কখনও টোরী বা রক্ষণশীল, কখনও বা লিবার্যাল বা উদারনৈতিক মতের প্রতিনিধির সংখ্যা বেশী হয় ; পালেমেণ্টে কোন সমষ্টিরই সংখ্যাধিক্য ও প্রভুত্ব স্থায়ী হয় না। ইংলণ্ডের ইতিহাসে একবার শ্রমিক প্রতিনিধিদের সংখ্যাধিক্যও হইয়া গিয়াছে । অনেকে অনুমান করিতেছেন, যে, আগামী নির্বাচনে পালেমেণ্টে আবার শ্রমিকদের জিত হুইবে । ইংলণ্ডে প্রতিনিধি নিৰ্ব্বাচনের যে নিয়ম চলিত আছে, তাহাও নিখুত নহে ; কিন্তু তাহা আমাদের দেশের সাম্প্রদায়িক নিৰ্ব্বাচন-রীতি অপেক্ষা নিশ্চয়ই উৎকৃষ্ট । কারণ, তাহ ইংরেজদিগকে এই শিক্ষা দেয়, যে, তাহাঙ্গের একটি সৰ্ব্বোচ্চ সাধারণ স্বার্থ আছে, যাহ রক্ষিত না হইলে ইংলওীয় প্রটেষ্টাণ্ট, রোমান ক্যাথলিক, ভূস্বামী, কৃষক, শ্রমিক, ধনিক, প্রভূতি কাহারও মঙ্গল নাই। পক্ষাস্তরে, আমাদের দেশের প্রথায় গবষ্মেন্ট মুসলমানদিগকে, খুষ্টিয়ানদিগকে এবং অন্ত কাহাকেও কাহাকেও স্বতন্ত্র প্রতিনিধি নিৰ্ব্বাচনের অধিকার দিয়া এই শিক্ষা দিতেছেন, যে, দেশবাণী সকল লোকের কোন একটি সাধারণ সৰ্ব্বোচ্চ স্বাৰ্থ নাই, মুসলমানের স্বাৰ্থ আলাদা, খৃষ্টিয়ানের স্বার্থ আলাদা,ইত্যাদি। ফলে মুসলমান, খৃষ্টান, হিন্দু, প্রভৃতি সকলেই গোলাম হইয়া আছে, কাহারও দাসত্ব খুচিড়েছে | || অল্পসংখ্যক প্রতিনিধি নিৰ্ব্বাচনের প্রথা লড় মিণ্টোর আমলে প্রথম প্রবর্তিত হয়। উহার প্রবর্তনের আগে ঐ বড় লাটের তরফ হইতে কয়েকজন মুসলমান নেতাকে এই