পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

68२ প্রবাসী—শ্রাবণ, ১ওe৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড গৌরবের যে আরও হানি করিয়া বলিতেছিল। অথচ এমনি করিয়া ক্রমশ পিছন হইতে পিছনে চলিয়া যাইতে তাহার আত্মসন্মানেও লাগিতেছিল। যে শঙ্কর এত আশা করিয়া তাহাকে আনিয়াছিল সেই শঙ্করের চোখেও যে ইহাতে সে ছোট হইরা বাইতেছে, তাহার সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা দলিত করিয়া ফেলিতেছে-এই লজ্জাও ভিতরে ভিতরে কয়দিন ধরিয়া তাহাঁকে খোচা দিতেছিল। সে ত সংসারকে ত্যাগ করিয়া আসিয়াছে, সংসারও আপনার প্রয়োজনের গণ্ডীর ভিতর হইতে তাহাকে অতি শৈশবেই ছাটিয়া দিয়াছে, তবে সংসারের তুচ্ছ আচারবিচারকে বাহিরে টানিয়া আনিয়া বাহিরকে কেন সে প্রাচীর তুলিয়া আড়াল করিতে চায় ? গঙ্গাজল তামকঙ্গলের বন্ধনীতে বাধা পড়িলে ঘর পদে পরে তাহার পবিত্রতা বঁাচাইয়া চলে, কিন্তু বাহিরের চলন্ত স্রোতস্বিনী অপরের অঙ্গের সকল অশুচিত ও অপবিত্রত বুক পাতিয়া লইয়া তাহদেরই পবিত্র করিয়া দেয় ; ইহাতে তাহার জগুচি হইবার কোনো ভয় নাই । গৌরীকে যে আপনার ব্যক্তিত্বের আড়ালে ফেলিতে বসিয়াছিল আর যাহার চোখ দিয় তাহার নিজের ভাইও তাহার বিচার করিতে কুরু করিয়াছিল সেই চঞ্চল ও সঞ্জয় দুইজন মাহুবকেই আজ নিষ্ঠুর বিধাতার হাতে ক্রীড়নকের মত অসহায় দেখিয়া গৌরী যেন অকস্মাৎ তাহাজের অনেক উর্ধে উঠিয়া দাড়াইল । সঞ্জয়ের দিকে তাকাইয়া আপনা হইতেই গৌরী বলিল, “সঞ্জয়বাবু, আমরা রুগীকে দিরে রুগী দেখাই না। আপনার ষে-রকম চেহারা দেখছি তাতে আজ ত ঘর থেকেই আপনার বেরোনো উচিত ছিল না। ছোড়দাই আজ ব্যাণ্ডেজ ইত্যাদি দেখবে এখন ; আপনি এখানে বসে একটু জিরোনদেখি ; মাসিমাকে ব’লে আপনার তদ্বিরের একটা ব্যবস্থা ক’রে আসি ” গৌরীকে এমন সপ্রতিভভাবে এতগুলা কথা বলিতে দেখিলে অশুদিন হইলে সঞ্জয় বিশেষ বিস্মিতই হইত ; কিছ জাজ চঞ্চলার বদলে গৌরীকে এখানে দেখিয়৷ সে এতটা নিশ্চিন্তু হইয়াছিল যে, তাহার কথার নূতনত্বের क्ट्रिक नखन्न जियांग्न थबगरे उाश इच्च मारे । ध्रुणात्र আসন্ন উপস্থিতির ভয় হইতে মুক্তি পাইয়া সে তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিতেছিল। খানিক পরে গৌরী নিজের হাতেই একগেলাস ঘোলের সরবৎ ও এক রেকাৰী আম ও সন্দেশ লইয়া ঘরে ঢুকিল। সঞ্জয়ের সম্মুখে সেগুলা নামাইয়া রাখিয়া বলিল, “নিন, এই ক'টা খেয়ে ফেলুন। খেটে খেটে নিজেদের প্রাণগুলোই যদি বার ক’রে ফেলেন তবে বিশ্বের যে কাজগুলো ঘাড়ে করেছেন সেগুলো করবেন কি ক’রে বলুন দেখি ! সত্যি, পৃথিবীতে যে মানুষদের সবচেয়ে নিজের যত্ন করা উচিত, তারাই যে কেন সকলের চেয়ে নিজেকে তাচ্ছিল্য করে আমি ভেবে পাই না ।” এতক্ষণে সঞ্জয় হাসিয়া বলিল, “যত্ন করাই যাদের কাজ তারা এইরকম বোকা লোকদেরই বেছে বেছে বেশী যত্ন করেন ব’লে ওতে আমাদের একটা মস্ত লাভও হয় ।” শঙ্কর বলিল, “গৌরী, তোর ঘোলের সরবতের বাহাঙ্কুরী অাছে ; সঞ্জয়ের প্রলয়-গম্ভীর মুখে আজ যে হাসি ফোটাতে পারে সে কম লোক নয়। আমি আজ যখন ওর বাড়ীতে গেলুম তখন ওর মুখ দেখে মনে হয়েছিল বোধহয় কাল রাত্রের ঝড়ে একসঙ্গে ওর স্ত্রীপুত্ৰকল্প সব বাড়ীচাপা পড়ে মারা গেছে। সেই রাগে ও পারে ত স্বয়ং বিধাতাকেই ধ’রে গলা টিপে দেয় ।” সঞ্জয় আর একবার হাসিবার চেষ্টা করিল, কিন্তু সে হাসিট। তাহার গাম্ভীর্ষ্যের চেয়েও গৌরীকে বেশী দমাইয়া দিল। গৌরীর মনে পড়িয়া গেল কতকাল আগের দেখা তাহার পিতার মুখের সেই মান হাসি। সিন্ধুর লোহা পর লইয়। মীর সঙ্গে ঝগড়া করিয়া সে যখন বাবার কাছে রায় লইতে গিয়াছিল, তখন তিনি এমনি হাসি হাসিয়াই গৌরীকে জুলাইতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। গৌরী বুঝিল, সঞ্জয়ের দুঃখটা নিতান্ত একটা চোখের নেশার রোমান্সের ব্যাপার নয় ; ইহাতে গভীর কিছু আছে। পিতার বেদনাক্লিষ্ট মুখের হাসি দেখিয় তাহার বুকটা যেমন টন্‌টন করিয়া উঠিয়াছিল তেমনি করিয়াই জাজ তাহার বুকটা হঠাৎ ব্যথায় কাপিয়া উঠিল, এতকাল পরে ঠিক সেই তীতে আঘাত পাইয়।