৫ম সংখ্য। ] , প্রেমের সৌন্দৰ্য্য অংশকেই কবিত্বের দ্বারা উজ্জ্বল করে তুলে তারমনটাকে লজ্জা দেয়, আর কেউ বা ওর মনটাকেই বড় করে তুলে কামিনীকাঞ্চন ত্যাগের বিধান দিয়ে থাকে ; ও ফুটে কেবল দুই ভিন্ন প্রকৃতির লোকের ভিন্ন রকম প্রণালী। একটাকেই যদি নিন্দে কর তবে অন্তটাকেও রেয়াৎ করলে চলবে না। গোর। নাঃ আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলুম। তোমার অবস্থা তেমন খারাপ হয় নি! এখনো যখন ফিলজফি তোমার মাথায় খেলচে তখন নিৰ্ভয়ে তুমি লাভ করতে পার কিন্তু সময় থাকতে নিজেকে সাম্লে নিয়ো হিতৈষী বন্ধুদের এই অনুরোধ | বিনয় ব্যস্ত হইয়া কহিল,—আঃ তুমি কি পাগল হয়েচ? আমার আবার লাভ ! তবে এ কথা আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে, পরেশ বাবুদের আমি যেটুকু দেখেচি এবং ওঁদের সম্বন্ধে যা শুনেছি তাতে ওঁদের প্রতি আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা হয়েচে বোধ করি তাই ওঁদের ঘরের ভিতরকার জীবন যাত্রাট কি রকম সেটা জানবার জন্তে আমার একটা আকর্ষণ হয়েছিল । গোরা। উত্তম কথা, সেই আকর্ষণটাই সাম্লে চলতে হবে । ওঁদের সম্বন্ধে প্রাণীবৃত্তান্তের অধ্যায়ট না হয় অনাবিষ্কৃতই রইল। বিশেষত ওঁরা হলেন শিকারী প্রাণী, ওঁদের ভিতরকার ব্যাপার জানতে গিয়ে শেষকালে এতদূর পৰ্য্যন্ত ভিতরে যেতে পার যে তোমার টিকিট পর্য্যন্ত দেখবার জো থাকৃবে না। বিনয়। দেখ, তোমারু একটা দোষ আছে। তুমি মনে কর যত কিছু শক্তি ঈশ্বর কেবল একলা তোমাকেই দিয়েচেন, আর আমরা সবাই ফুৰ্ব্বল প্রাণী । কথাটা গোরাকে হঠাৎ যেন নুতন করিয়া ঠেকিল। সে উৎসাহবেগে বিনয়ের পিঠে এক চাপড় মারিয়া কহিল— ঠিক বলেচ-ঐটে আমার দোষ—আমার মস্ত দোষ।” বিনয় । উঃ, ওর চেয়েও তোমার আর একটা মস্ত দোষ আছে। অন্ত লোকের শিল্পীড়ার উপরে কতটা আঘাত সয় তার ওজনবোধ তোমার একেবারেই নেই। এমন সময় গোরার বড় বৈমাত্র ভাই মহিম তাহার গোরা। g २>{{ পরিপুষ্ট শরীর লইয়া স্থাপাইতে স্থাপাইতে উপরে আলিয়া কহিলেন—গোরা ! e গোরা তাড়াতাড়ি চৌকি ছাড়িয়া উঠিয়া দাড়াইয়৷ কহিল—“আজ্ঞে !” t মহিম । দেখতে এলেম বর্ষার জলধরপটল আমাদের ছাতের উপরে গর্জন করতে নেমেচে কি না । আজ ব্যাপারখানা কি ? ইংরেজকে বুঝি এতক্ষণে ভারতসমুদ্রের অদ্ধেকটা পথ পার করে দিরেচ ? ইংরেজের বিশেষ কোনো লোকসান দেখচিনে, কিন্তু নীচের ঘরে মাথাধরে বড় বেী পড়ে আছে সিংহনাদে তারই যা অসুবিধে হচ্চে । এই বলিয়া মহিম নীচে চলিয়া গেলেন। গোর লজ্জা পাইয়া দাড়াইয়৷ রহিল—লজ্জার সঙ্গে ভিতরে একটু রাগও জলিতে লাগিল, তাহ নিজের বা অন্তের পরে ঠিক বলা যায় না। একটু পরে সে ধীরে ধীরে যেন আপন মনে কহিল—“সব বিষয়েই, যতটা দরকার, আমি তার চেয়ে অনেক বেশি জোর দিয়ে ফেলি, সেটা যে অন্তের পক্ষে কতটা অসহ্য তা আমার ঠিক মনে থাকে না।” বিনয় গৌরের কাছে আসিয়া সস্নেহে তার হাত ধরিল। | ס\ গোর ও বিনয় ছাত ইষ্টতে নামিয়া যাইবার উপক্রম করিতেছে এমন সময় গোরার মা উপরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। বিনয় তাহার পায়ের ধূলা লইয়া প্রণাম করিল। গোরার মা আনন্দময়ীকে দেখিলে গোরার মা বলিয়া মনে হয় না। তিনি ছিপছিপে পাৎল, আটর্সাট শক্ত ; চুল যদি বা কিছু কিছু পাকিয়া থাকে বাহির হইতে দেখা যায় না ; হঠাৎ দেখিলে বোধ হয় তাহার বয়স চল্লিশেরও কম। মুখের বেড় অত্যন্ত মুকুমার, নাকের ঠোঁটের চিবুকের ললাটের রেখা কে যেন যত্নে কুঁদিয়া কাটিয়াছে ; শরীরের সমস্তই বাহুল্যবর্জিত,--মুখে একটি পরিষ্কার ও সতেজ বুদ্ধির ভাব সৰ্ব্বদাই প্রকাশ পাইতেছে। রং খামবর্ণ, গোরার রঙের সঙ্গে তাহার কোনোই তুলনা হয় না। তাছাকে দেখিবামাত্রই একটা জিনিষ সকলের চোখে পড়ে— তিনি শাড়ির সঙ্গে শেমিজ পরিয়া থাকেন। আমরা যে সময়ের কথা বলিতেছি তখনকার দিনে মেয়েদের জামা বা শেমিজ পর যদিও নব্য দলে প্রচলিত হইতে আরম্ভ হইয়াছে