পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] করিতেছে তাহাদের আত্মবলিদানের তুলনায় আমরা ভয় সভোরা কতটুকু করি তাহা ভাবি কি ? এই মূলগত বৈবম্য দূর করিতে যদি চেষ্টা করি তবেই বুঝা যাইবে আমরা কতটা সরল এবং খৃষ্টের ধৰ্ম্ম (দার্শনিক দিকেই হোক আর লোকহিতের দিকেই হোক) আমাদের জীবনে কতটা সত্য হইয়াছে। এই বৈবম্য নিবারণে সফল হইতে হইলে প্রথমেই এই উপায় এই ব্রত লইতে হইবে যে, আমাদের নিজের কাজের ভার অপরের ঘাড়ে না চাপাইয়া যেন নিজে করিতে চেষ্টা করি । শারীরিক নানা হেয় কার্যে অঙ্কের সাহায্য আমরা লইতে যতদিন দ্বিধ বোধ করিব না ততদিন কি দার্শনিক কি হিতাঙ্গুষ্ঠানিক কোন ধৰ্ম্মই আমাদের সত্য হইয়াছে বলিয়া আমি বিশ্বাস করিব না। অপরের সেবা যথাসম্ভব কম গ্রহণ করা, এবং যতটা বেশী সেব অপরকে করা যায় তাহার বিধান করা, সৰ্ব্বপেক্ষ কম দাবী করা ও সৰ্ব্বাপেক্ষা বেশী দান করা, ত্যাগ করা, ইহাই আমার কাছে সহজতম সরলতম নীতি । এই নীতিই আমাদের জীবনকে একটি স্বসঙ্গত তাৎপৰ্য্য দেয়। ইহা হইতে যে সুখ আসে তাহা সকল দ্বিধা বাধা ও সন্যেহকে ভাসাইয় দেয়। মাহুষের মানসিক বৃত্তি শিল্প বিজ্ঞানাদির স্থান লইয়া তোমার মনে যে-সমস্যা জাগিয়াছে তাহাও একদিন ঐ অনুপম তৃপ্তির প্লাবনে ভাসিয়া যাইবে। স্বতরাং ইহা আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, যতক্ষণ না আমরা আমাদের কাজে অপরকে উপকৃত হইতে দেখি ততক্ষণ আমরা সত্য সুখ ও তৃপ্তি অনুভব করিতে পারি না । ধtহাদের জন্য আমরা কাজ করিতেছি তাহারা ঘদি স্বর্থী হয় তাহা হইলে স্বথের উপর মুখ হইল। কিন্তু তাহার। যদি স্থস নাও বা করে তাহা হইলেও আমাদের সেবা করিয়া বাইতে হইবে। আমার আত্মতৃপ্তির ভিত্তিই যে ঐখানে—আমার কাজ অপরের কাছে নিরর্থক নয়, অকল্যাণকর নয় এই বিশ্বাসেই ষে আমার মুখ। শিল্প ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রের কাজ ছাড়িয়া মানুষ যদি এই সাধারণের সেবার কার্ধ্যে নামিয়া আইসে তাহা হইলে বুঝিতে হইবে তাহার সরল নৈতিক দায়ীত্ববোধ আপন৷ ঋষি টলষ্টয়ের একখানি চিঠি 8సి) – হইতেই তাহাকে টানিতেছে। গ্রন্থকার বই লেখেন, ছাপিতে ছাপাখানার মানুষদের খাটাইতে হয় ; স্বরজ্ঞ সঙ্গীত রচনা করেন, সেগুলির প্রচার করিতে কত ওস্তাদবাজনদারকে খাটান প্রয়োজন ; বৈজ্ঞানিক গবেষণা করিবেন তার যন্ত্রপাতি প্রস্তুত করিতে খাটিবে কত লোক ; চিত্রী ছবি আঁকিবেন তার জন্ত তুলি রঙ পট প্রস্তুত করিতে হাজার লোক ব্যস্ত । এইসব শিল্পবিজ্ঞানের কাজ মামুবের কাজে লাগিতে পারে আবার সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়–অনেক সময় অকল্যাণকরও হইতে পারে। স্বতরাং দেখা যাইতেছে আমার এক দিকে এইসব কাজ যাহার জন্য অপরকে খাটাইতে হয় অথচ যাহার মূল্য ৪ প্রয়োজনীয়তা সনোহ-জনক ; অন্যদিকে আর-এক শ্রেণীর কাজ যাহার জন্য কাহাকেও খাটাইতে হয় না অথচ যাহার সবগুলিই মামুষের উপকারে আসিবে। এমনি কত কাজ চারিদিকে প্রতি মুহূর্তে আমাদের টানিতেছে । ঐ দেখ কে একজন শ্রাস্ত হইয়া হাপাইতেছে —উহার বোঝাট খানিক বও ; গরীব চাষী রোগে অকৰ্ম্মণ্য, তার ক্ষেত্তের কাজ থানিক করিয়া দাও; দেখ, ঐ কে আহত, তার ক্ষতস্থান বাধিয়া দাও;—এমনি কত সহস্ৰ ছোটখাট সেবার আহবান চারিদিক হইতে আসিতেছে, সেগুলি করিতে কারো সাহায্য দরকার নাই। এক করিয়া যাও। তখনি যে সেবা করিল এবং যাহার সেবা করা হইল দুজনেই পরম তৃপ্তি পাইবে । নিজের হাতে গাছ পোতা, পশুদের সেবা করা, কুপ পরিশোধন করাএই-সব কাজে মামুষের উপকার যে হইবে তার সন্দেহ নাই সুতরাং এরকম কাজে প্রত্যেক খাটি মামুষের আগেই যাওয়া উচিত। অনেক কাজই সবার সেরা বলিয়া বড় গলায় প্রচার করা হয় কিন্তু বিচার করিলে দেখা যায় তাহার অনেকগুলাই ভূয়ো । ভবিষ্যৎদশী ঋধিদের স্থান আমাদের মাথার উপরে ; কিন্তু ঐ নামটায় ষথেষ্ট হুবিধা হয় ফেসব ধর্শ্বব্যবসায়ী ঋষিত্বের মুথোস পরিয়া ভাবে—তাহারা সত্যই ঋষি হইয়াছে বলিয়া তেমন লোকের অভাব এ জগতে নাই এবং তাহার বেশ ঋষির ব্যবসা চালাইতেছে। শিক্ষার বলে কেহ ঋষি হইতে পারে না ! ধাহার