পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] আমি একজন ডাক্তার, কি হয়েছে দেখি তোমার ছেলের।” খুকী বলিল, “সারারাত চ্যাচাচ্ছে, দিনে রুগীর সেবা কন্দ্র আবার রাত্তিরে ছেলে চেঁচালে কি বাচা যায় ?” ভূষণ-বাবু গৃহিণীকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, “ওগে, তোমার তোতাপাখী মেয়েটি যে তোমার সব গোপন কথা প্রকাশ ক’রে দিলে!” গৃহিণী বলিলেন, “ওটা অমনি বাদর, আমি যা বল্ব যা কর্ব সব ওর করা চাই ।” হৈমবর্তী বলিলেন, “এইসব কচি কচি ছেলে-পিলে নিয়ে আপনি রুগীর সেবা করেন কি ক’রে ? ও কাজটার জন্ত কৰ্ত্তার কাছে ছুটি নিতে পারেন না!” গৃহিণী হাসিয়া বলিলেন, “তা আর কি ক’রে হয় ! তাহলে একেবারে গোড়াতেই ছুটি নিতে হত। এ রোগ ত আর ওর আজকের নয়। আমার বিয়ের আগের থেকেই এসব চলছে। জেনেশুনেই ত ঘরে এসেছিলাম। কেবল বড় খুকী হবার সময় থেকে ওঁর কাছে কথা নিয়েছিলাম যে, বাড়ীতে সংক্রামক রূগী আনতে পাবেন না। দেখবেন এখন, আমার রুগীদের বেশীর ভাগের রোগই বাদ্ধকের রোগ। ওদের সেব মানে বাতের মালিশ, ফোমেণ্ট, দুধবার্লি জোগানো আর বুড়োবয়সের প্রগাপ শোনা।” গৌরী বলিল, “ঘরের কাজকৰ্ম্ম কে করে ?” গৃহিণী বলিলেন, “একটা মেথর আর মেথরাণী আছে, তারাই মোটামুটি করে। উপরি তদারকট আমাকেই করতে হয়। বড়পুকীটা ইস্কুল যাবার আগে ভাত ডাল ফোটানোটা একটু দেখে ততক্ষণে আমি ওদিক সেরে আসি। দুপুরে আবার ছেলেপিলেদের সেলাই ফোড়াই আছে, তার উপর ওদেরও চিঠিটা এটা সেটা নিয়ে লেগে থাকৃতে হয়। সেই হয়েছে বিপদ ।” সঞ্জর বলিল, “আপনার সেই কাজের সহায় হবার জন্তেই ইনি এসেছেন। উনি এখানে থাকবেন না বটে, কারণ ওঁর আবার কলেজে পড়া, নাইট ইস্কুল পড়ানো ইত্যাদি নানা কাজ আছে। তবু রুগীদের চিঠিপত্র লেখা পড়, এদিক-ওদিক একটু দেখা-শুনা করা এগুলো উনি ক’য়ে যেতে পারবেন নিজের সুবিধা-মজ।” জীবনদোল সঞ্জয় তাহার রকম দেখিয়া হাসিয়া বলিল, “এই যে چہرا গৌরী বলিল, “আমি সেলাই-ফোড়াইও ੰ জানি, দরকার হ’লে তাও আমাকে দিয়ে মাঝে-মাঝে করিয়ে নেবেন ।” গৃহিণী বলিলেন, “এত কাজের উপর আপনি আবার অত কাজ কখন করবেন ভাই ? আমাদের মত শুধু ঐ নিয়ে থাকৃলেই ত আপনার চলবে না। আমাদের ভবিষ্যৎ বাধা হ’য়ে গেছে, এখন কেবল কলের মত একভাবে কাজ ক’রে যাওয়া, ভাবনা চিন্তা সমস্তা মীমাংস ইত্যাদি নিয়ে আমাদের আর মাথা ঘামাতে হয় না, কাজেই কাজটা সহজ হ’য়ে গেছে । আপনার ছেলে মানুষ, আপনাদের সামনে সমস্ত ভবিষ্যৎ প’ড়ে আছে, তার জষ্ঠে সকল দিকে প্রস্তুত হ’তে নানা ব্যবস্থা করতেও ত আপনাদের সময় চাই।" গৌরী বলিল, “আমার ভবিষ্যৎও অন্ত ভাবে একেবারে কচি বয়সেই বাধা হ’য়ে গেছে,তার জন্তে বড় বয়সে ভাববার আর আমার কোনো দরকার নেই। বাকি দিনগুলো সমস্তই এখন কোনো ফাক না রেখে কাজের কলে নিৰ্ব্বিচারে ফেলে দেওয়া যায়।” ভূষণগৃহিণী বিস্মিত হইয় গৌরীর মুখের দিকে চাহিলেন। তিনি গৌরীকে কুমারী মনে করিয়াছিলেন ; ভাল করিয়৷ তাকাইয়। সে ধে বিধবা এ সন্দেহটা তাহার মনে আসিল । মনটা ব্যথা পাইল, এভাবে কথাটা না তুলিলেই হইত। বলিলেন, “আপনার বয়স এত কচি, কত বড় বড় কাজ আপনার পথ চেয়ে পড়ে আছে। আপনার মাথা খাটিয়ে কত নুতন নুতন কাজের স্বষ্টি করবেন। আমরা ছেলেপিলে নিয়ে বাধা কাজেই সুবিধে পাই । তা বলে কলের চাপে নিজেকে পিষে বাধা কাজ বার করুবার সময় এখনও আপনার হয়নি।” গেীরী বলিল, “কিন্তু কাজের মানুষ হওয়ার ও ত একট। সাধনা আছে। নিজেকে আঃে-পৃষ্ঠে যদি কাজ দিয়ে ন৷ বেঁধে ফেলুতে পারি, যদি খেয়াল-খুলীর ফঁাকে মনটাকে অন্তপথে ভেসে যেতে দিই তাহ’লে সাধনায় যে বাধা পড়বে, মনট। অলস হয়ে উঠবে, নিজেকে আপনাদের মত বড় ক’রে গড়ে তুল্ব কি ক’রে ?” সঞ্জয় বলিল, “মনুষ্যধৰ্ম্মকে বলি দিয়ে যে-সাধন, তাকে কি সাধনা বলে ? মামুষের দেহ-মনকে আনন্দ দেওয়া