পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

୩ ୩b* দেবের শক্তি রুদ্রাণী, কালের জায়৷ কালী । কাল শব্দের স্ত্রীলিঙ্গে ঈপ প্রত্যয় যোগ করিয়া কালী শব্দ সাধিত হয়। কালী আদ্য শক্তি। রামকৃষ্ণ পরমহংস স্থির জলের সহিত ব্রহ্মের ও সেই জল বায়ু-সংযোগে চঞ্চল হইলে শক্তির সহিত উপমা করিতেন। কালীর কৃষ্ণবর্ণের উপমায় কহিতেন, সমুদ্রের জন্ম দূর হইতে কৃষ্ণ অথবা নীলবর্ণ দেখায়, নিকটে গিয়। সেই জল তাতে করিলে কোন বর্ণই থাকে ল । এই দেবীকে ভক্তগণ, কবিগণ শু্যামা বলেন । অলঙ্কার শাস্ত্রে শ্বামী অর্থে সুন্দরী—তম্বী, শিখরিদশনা, পক্কবিশ্বধরোষ্ঠী, তপ্তকাঞ্চনবৰ্ণাভ সা শু্যাম । আদ্য শক্তিকে শ্বামী বলিতে কৃষ্ণ বুঝিতে হইবে। মার্কণ্ডেয় পুরাণে কালীর বর্ণনা আছে। ঐ পুরাণের মতে কোপে দেবীর কৃষ্ণবর্ণ হইয়াছে-- ঙ্কোপেন চাস্ত বদনং মণীবৰ্ণমভূৎ —কোপে ইহার বদন মসীবর্ণ হইল । পুরাণকার কালীকে শক্তির অপর মূৰ্ত্তি না বলিয়া তাহাকে অম্বিকার ললাটফলকোস্তুবা কৃষ্ণবর্ণ দেবী কল্পনা করিয়াছেন। অম্বিকা ক্রুদ্ধ হইলে তাহার দ্রুকুট-কুটিল ললাট হইতে কালী করালবদনা নিস্ত্রশস্ত হইলেন ; মতান্তরে, সতী দক্ষযজ্ঞে গমনকালে কালীমূৰ্ত্তি ধারণ করিয়াছিলেন। তখনও তিনি কুপিতা । অথচ কুমারসম্ভব কাব্যে দেখিতে পাই,কবি পাৰ্ব্বতী ও কালীকে দুই সম্পূর্ণ স্বতন্তু দেবী নির্দেশ করিয়াছেন। শিব যখন বরের উপযুক্ত বেশে সজ্জিত হইয়া, তরবারি-মধ্যে আপনার প্রতিবিম্ব দর্শন করিয়া, গৌরীর পাণিগ্রহণার্থ শৈলরাজের প্রাসাদ অভিমুখে যাত্রা করিলেন সে-সময় সপ্তমাতৃকাগণ মহাদেবের অনুগমন করিলেন এবং তাহাদের পশ্চাতে নৃমুণ্ডমালিনী কালী গমন করিতেছিলেন— BBBB BYD BBBBBBB BB BBBBBBS BBB S সে-সময় সখীগণবেষ্টিত পাৰ্ব্বতী বধুবেশে পিত্রালয়ে বিরাজ করিতেছেন । এই কাণী যে মহাদেবের শক্তি অথবা রুদ্রাণী সে-কথার কোন উল্লেখ নাই, কিন্তু স্পষ্ট দেখা যাইতেছে যে, কালিদাসের কল্পনায় কালী ও অনুঢ়া পাৰ্ব্বতী -দুই স্বতন্তু দেবী, অধিকন্তু এই কালী রুদ্রাণী হইলে এই সময় প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড বরের অনুগমন সম্ভব মনে হয় না, কারণ কোন পত্নীর পক্ষে সপত্নী হওয়া মুখের সংবাদ নয় এবং স্বামীর সঙ্গে দ্বিতীয় বিবাহ-স্থলে উপস্থিত হওয়া অসম্ভব। কালিদাসের কালে তন্ত্র শাস্ত্র প্রচলিত হইয়াছিল কি না এবং তাহার বিস্তুত প্রসার হইয়াছিল কি না সে-কথা নিঃসংশয়ে নির্দেশ করা যায় না, কিন্তু ভবভূতির মালতীমাধব নাটকে তান্ত্রিক মতের ছায়া দেখিতে পাওয় যায়। আকাশযানগামিনী ভীষণে - জুলবেশ কপালকুণ্ডলা যোগিনী, রঙ্গস্থলে প্রবেশ করিয়া শক্তিনাথ শিবের জয় উচ্চারণ করিতেছেন । অনেক, কিন্তু ঐ শাস্ত্র সমস্ত ভারতবর্ষে ছড়াইয়া পড়ে নাই। নেপালে ও মিথিলায় অনেকগুলি পাওয়া যায়, বাকি কতকগুলি দেশান্তরে প্রচলিত। পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতে তান্ত্রিক মতের বিস্তুত প্রচলন হয় নাই। অষ্টবিধ আকারে কালীমুক্তির পূজাবিধি আছে, তাহার অধিক সংখ্যক পূজার প্রথায় ভয়ের সঞ্চার হয়। দুষ্কৰ্ম্মকারাদিগেরও উপাস ও ইষ্টদেবী কাল্পী । সেকালে বাংলা দেশে ডাকাতের দশ ডাকাতে-কাণার পূজা করিত ! নরহত্যাকারী ঠগের হিন্দুমুসলমান নিৰ্ব্বিশেষে কালীর উপাসক হইত। এই পূজাপদ্ধতি ত্রাসজনিত ও ইহার উদ্দেশ্য আত্মরক্ষী । তন্ত্রশাস্ত্র গ্রন্থের সংখ্যা অপর পক্ষে কালী-উপাসকের মধ্যে অনেক পরম প্রেমিক ভক্ত ও মহাপুরুষের নাম পাওয়া যায়। ইহারা অষ্ঠ দেবতার আশ্রয় গ্রহণ না করিয়া কেন কার্ণার উপাসনা করেন এই প্রশ্নের উত্তরে কোন যুক্তি আছে কি না তাহা বিবেচনা করা উচিত । কালী বলিতেই পটের কালিকা মূৰ্ত্তি অথবা কোন মন্দিরের কালীমূৰ্ত্তি মনে পড়ে। এই মুর্তি মানস-চক্ষুর সম্মুখ হইতে অপসারিত না করিলে আদ্য শক্তির গুঢ় অর্থ ধারণ করা অসম্ভব। পটকারের পটের ছবি কিংবা কুম্ভকারের গঠিত অথবা ভাস্করের খোদিত মূৰ্ত্তি দেখিয়া কোন দেবতার অবয়ব কল্পনা করিলে ভ্রান্তি হয়। এদেশে বাহারা দেবদেবীর মূৰ্ত্তি চিত্র করে বা নিৰ্ম্মাণ করে তাহাদের কলাবিদ্যা ও ললিতকলার জ্ঞান যৎসামান্ত, আদর্শ পূরণ এবং কল্পনা নাই বলিলে অত্যুক্তি হয় না। দেবদেবী মূৰ্ত্তি যে অনেক সময় দেখিতে বীভৎস হয় সে অপরাধ তাহাদের নয়, চিত্রকর বা সংগঠনকারীর কলা-কুশলের