পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

86 bo প্রবাসী—শ্রোবণ, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড মনের স্বধৰ্ম্মকে এতকাল উপেক্ষা ক’রে এসেছি, তাই আজ শিক্ষা একটা সমস্ত হ’য়ে উঠেছে। জ্ঞানের সম্বন্ধুে যে-কথা, ধৰ্ম্মবোধ-চর্চার সম্বন্ধে তা' আরো বেশি ক’রে খাটে। ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা কারখানায় তৈরি পদার্থ হ'লে তা আপনি আপনার প্রতিবাদ করে । তাকে যদি বাহ পদার্থ ক’রে তুলি তবে তা ব্যর্থ হবে, কেননা সেট আধ্যাত্মিক। ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের আত্মীয়তা সে তো ক্লাসে শেখাবার বিষয় নয়, বিশ্বের সৰ্ব্বত্র থেকেই যে তার উদ্বোধন। বন্ধুত্ব জিনিষটি কি তা জাম্বার জন্যে বৈজ্ঞানিক বা তত্বজ্ঞানীর দ্বারে যেতে হয় না, সহজ কথাটি এই যে, বন্ধু আনন্দ দেন। তেমনিই সহজ ক’রে উপনিবদের ঋষি বলেছেন,—এযহ্যেবানন্দয়াতি,—ইনিই আনন্দ দিয়ে থাকেন। বিশ্বে আমাদের আত্মা যা কিছুতেই আনন্দ পায় তার মধ্যে দিয়েই সেই পরমাত্মীয়ের প্রত্যক্ষ সম্বন্ধ । বিশ্বের মধ্যে যদি কোথাও আনন্দতত্ত্ব না থাকৃত তাহ’লে আপনার চরমসত্যকে সন্ধান করুবার ইচ্ছামাত্র থাকৃত না—তাহ’লে জড়নিয়মের চরকায় আমাদের জীবনের মুহূৰ্ত্তগুলি ঘুরে ঘুরে একট। লম্বা স্থতো কেটে চলত যে পৰ্য্যস্ত না মৃত্যু এসে হঠাৎ তাকে নিরর্থক বিচ্ছিন্ন ক’রে দিত। "নিয়মের কল চলেছে” ব’লে মানুষের আত্মা কোনো দিন গান গায়নি। সে গেয়েছে, এষহেবানন্দাতি-ইনিই আমাদের আনন্দ দেন। আনন্দের স্পর্শেই আত্মা আপন আত্মীয়ের সন্ধান পায়, বলে “এষোহস্য পরম আনন্দঃ” আমাতে এতে আনন্দের সম্বন্ধ,—আইনের সম্বন্ধ নয়। যে অংশে আমি জড়, যে অংশে আমি অনাত্ম্য, সেই অংশেই আমি আইনে চালিত ; যে অংশে আমি আত্ম্য, আমি স্বাধীন, সেই ংশে বিশ্বের মধ্যে আমি সেই সম্বন্ধের স্বাদ পাই যে-সম্বন্ধ আনন্দের। আমাদের চিত্তশক্তির অপূর্ণতাবশত সত্যের স্বগভীর অনিৰ্ব্বচনীয় রূপটি আমরা সৰ্ব্বত্র দেখতে পাইনে । পরম পুরুষ যিনি পরম এক তার বাণী আমরা সেখানেই পাই যেখানে আমাদের অভিজ্ঞতায় একের উপলব্ধি একান্ত ভাবে ঘটে। সেই একই অনিৰ্ব্বচনীয়। আমরা যাকে ভালোবালি আমার চৈতন্তের মধ্যে সে একটি পরিপূর্ণ এক। পথের লোক, যার হাজার হাজার নানাবিধ কত কীর সঙ্গে মিলিয়ে আছে, আমার কাছে যারা একরূপে স্পষ্ট প্রতীয়মান নয়, তারা কেউ কেউ হয়ত আমার পরিচিত, কেউ কেউ হয়ত আমার কাজে লাগে, কিন্তু তাদের চরম ঐক্য আমার কাছে উপলব্ধিগোচর নয় ব’লে তারা আমাদের আত্মাকে আহবান করে ন—অর্থাৎ আমার আত্ম। আমার কাছে যেমন সুনিশ্চিত স্বপ্রকাশ এক, তারা তেমন নয়। কিন্তু আমার বন্ধু এক সত্যরূপে আমার আপনারি মত, এমন কি আমার আপনার চেয়েও হস্পষ্ট ! এইজন্তেই ভগবানকে ভক্ত বলেছেন, বন্ধু। বন্ধু অনিৰ্ব্বচনীয়, বন্ধু আপনিই এক, আপনাতেই আপনি চরম। সত্যের সেই আত্ম-পৰ্য্যাপ্ত চরমতার রূপ আমরা সুন্দর পদার্থের মধ্যে দেথি । আমার চক্ষু হাজার হাজার জিনিষের উপর দিয়ে চলে যায়, কাউকে বিশেষভাবে স্বতন্ত্রভাবে স্বীকার করে না। পদ্মফুলকে করে। পদ্মফুল আপন রূপের ছন্দ্বে আপনারি মধ্যে সম্পূর্ণ একটি এককে প্রকাশ করছে। আমার কাছে সে বস্তু-নীহারিকার ংশ নয়, সে আপনিই চরম । সেখানে আমি সত্যের অনিৰ্ব্বচনীয় একরূপকে দেখতে পাই—তাকেই বলি সুন্দর,—সে আমার কাছে আপনাকে এক-স্বরূপে উপলব্ধ করায় আপন সত্তাতেই,—কোনো প্রয়োজনের প্রলোভনে নয়, কোনো উপকারের আশ্বাসে নয়। তখন আমার মধ্যে ষে-এককে জানি আমার বাইরে সেই এককে দেখতে পাই—সুন্দরের মধ্যে আত্মা আপনাকেই প্রসারিত দেখে, তাতেই আনন্দ। সত্যের এই অনিৰ্ব্বচনীয় একস্বরূপকে বিশুদ্ধভাবে, নিষ্কামভাবে দেখ বার জন্তে মনকে বিশুদ্ধ করবার প্রয়োজন আছে, কেনন। সত্যের স্বম্বর প্রকাশকে নিষ্কামভাবে অহৈতুকভাবে অনুভব করাতেই তার যথার্থ উপলব্ধি । এইজন্তেই ধৰ্ম্মসাধনার একদিকে চারিত্রের বিকাশ, আর একদিকে বোধশক্তির বিকাশ । জলাশয় খনন করা যেমন দরকার, জলধারা তার চেয়ে কম দরকার নয় । যিনি সত্য, তত্ত্বরূপে তিনি এক, বোধক্ষপে তিনি আনন্দ । সেই অসীম এককে জ্ঞানের দ্বারা জেনে শেব করা বায় না, আনন্দকে বোধের দ্বারা অনুভব করা যায়ু । তাই উপনিবদ বলেছেন –