পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শ্রুতি-যোগ্য নহে, তাই যুগান্তর পার্টির প্রথমতম ত্রয়ীর একত্রে ‘ত্রিশূল’, আর পৃথকভাবে শাল, শেল ও শূল এই সাংকেতিক নাম ইঁহাদের মধ্যে প্রচলিত। ‘শাল’ হইলেন মনোরঞ্জনবাবু (গুপ্ত), ‘শেল’ পূর্ণবাবু এবং ‘শূল’ ইলেন মধুদা ওরফে সুরেনবাবু (ঘোষ)।

 শালের সঙ্গে পরিচয় করুন। বাঙালদের ভাষায় শাল শব্দের একটি বিশেষ অর্থ রহিয়াছে, যেমন শাল দিয়াছে বা শাল ঢুকিয়াছে। শুধু গোঁজ বলিতে যাহা বুঝায়, তাহারও অধিক কিছু শালে আছে। মনোরঞ্জনবাবু প্রকৃতই শালসদৃশ। যে-সময়ের কথা বলিতেছি, সেই সময়ে ইনি যুগান্তর-পার্টির স্তম্ভসদৃশ। অকপট মানুষ, দুর্দমনীয় সংকল্প এঁর চরিত্রের মূল উপাদান। চোখ-মুখের ভাব দেখিলেই বুলডগের কথা মনে আসে, বোমার আঘাতে এঁর মুণ্ড ছিন্ন করা চলে, কিন্তু এঁর কামড় আলগা করা চলে না। এঁর সংকল্প শক্তিতে ইনি দলের আদর্শস্থানীয়। ১৯৩০ সালে এঁরই নেতৃত্বে পুলিশ কমিশনার টেগার্টের উপর বোমা নিক্ষিপ্ত হয়। স্বামী প্রজ্ঞানন্দের শংকর-মঠের মানুষ ইনি এবং যতীন মুখার্জীর সহকর্মী। নিরভিমান ব্যক্তি, দলের প্রধানতম এক স্তম্ভ হইয়াও ইনি দলাদলিতে অনভ্যস্ত এবং ১৯২৮ সালে অনুশীলন-যুগান্তর দুই পার্টির একত্রীকরণে এঁর আন্তরিক চেষ্টা বহুলাংশে দায়ী। বরিশাল জেলায় বিপ্লব আন্দোলনের এঁকে প্রাণ বা মূলঘাঁটি আখ্যা দেওয়া যাইতে পারে।

 এবার শেলের সঙ্গে পরিচয় করুন। পূর্ণ দাস নামটি জনসাধারণের নিকট অপেক্ষাকৃত পরিচিত। ফেগু-ডাকাতের মত এঁরও নিজ জেলায় ডাকাত বলিয়া এক বিভীষিকা-উৎপাদক পরিচয় প্রচারিত। ইনি যুগান্তর পার্টির একদিক দিয়া সর্বাধিক বলিষ্ঠ স্তম্ভ। যুগান্তর পার্টির সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে ইঁহার একক দান সকলকে ডিঙ্গাইয়া গিয়াছে। বালেশ্বরে বিপ্লবী নেতা যতীন মুখার্জীর চারজন সঙ্গীর মধ্যে তিনজনই এঁর শিষ্য। ইনিই বিখ্যাত চিত্তপ্রিয়-নীরেন্দ্র-মনোরঞ্জনের নেতা। বিপ্লবীদের মধ্যে দীর্ঘদিন জেলবাসে ত্রৈলোক্য মহারাজ যেমন পুরোভাগে, জেলে-গমনের সংখ্যা বা বারে তেমনি ইনিই

১৪১