পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

brసిe অবকাশ দেওয়াকে যদি আলস্ত বলত তাহলে পৃথিবীতে প্রতি পদে পদে এত আনন্দ এত অবকাশের উৎস বিধাতা খুলে রাখতেন না।” হৈমবতী বলিলেন, “গেী আমার একেবারে তপস্বিনী গৌরী হয়ে উঠতে চায়। দেখ ছ ন মা, এই যে এদের এমন সেবা আর কৰ্ম্মের সংসায় এর ভিতরও থোক:খুৰ্কীদের সঙ্গে খেলার খেলুড়ী হ’য়ে মাকে যোগ দিতে হচ্ছে, হাসি-গল্পে আনন্দে সময় কাটাতে হচ্ছে । সেটা কি সাধনা থেকে চাতি ? পৃথিবীর আনন্দ পৃথিবীর হাসি খেলা, বিশ্রাম সৌন্দৰ্য্য এই সব কিছুকেই যদি ছেটে ফেলে দাও তাহলে বুঝবে কি করে কোন মানুষটা দুঃখী আর কোন মানুষটা মুখী ? বিধাতা আমাদের জন্তে চারিদিকে যে আনন্দের ভাণ্ডার খুলে রেখেছেন তার স্বাদটুকু গ্রহণ করতেও যদি ভয় পাও,তাহ’লে হতভাগ্য বঞ্চিত মানুষগুলোর বাথ যে কি তা জানবে কি উপায়ে ? বড় রকম ত্যাগ করতে হলে সকল আনন্দের বন্ধনকেই স্বীকার করতে হবে না হ’লে যে আনন্দ কখনও নিজের জীবনে ভোগ করনি, সেট ত্যাগের কোনে অর্থ হয় না। সন্তানকে কোলে একদিন পেয়েছিলুম বলেই তাকে যেদিন হারালাম সেদিন মাতৃহীনের দুঃখ খানিকটা বুঝলাম। জীবনে পরের ছেলের জন্তে যেটুকু করতে পেরেছি, সেটুকু নিজের ছেলেকে ভালবাসতে তাকে নিয়ে ধূলা-খেলা করতে শিখেছিলাম ব’লেই।” ছোট খুকী আসিয়া বলিল, “মাগো, বাইরের মানুষদের চা খেতে বলবে না ? খালি বকর বকর কাছ কেন সবাই? দিদি কতো–ক্ষণ চায়ের জল ক’রে বসে আছে ।” খুকীর মা বলিলেন, “সত্যি ত, খুকী আমাকে আসল কাজের কথাটা মনে করিয়ে দিলে। আপনার কোন সকালে বেরিয়েছেন, এখনও মুখে জল পড়েনি, সেটা আমার আগে ভাবা উচিত ছিল।” মায়ের ডাকে দশ এগার বছরের মেয়ে বড় খুকী টুেতে করিয়া চ পেয়াল পিরিজ ইত্যাদি আনিয়া হাজির করিল। গৌরী চ) খায় না, কিন্তু ইহাদের তাহা সে বলিতে পারিল না। কারণ সে বেশ বুঝিল যে,যদি সে খাইবে না বলে তবেই এই শত অসুবিধার ভিতরও ইহারা তাহার জন্ত অন্ত প্রবাসী—অশ্বিন, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড আয়োজনে লাগিয়া যাইবেন। গৌরী হৈমবতীকে বিক্ষিত করিয়া সকলের সঙ্গে চা রুটি ও মাখন খাইল । সাধনা ও ত্যাগের প্রসঙ্গটা চাপা পড়িয়া গেল। গৌরী যে কঠিন একটা পণ করিয়াছে তাঙ্গ তাহার এই দুই চার কথাতেই সঞ্জয় বুঝিল । এই কঠিন পণের ভিতর হইতে এই তপস্যার দুর্ভেদ্য বৰ্ম্মের অন্তরাল হইতেই তাহার হৃদয়টিকে উন্মুক্ত করিয়া দেখিতে তাই যেন সঞ্জয়ের রোথ চাপিয়া গেল। হৃদয়-আবেগের উৎসাহ যাহার দুরন্ত বন্যার মত ছুটিয়া বাহির হইতে না চায় সে কখনও এমন গুরুভার শিলার তলে হৃদয়ের মুখ চাপিয়া ধরিতে চায় না। প্রাণ যে তাহার নিপীড়িত দেহ-পিঞ্জরের বন্ধনের ভিতর দুরন্ত হইয়া উঠিয়াছে, সে যে মুক্ত স্বাধীন রূপে পূর্ণ আলোকের মাঝখানে বাচিয়া উঠিতে চায় তাহা আর লুকাইয়া রাখা পাছে না যায় তাই বুঝি এত বাধাবাধি এত বাড়াবাড়ি ! সেই ভালো, সঞ্জয় ভাবিল সহজে সস্তায় যে নাদীর মনকে পাওয়া যায় তাহার মূল্য দেশের মানুষ কোনো দিন বুঝে নাই, সেই কি বুঝিবে ? এই তপস্বিনীর তপস্তার বিরুদ্ধে তপস্যা করির সাধনাকে সাধনা দিয়া জয় করিয়া তাহাকে নারীর মনের দুয়ার খুলাইতে হইবে, তবেই সে নারীর মূল্য নারীর মর্যাদা বুঝিবে। ফিরিবার সময় হইল। ভূষণবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, “ইনি যদি এখানে কাজের জন্ত আসেন,তাহ’লে এর এখানে আসা-যাওয়ার ত একটা ব্যবস্থা করতে হবে।” ভূষণবাবুর গৃহিণী শৈবলিনী বলিলেন, “আমাদের গাড়ীপান্ধীও নেই, লোকজনও নেই। কেই বা নিয়ে আসবে যাবে ? আমার যদি সময় থাকৃত ত আমি সঙ্গে ক’রে আনতাম।” গৌরী হাসিয়া বলিল, “আপনি যদি আমার তদারক করতে বসেন তাহলে ত আমি আপনার মস্ত সহায় হ’লাম দেখছি।” সঞ্জয় বলিল, “সস্তায় একটা পালকীর ব্যবস্থা করলে श्झ नः ।” গৌরী বলিল, “তাতেও ত আবার পয়সা খরচ আছে। কাজে যখন নেমেছি, তখন পায়ে হঁটিতে হবে এটা ধ’রে নিয়েই বেরোনো দরকার।”