পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৭৬ প্রবাসী- ভাদে, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড মাথায় সোলার বড়ো টুপী, কারুর কানে মাত্রাঙ্গী কানফুল, কেউ বা তিলক-ধারণ করেছে—সোল-স্থাটের নীচে এগুলি অদ্ভূত দেখালেও মোটের উপর এদের বেশ চটপটে স্থশিয়ার ব’লে বোধ হ’ল। ঐযুক্ত রামস্বামী মাদ্রাজ হাইকোটের একজন প্রথিতনাম উকিল। ভদ্রলোকের স্বল্প পরিচয় পেয়ে বড়ো পীত হ'লুম আমরা। অতি মুছভাষী লোক, মোটেই নিজেকে কবির সামনে জাহির করতে চান না, অথচ সৰ্ব্বদাই তার অতিথিদের সেবার জন্ত হাজির ৷ কবির সঙ্গে নানান রকমের লোক সদা সৰ্ব্বদা দেখা করতে আসছে—ইনি বিশেষ সঙ্কুচিত—এদিকে কবিকে বিরক্ত যাতে না কর। হয় আবার ওদিকে দর্শনার্থী লোকেরা যাতে মনে না করে ঘে কবি তার অতিথি ব’লে তিনি কবির সঙ্গে একত্র অবস্থিতির সুযোগ পেয়ে তাকে একান্ত অধিকার ক’রে আছেন। আমরা ভালো দিনেই ঐযুক্ত রামস্বামীর অতিথি হয়েছিলুম। তার বাড়ীতে এক বিবাহ-উৎসব ছিল, তার এক পিস্তুতে ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে । বিয়ে হয়ে গিয়েছে তিন দিন পূৰ্ব্বে ; বৃহস্পতিবার যেদিন সকালে আমরা পৌছুলুম সেটা হচ্ছে বিবাহ-উংসবের চতুর্থ এবং শেষ দিন—চার দিন ধ’রে আমোদ অনুষ্ঠান, কুটুম্ব ভোজন ইত্যাদি চলে। একটু বিশ্রাম ক’রে, আমাদের কার্য্য ঠিক ক’রে নিলুম। কবিকে স্বস্থভাবে বিশ্রাম করতে দেখে আমরা ঠিক ক’রলুম যে, কাছেই কপালেশ্বর মহাদেবের মন্দির আছে, প্রায় ৩৪ শ’ বছরের পুরাতন মন্দির, সেইটাই দেখে আসা যাবে । নীচে নেমে, তামিল ব্রাহ্মণদের বিয়ের একটা অনুষ্ঠান দেখার অপ্রত্যাশিত হযোগ ঘটল । বিয়ে-বাড়ী, সদরের ফটকে নহবংখান তৈরী হয়েছে ; ফটকের দুপাশে কলার কঁদিওয়াল। দুটি কলাগাছ, আমপাত দিয়ে তোরণ রচনা হয়েছে। প্রশস্ত হাতার মধ্যে সামিয়ানা টাড়িয়ে কালে কি কাঠের চেয়ার দিয়ে অতিথিদের বসবার জন্য সভামণ্ডপ তৈরী রয়েছে। এই সভামগুপের মধ্যে বাড়ীর বরাদার সামনে সালকাঠের দুই থামের উপর আড়কাঠ থেকে মোটা গোহার শিকলে ক’রে এক রঙান পদ্ম-আঁকা কাঠের পিঁড়ির দোলন টাঙানো হচ্ছে। শুনলুম ষে বর-কনেকে এই দোলনায় বসিয়ে দোলনে হবে, আর সঙ্গে সঙ্গে একটী অতি স্বন্দর স্ত্রী-আচার হবে —ক’নের সখী-সম্পৰ্কীয়ারা গান গাইবে । তেলুগু কানারী তামিল মালয়াগীদের মধ্যে মেয়েদের অবরোধ-প্রথা নেই। দক্ষিণ ভারতে এটী সব-চেয়ে বেশী ক'রে আমাদের চোখে লাগে—মেয়ের দিব্যি উন্নত মস্তকে স্বাভাবিক ভাবে চলা ফেরা ক’রে বেড়াচ্ছে । তাদের দেখে মনে হয় যে, তারা জানে যে, তাদের উপযুক্ত সম্মান স্বজাতীয় এবং বিজাতীয় পুরুবদের কাছ থেকে তারা পাবেই। এটা দেখে—যেদেশ বহুস্থলে বৰ্ব্বর ধৰ্ম্মান্ধতার দ্বার। অমুমোদিত নারীনিগ্রহের আধিক্যহেতু সভ্য নামের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবার অবস্থায় এসেছে, বিশেব ক’রে সেই বাংল! দেশ থেকে এসে মনে বিশেব বিশ্বযু-পুলকের সঞ্চার করে। বাইরে বর ক’নের দোলবার দোলার আশেপাশে চেয়ারে কবি-দর্শনেচ্ছু অনেক অনিমন্ত্রিত ভদ্রলোক ব’সে আছেন। মথন দেখলুম যে তাদের থাকা সত্ত্বেও এই দোলার অনুষ্ঠfনট হবে, তখন আমরা বাড়ীর একটী ছেলেকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলুম যে, আমরা ও অনুষ্ঠানটি দেখতে পারি কি না । ছেলেটীর চমৎকার বুদ্ধিশ্ৰীমণ্ডিত মুখ-তামিল ব্রাহ্মণদের মধ্যে এরকম উজ্জল-ম্বন্দর মূৰ্ত্তি খুবই দেখতে পাওয়া যায় । সে বললে—“নিশ্চয়ই—এদেশে গোশ। (অর্থাৎ পরদ ) নেই।” ইতিমধ্যে বুটকে দেখলুম। আঠারো উনিশ বছরের ছেলে, মৃণার মুখশ্ৰী, ধনীর ঘরের ছেলে, বি-এ পড়ছে। লুঙ্গীর মতন ক’রে একখানা জরীপাড় সাদা মাদ্রাঞ্জী ধুতি পর, গায়ে একট। টুইল শার্ট, দুহাতে নিরেট সোনার মোট পাত কেটে তৈরী বাল, গলায় সোনার হার, মাথাটি উড়ে-কামানে ; ঝুটি ক’রে খোপার আকারে চুল বাধা, তাতে একছড়া বেলফুলের মালা জাড়ানো আছে । একপাল ছোটো-ছোটে। মেয়ে আর ছেলে-এরা তার শালী আর শালা হবে, তাকে নিয়ে টানাটানি ক’বৃছে, আর সঙ্গজ হাস্তের সঙ্গে বর তাদের চিরন্তন অধিকার এই উৎপাত উপদ্রব সহ করছে। ঠিক বাঙল দেশেরই মতন। আমরা চেয়ারে ব’সলুম, এমন সময়ে কটি ছেলে নিমন্বিত অনিমন্বিত সমস্ত লোকের সামনে একটা থাঙ্গায় ক’রে কয়েক গোছ আস্ত পান,