পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —“কেউ না? এই যে বল্লেন, দুই হাতে গরাদ ধরে রোগা লম্বা কে দাঁড়িয়েছিল।”

 —“ওটা দৃষ্টিবিভ্রম। ঘুমাবার আগে চেয়ারটা দরজার কাছে টেনে নিয়ে গড়গড়টা তার উপর রেখেছিলাম। মাথায় কল্কি চড়ানোই ছিল, আর নলটা ছিল তার গলায় মালার মত জড়ানো। হঠাৎ চোখ চেয়েছিলাম, চোখে ছিল ঘুমের জড়তা, বাধা ছিল পাতলা নেটের মশারির, আর কাৎ হয়ে শুয়ে থাকায় দৃষ্টি-কোণে অস্বাভাবিকতা ছিল,— তাই সবশুদ্ধ মিলে গড়গড়াটাই ঐ আকার ধারণ করেছিল। বুঝতে পেরে মনে মনে না হেসে থাকতে পারলাম না।”

 জ্জোরবাবু অতিশয় ক্ষুণ্ণ হইলেন, ভূত দেখিবার প্রতিশ্রুতি দিয়া তাঁহাকে শেষে কিনা একটা গড়গড়া দেখাইলাম, ইহাতে আশাভঙ্গের আঘাত লাগে বৈ কি। মুখে কিন্তু বলিলেন,—“যাক, বেঁচে গেছেন। কিন্তু ভাবুন দেখি, সত্যই যদি অন্য কিছু হোত—”

 আমিও উত্তর দিলাম,—“আগে আপনার সেই সত্যই অন্য কিছু হোক, তখন দেখা যাবে।”

 ভূত নাই, এই কথাটা কিন্তু এই কৌশলে বলিবার চেষ্টা আমি করিতেছি না। আমি ভূত দেখি নাই বলিয়াই যে ভূত নাই, এমন গোয়ার্তুমি বা যুক্তি আমার নহে। ভূত আছে, সত্যই আছে, অর্থাৎ আমি ভূতের অস্তিত্বে বিশ্বাস করি। ভূতে বিশ্বাস করি বলিয়াই যে আমি ভূত দেখিতে চাহি অথবা ভূত দেখিয়াছি, এমনও যেন কেহ না মনে করেন।

 সিউড়ী জেলে শীত আসিল। ছয়টা ঋতুতে পৃথিবীর বৎসরটাকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করিয়া লইয়াছে। পৃথিবীর আহ্নিক আবর্তনে দিন ও রাত্রির আবির্ভাব ঘটে, আর তার বার্ষিক গতিতে ঋতুগুলি পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হইয়া আসে—পণ্ডিতেরা এইরকম বলিয়া থাকেন। আমাদিগকে পৃথিবী হইতে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হইয়াছে, কিন্তু দেয়াল তুলিয়া জেলটাকে পৃথিবী হইতে