পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©bre প্রবাসী—শ্রোবণ, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড পিতোমবাৰু গৃহিনীর মুখে এরূপ কিংকৰ্ত্তব্যবিমূঢ় ভাব দেখিয়া বুঝিলেন, সময় হইয়াছে। এইবার তাহার আত্মপ্রতিষ্ঠা পূর্ণ হইবে। তিনি মেধেীর হস্ত হইতে চটিজোড়া লইয়া পায়ে দিয়া গম্ভীরকণ্ঠে বলিলেন, “রে নারী, স্বষ্টিতে তোমার স্থান কোথায় তাহা বুৰিয়াছ কি ? তাহা আমার পদতলে। আইস আপন প্রকৃতি দত্ত স্থান পূর্ণ কর। অন্যথা হইবার নহে, তুমি আমার দাসী, আমার জাজ্ঞ পালনেই তোমার জীবনের সার্থকতা।” স্বভাষিণী প্রথম একটু অবাক হইয়া গিয়াছিলেন। হঠাৎ তাহার মনে হইল স্বামী সম্ভবতঃ কোন “অ্যামেচার* থিয়েটারের পালায় নামিয়াছেন ; এ তাহারই "রিহাস লি” হইতেছে। র্তাহার মেজাজটাও আজ একটু ভালই ছিল, তাই তিনি ঈষৎ হাস্য করিয়া বলিলেন, “আ মরণ, রস করবার ইচ্ছে ত সঙ্গে চাকর বাকর নিয়ে বেরিয়েছ কেন ? চল ঐ ঘরে, তোমার পাল শুনিগে ।” পিতোমবাবু বলিলেন, “প্রয়ে, এ যে-সে অভিনয় নহে। ইহা জীবন-নাট্য। তুমি আমার দাসী-চিরকালের —আমার আঞ্জ, পালনেই তোমার পূর্ণতা ও স্থিতি ।” গিল্প নিজের ভুল বুঝিলেন । বলিলেন, “ও, তাই না কি ? আচ্ছা দেখা যাবে কে কার মুনিব।” পিতোম বাবু একটা ঘরের দরজার দিকে অঙ্গুলী নির্দেশ করিয়া বলিলেন, " যাও।” গিরি বলিলেন, “তুমি যাও না।” পিতোমবাবু হঠাৎ বিকট চীৎকার করিয়া বলিলেন, “যাও বলটি এক্ষুনি । ” গিন্নি ভাবিলেন হয়ত স্বামী আবার নেশা-টেশ করিয়াছেন তাই আত্ম-রক্ষার্থে ঘরে গিয়া প্রবেশ করিলেন ও ভিতর হইতে অর্গল বদ্ধ করিলেন । একাধারে এরূপ দুইটি জয়ের আনন্দে পিতোমৰাৰু বিভোর হইয়া ছাদে গিয়া পাইচারী করিতে লাগিলেন। ঘণ্টা খানেক পরে আফিসের কাপড় পরিবার জন্ত ঘরে চুক্তিতে গিয়া দেখিলেন, দ্বার বদ্ধ। বহু চীৎকার করিলেন, বহু ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করিলেন, কিন্তু কোন ফল হইল ন। অগত্য, বাসার কাপড়ে ও বাজারের খাবার খাইয়া পিতোমবাবু আফিসে গেলেন। জয়ের মধ্যেও পরাজয়ের ভেজাল পাইয়। আনন্ট। তাহার কিছু কমিয়া গেল । বৈকালে গৃহে ফিরিয়া দেখিলেন বাড়ীতে কেহ নাই, শুধু মেধে । সে একট। তালা ও চাবাঁ তাহার হাতে দিয়া বলিল, “ম ঠাকরুণ বাপের বাড়ী গেছেন, আমায় ছুটি দিয়েছেন, আমি চম্বুম ” পিতোমবাবু বলিলেন, “সে কি ? অার খাওয়া-দাওয়া, তার কি ব্যবস্থা ?” মেধে বলিল, “বাড়ীতে চাল-ডাল মুন-তেল কিছুই নেই ; মা ঠাকরুণ টাকা পয়সাও কিছু দিয়ে যান নি।” পিতোমবাবু পকেটেহাত দিয়া দেথিলেন মাত্র সাড়ে তিন আন পয়সা আছে । তিনি মেধাকে বলিলেন, "তুমি যাও।” মেধে চলিয়া গেল। উপরে উঠিয়া পিতোম বাবু দেখিলেন, ঘরে বাক্সপ্যাটর। কিছুই নাই—ময় বিছানাপত্র আয়ন চিরুণী সব লইয়া গিরি শুধু ঘরে থালি তক্তপোষট ও একখানা চেয়ার মাত্র রাখিয়া গিয়াছেন। ভাড়ারে ঢুকিয়া দেখিলেন একটা টিনে কয়েকটা আদ। আর শুকূন লস্ক। রহিয়াছে, আর রহিয়াছে এক ঝুড়ি ঘুটে । পিতোমবাবু হতাশ হইয়া সাড়ে তিন আনা পয়সা-পকেটে রাস্তায় বাহির হইয় পড়িলেন । র্তাহার শ্বশুরালয় ঠাকুর-পুকুর ; ট্রামে ও গাড়ীতে অনেক মাইল ও অনেক পয়সার মামল। দারুণ ক্ষুধা, ক্ষুন্নিবৃত্তি করিতেই পয়সা কটা ফুরাইয়া গেল ; তারপর পিতোমবাবু যুথভ্রষ্ট কোন উষ্ট্রের ন্যায় শ্বশুরালয়ের পথে দেহটাকে টানিয়া লইয়া অগ্রসর হইলেন । পথে বহুবার বিশ্রামের জন্ত ও জল খাইবার জন্ম বসিয়া ও শেষের দিকে একট। আলু-বোঝাই গরুর গাড়ীর চালকের কৃপায় তাহার উপর চড়িয়া রান্ত্রি ২টার সময় পিতোমবাৰু শ্বশুরালয়ে পৌছিলেন। স্বয়ং শ্বশুরমহাশয় তাহাকে দরজা খুলিয়া আলো ধরিয়া শয়নাগারের দিকে আগাইয়া দিলেন । শুধু একবার তিনি অম্বুযোগের স্বরে বলিলেন, “ছিঃ বাবাঞ্জি, অন্ততঃ ছেলেটার মুখের দিকে চেয়েও তোমার ওসৰ নেশা-টেশ করা উচিত নয়।" পিতোমবাৰু ক্লাস্তি ও অবসাদের তাড়নায় তাহার কথার প্রতিবাদ ৪ করিতে পাঞ্জিলেন না। অম্বখb