বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা । ] রেবত ভিক্ষর কোপজলিত চক্ষু দেখিয়া ও গম্ভীরনালী আদেশে ভীত হইয়া সে দ্বারে করাঘাত করিয়া ভিক্ষা চাহিল—‘কে আছ গো, ওগো দ্বারে ভিক্ষার্থী আসিয়াছে, কিছু ভিক্ষ দেও ’ ইহা শুনিয়া তাহারই দাসী চঞ্চরী ভিক্ষণপাত্রে গোধূম ও বরাটিকা লইয়া যখন দ্বারে উপস্থিত হইল, তখন অচিরে সে দাসীর দ্বারা জানিত হইবে মনে করিয়া উৎফুল্ল হইয়া তাহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। ইহাতে চঞ্চরী ঝঙ্কার দিয়া বলিয়া উঠিল, “পাষণ্ডী শ্রমণ, আমার মুখমধ্যে তোমার ধৰ্ম্মকথা লিখিত নাই ; শীঘ্র ভিক্ষা লইয়া প্রস্থান কর।” নৃসোম দাসীর কথায় কিছুমাত্র ক্রোধ না করিয়া করুণস্বরে বলিল, 'চঞ্চরী, তোমার প্রভুকে চিনিতে পারিতেছ না ? আমি বাসস্তিকাবল্লভ নৃসোম। ওগো বাসস্তিক মাবিরহে দুঃখিত না হৰ্ষিত ? হায় হায়, আমি আজ কতদিন গৃহছাড়া, স্বাধীনতালব্ধ বাসস্তিকা না জানি কি অনর্থ সংঘটন করিতেছে । চঞ্চরী, ওগো চঞ্চরী, তুমি দ্বার ছাড়, আমি একবার বাসস্তিকাকে দেখিব।” ইহা শুনিয়া মহাবিস্ময়ভাণকৃতু চঞ্চর বলিল, আ মর দগ্ধানন, যম তোমাকে ভুলিয়া আছে কেন ? বেশ ত’ দেখিতেছি শ্রমণের, ইচ্ছ। কিন্তু অন্তঃপুর ভ্রমণের । বা রে রসিক, শীঘ্র অপস্মত হও, পাষণ্ডী, নতুবা সম্মার্জনীসাহায্যে রসিকতা-রোগ ঝাড়িয়া দিব ।’ দ্বারে গণ্ডগোল শুনিয়া ‘হলা চঞ্চরী, কিসের গোল’ বলিতে বলিতে বাসস্তিক সেই স্থানে উপস্থিত হইল। নৃসোম স্ত্রীকে দেখিয়া একেবারে অধৈৰ্য্য হইয়। রুদৎপ্রকম্পকণ্ঠে বাসস্তিকা, বাসস্তি, প্রেয়সি, আমায় রক্ষা কর ওগো রক্ষা কর’ বলিতে বলিতে চঞ্চরীকে ঠেলিয়া গিয়া চুম্বকাকৃষ্ট লৌহখণ্ডের মত স্ত্রীর কণ্ঠলগ্ন হইল। বাসস্তিকা ও চঞ্চরী মহা চীৎকার করিয়া উঠিল। তাহাদের চীৎকার শব্দ, নৃসোমের করুণ বিলাপ এবং রেবত ভিক্ষুর তর্জনশ্রুত বছলোক সেই স্থলে আকৃষ্ট হইল এবং একজন শ্রমণকে একজন পুরস্ত্রীর কণ্ঠলগ্ন দেখিয় তাহারা প্রমণবেশী নৃসোমকে উত্তম মধ্যম মুষ্টিযোগ দিয়া গৃহবহিষ্কৃত कब्रिम्न बित्न । e -> মণিমঞ্জীর । -૭૧ রেবত ভিক্ষু যুক্তপাণি হইয়া বাসস্তিকা ও সমবেত জন মণ্ডলীকে বলিল, “আমার এই ধৰ্ম্মভ্রাতাটি উন্মাদরোগগ্ৰস্ত। ইহার ব্যাধির প্রধান লক্ষণ হইতেছে, সুন্দরীমাত্রকেই পত্নীবোধে আলিঙ্গন করা । ইহাকে ব্যাধিমুক্ত মনে করিয়া আজ ভিক্ষায় আনিয়া অপরাধী হইয়াছি। ক্ষমা করিয়েন। দয়া করিয়া বাতুলের আচার অতিক্রমে কিছু মনে করবেন না ।” o মুষ্ট্যাঘাতজর্জরিত নৃসোম অবাক স্তব্ধ হইল ; সমবেতজনগণ নিষ্ঠুর পরিংসে তাহাকে উত্যক্ত করিয়া তুলিল এবং বাসস্তিক তাহার কাতর দৃষ্টি অগ্রাহ করিয়া মহা বিরক্তিভরে গৃহদ্বার রুদ্ধ করিয়া দিল । তখন সে চিন্তা করিতে লাগিল, “আমি কি বিষম উন্মাদ । দেশ কাল পাত্র এই তিন বিষয়েরই ভ্রান্ত ধারণা এমন আশ্চৰ্য্যরূপে মস্তিষ্কে মুদ্রিত হইয়া গিয়াছে যে আমি কিছুতেই তাহা নিরাকৃত করিতে পারিতেছি না । আমি আর ভুল করিব না । আমি আর ভুল করিব না। মস্তিক্ষে যেমন চিন্তাই আমুক না কেন, অতঃপর আমি দৃঢ়ভাবে স্মরণ রাখিব যে আমি শ্রমণ ধৰ্ম্মবংশ।’ বিহারে প্রত্যাগত হইয়। রেবত ভিক্ষু ধৰ্ম্মপালের নিকটে অভিযোগ করিল, ‘শ্রমাচাৰ্য্য ধম্মবংশ স্ত্রী স্পর্শ করিয়াছেন।” ধৰ্ম্মপালের কোপজলিত চক্ষু, বুজনিৰ্ঘোষবৎ কণ্ঠস্বর দেখিয়া শুনিয়া সভাগৃহ স্তব্ধ হইল। নৃসোম মৃতকল্প হইল । ধৰ্ম্মপাল বলিলেন, “স্থবিরপুত্ৰক ধৰ্ম্মবংশ, আপনার প্রতি মার যথেষ্ট অত্যাচার করিতেছে — ‘অনিক্সাবে কাসাবং যে বখং পরিদহেস্পতি । আপেতো দমসচেচন ন সে কাসাবমরহতি ॥ কুন্তুপমং কয়মিমং বিদিত্বা নগরূপমং চিত্তমিদং ঠপেত্নী । যোজেথ মরিং পঞ,ঞায়ুধেন জিতঞ্চ রকৃথে আনিবেসনে সিয়া । নেব দেবো ন গন্ধবো ন মারো সহ ব্ৰক্ষুণ। জিতং অপজিতং কয়িরা তথারূপসস জওনে ॥ চত্তারি ঠানানি নরো পমত্তে আপজ্জতী পরদারীপ সেবী। অপুঞএলাভং ন নিকামসেযা নিঙ্গং ততীয়ং নিরয়ং চতুতথং ॥ চক্‌খুন সংঘরে সাধু, সাধু সোতেদ সংবরে । ঘাণেন সংঘরে সাধু, সাধু জিবৃহীয় সংঘরে । আজ হইতে মাসাবধিকাল তুমি শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যাসন দ্বারা আত্মসংযম ও অনুতাপ কর। নির্জনে উপবাসত্রত অবলম্বন করিয়া মারকে নির্জিত কর।” এই আদেশ শুনিয়া নৃলোম ধৰ্ম্মপালের পদধারণ করিয়া