পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা] সত্তর বৎসর III নিকটে মানত করিতাম ; তখনও হিন্দু-অাচারে যাহাঁকে অভক্ষ্য বলে তাহা ভক্ষণ করিতে কিঞ্চিম্মাত্রও কুষ্ঠিত হই নাই। আমার বাল্যকালে শ্ৰীহট্টে একটি মাত্র পাউরুটবিস্কুটের দোকান ছিল। এই দোকানেই আবার আট ও ময়দা পাওয়া যাইত। এই সময়ে আমাদের দূর সম্পর্কে এক ভাগিনেয় কলিকাতা হইতে দেশে ফিরিয়া গিয়া আমাদের শ্রীহটের বাসায় আসিয়া উঠেন। ইনি আমার অপেক্ষ বয়সে একটু বড় ছিলেন। বোধ হয় ইহার স্বজনের কলিকাতায় সামান্ত ব্যবসায় করিতেন। সেই উপলক্ষে তিনি কিছুদিন কলিকাতায় আসিয়াছিলেন। কলিকাতায় ইনি মুসলমানের পাউরুটিবিস্কুট যথেচ্ছ খাইয়াছিলেন। র্তাহার নিকটেই আমার ও আমাদের বাসার অন্যান্ত বালকদের এই অভক্ষ্য ভক্ষণে দীক্ষা লাভ হয়। খাতা-পত্র বাধিবার জন্য কাই দরকার হয়। এই কাই প্রস্তুত করিবার জন্য ময়দা কিনিবার অছিলায় আমরা সহরের পাউরুটবিস্কুটের দোকানে ঢুকিতাম। আর এক পয়সার ময়দা কিনিয়া হাতে ধরিষ্ঠ লোককে দেখাইতে দেখাইতে এই দোকান হইতে বাহির হইতাম ; কিন্তু জামার পকেটে অথবা ধুতির ভিত্তরে গরম গরম রুট-বিস্কুট লইয়া আসিতাম ; এবং অভিভাবকের রাত্রে গুইতে গেলে এগুলি বাহির করিয়া সকলে খাইতাম । এইরূপে শ্রীহটে থাকিতেই আমার জাত-বর্ণের বিচারের বন্ধন ভিতরে ভিতরে একেবারে ভাঙিয়া যায়। २> শ্ৰীহটে অনেক দিন হইতেই একটা ব্রাহ্মসমাজ স্থাপিত হইয়াছিল। কে ইহার স্থাপয়িত ঠিক বলিতে পারি না । বোধ হয় যেন কালিকাদাস দত্ত মহাশয় প্রথম যৌবনে ডেপুটী ম্যাজিষ্ট্রেট হইয়। শ্রীহট্টে গিয়াছিলেন। ইনি পরে কুচবেহারের দেওয়ান হন। যারা শ্রীহট্টের ব্রাহ্মসমাজ প্রথম স্থাপন করেন, বোধ হয় কালিকাদাস দত্ত মহাশয় তাহাদের মধ্যে একজন ছিলেন। কিন্তু আমি তাহাকে শ্রীহট্টে দেখিয়াছি বলিয়া মনে পড়ে না। শ্রীহট্টে আমার পঠদ্দশার সময়ে, কালিকাদাল দত্ত ছিলেন, আমিও সে-সভায় উপস্থিত ছিলাম । মহাশয়, মৈমনসিংহে বদলী হইয়া গিয়াছিলেন। মৈমনসিংহ ব্রাহ্মসমাজের ইতিহাসে তাহার উল্লেখ দেখিতে পাইয়াছি। সে ১৮৫৩-১৮৬৩ ইংরাজীর মধ্যে। আমি শ্ৰীহটে যাই ১৮৬৬ ইংরাজীতে। শ্রীহট্টের ব্রাহ্ম-সমাজের আমার প্রথম স্মৃতি—রাঞ্জা রামমোহন রায় সম্বন্ধে এক বক্তৃত হয় তাহার সঙ্গে জড়িত। এই বকৃত হয় নয়াসড়ক স্কুলে। আবছায়ার মত মনে পড়ে যেন বক্ত ছিলেন গৌরগোবিন্দ রায় মহাশয়। সে বক্তৃতা বুঝিবার আমার তখনও বয়স হয় নাই। বক্তৃতার কথাও কিছু মনে নাই। কেবল মাত্র এটুকু মনে আছে যে, সে বক্তৃতা শুনিতে অনেক লোক গিয়াইহার কিছুদিন পরে বোধ হয় ১৮৬৮ ৬৯ ইংরাজীতে, শ্রযুক্ত সীতানাথ দত্ত মহাশয় শ্রীহটে যাইয়া আমাদের ইস্কুলে আমি যে শ্রেণীতে পড়িতাম, সে শ্রেণীতেই ভৰ্ত্তি হ’ন। সীতানাথ-বাৰু এখন সীতানাথ তত্ত্বভূষণ ; সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের বর্তমান সভাপতি। সীতানাখ-বাবুর বাড়ী শ্রীহটে, আমাদেরই অঞ্চলে । ইহঁর এক পিতৃব্য কলিকাতায় বড়বাজারে কড়াই-পটিতে ব্যবসা করিতেন। সেই স্বত্রে শ্রীহটে যাইবার পূৰ্ব্বেই সীতানাথ কলিকাতায় আসিয়াছিলেন। তাহার জেঠতুত ভাই শ্ৰীনাথ দত্ত মহাশয় ব্রাহ্মসমাজে পূৰ্ব্ব হইতেই প্রবেশ করিয়াছিলেন। কেশবচন্দ্রের প্রথম শিষ্যদিগের মধ্যে একজন ছিলেন । শ্ৰীনাথ-বাবুর সংসর্গে সীতানাথ বালক হইলেও কলিকাতার ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে স্বল্পবিস্তর ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হইয়া পড়িয়াছিলেন। কলিকাতা হইতে শ্ৰহটে যাইয়া সীতানাথ আমার সহপাঠীদিগের মধ্যে কতকট নেতৃত্ব লাভ করেন। তাহার উদ্যোগে শ্রীহট্টে একটি ছাত্রসমাজ বা ছাত্রদিগের ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন পর্য্যস্ত শ্ৰীহট্টে ব্রাহ্ম সমাজের নিজের কোন বাড়ী হয় নাই। স্থানীয় বাংল৷ বিদ্যালয়ে ব্রাহ্মদিগের সামাজিক উপাসনা হইত। এইখানেই এই ছাত্র-সমাজেরও সাপ্তাহিক অধিবেশন হয় । ঐযুক্ত ডাক্তার সুন্দরীমোহন দাস আমার সহপাঠী ছিলেন। বোধ হয় ইহার কিছুদিন পূর্কেই তাহার পিতৃবিয়োগ হইয়াছিল। মুম্বীমোহনের যড় দ্বাদ জাহ্মসমাজ-ম্বেল