পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

緣 রস ও রুচি ঐ ব্রজল্লভ হাজরা রুচি অনুসারে রসের আয়োজন হয়, ন, রসের অনুগামী রুচির আবির্ভাব হয় ? দুই কথাই সত্য। রস ও রুচি দুইটিরই পৃথক শক্তি আছে। উভয়ই পরস্পরকে বলিতে পারে— —“leave your power to draw And I shall have no power to follow you.” রসনার্থ রসের ব্যাপার স্বতন্ত্র—অনেকটা স্বভাব ও অভ্যাসের অধীন। স্বভাব ও অভ্যাস অনুসারে রসবিশেষে রুচি হয়। যে রস লইয়া মানুষের মন ও হৃদয় চালিত ও দলিত হয় তাহারও নিয়ম অনেকট। সেইরূপ—তবে রুচির লীল বিশেষ বিভিন্ন । নানা বিষয়ে জন্তুদের মধ্যেও রুচির লীলা দেখা যায়। সাধারণত জীবনের অহিতকর কোনও বিষয়ে তাহাদের রুচি দেখা যায় না। মাতুব জন্তুদিগকে তাহাদের স্বভাববিরুদ্ধ নানা সাজে সাজাইতে পারে, নানা কাজে লাগাইতে পারে, তাহাদিগকে নানা খাদ্য খাওয়াইতে পারে। কিন্তু যখন তাহারা স্বভাবত জগতে স্বাধীন ভাবে নগ্ন দেহে বিচরণ করে তখন তাহার স্ব-স্ব জীবনের ও স্বাস্থ্যের উপযোগী বিষয়ই উপভোগ করে । তাহাদের পরিচ্ছদের স্বষ্টি বা রুচির বিকার নাই। প্রকৃতি-পুরীতে পশুপক্ষিগণ সঙ্গীতধ্বনি করে কিন্তু তাহদের রাগ-রাগিণী বা তালমানের বিকৃতবিদ্যাস বা অপব্যবহার নাই। তাহার অভাবে ক্লেশ পায়, কাদে ; আর আনন্দে মুখ পায়, হাসে। আহার দাম্পত্য-প্রণয় বা অপত্যস্নেহে অনভিজ্ঞ নয় ! সকল বিষয়েই তাহাদের নিরূপিত স্থান ও নিয়মিত কাল আছে। তবে তাহার লেখাপড়া বা শিল্প জানে না। তাহাদের বর্ণমালা, বা মাত্রামিলন নাই। ছন্দ বা কাব্যশাস্ত্র নাই । কোনও ভাবের বা ভঙ্গীর বিবরণ বা ছবি সময়ান্তরে অপরের নিকট ধরিতে পারে না। মামুষের সেই শক্তি ও সুবিধা আছে। - মানুষ নানা ভাষায়, নানা ছন্দে, নানা রঙ্গে, নানা রসে মিশাইয়া জগতের নানা ব্যাপারের কথা লিখিতে পড়িতে ও আঁকিতে শিথিয়াছে। মানুষের প্রায় সকল ব্যাপারেই—আহারে পরিচ্ছদে, গতিবিবিতে, কাজ কৰ্ম্মে, দীক্ষাশিক্ষায় রুচির লীলা লক্ষিত হয়। রস ও রুচির আলোচনায় উৎকৃষ্ট নিরুষ্ট্রের তুলনা হয়, মঙ্গল-অমঙ্গলের বিবেচনা হয়, সাধু-অসাধু বিচার হয়। রুচিতেই ব্যক্তিমাত্রের চরিত্রের পরিচয় পাওয়া যায়। কত ভাবুক মনের ভাব প্রকাশ করিতে কত ক্ষমতার পরিচয় দিয়াছেন । ঈশ্বরের প্রেমে মগ্ন হইয়া কত মহাত্ম। ভাষার অলৌকিক সৌন্দর্য উদঘাটিত করিয়াছেন । মনের ভাবের আবেগে অথবা পরের শিক্ষা ও উপকারের জন্ত, মনে চিন্তার স্রোত পরিচালন ও হৃদয়ে ভাবের সঞ্চার ও ভাষার বিস্তার করিবার জন্ত কত পুরাণ স্মৃতি ও কাব্যশাস্ত্র রচনা করিয়াছেন । বিবিধ গ্রন্থে বিবিধ রসের সমাবেশ পূৰ্ব্বক হৃদয় আকর্ষণ ও শিক্ষার ব্যবস্থা করিয়াছেন। সংসার ও সমাজের চিত্র প্রদর্শন উদ্দেশ্বেও বহু নাটক ও চরিতবলীর রচনা হইয়াছে। আজকাল অসংখ্য উপন্যাস ও অভাবনীয় গল্প ও কথার অজস্র বর্ষণ হইতেছে। লেখার লালিত্য ও লেখকের নিপুণতার নিতানব পরিচয় পাওয়া যাইতেছে। সুলভ গ্রন্থ ও সাময়িকু পত্রিকার অন্ত নাই। কবিতার ও ছড়ার ছড়াছড়ি। কিন্তু অধিক স্থলেই সন্ধুদ্দেশু বা সুরুচির লেশমাত্র দেখিতে পাওয়া যায় না । সেগুলি পাঠ করিলে সনাতন বৈষ্ণবধৰ্ম্মের অপভ্রংশ আধুনিক বৈষ্ণব-বৈষ্ণবীর রীতি-নীতির কথা মনে পড়িয়া যায়। লেখা-পড়ার বহু বিস্তায় হইয়াছে ; নানা নুতন তথ্যের আবিষ্কার হইয়াছে। কিন্তু ভাবের সাধুতা, ভাষার সৌন্দর্য্য এবং কথার মুরুচি বড় বিরল হইয়। পড়িয়াছে। সুন্দর সামগ্ৰী যতই বৃদ্ধি পায় ততই মুখের কথা। যখন পড়িবার লোক ছিল না তখনও বহুগ্ৰন্থ রচিত হইয়াছে।