পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পঞ্চাননবাবু নামিয়া আসিলেন। টলিতে টলিতে মিঃ হগের সম্মুখে আসিয়া একেবারে তাঁহার মুখোমুখি দাঁড়াইলেন।

 তারপর বলিলেন, “well Mr. Hogg, have you got your salaam?”

 মিঃ হগ নিরুত্তর, তারপর হাতের টুপিটা মাথায় তুলিয়া লইয়া নিঃশব্দে তিনি জেল গেটের অভিমুখে রওনা হইলেন। যতদিন তিনি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন, আর ফরিদপুর জেলে প্রবেশ করেন নাই।


 এই ঘটনা ভারতবর্ষের মহানায়কের দৃষ্টি আকর্ষণ করিল, গান্ধীজী তাঁহার Young India’-তে সম্পাদকীয় প্রবন্ধে ইহার উল্লেখ করিয়া পরিশেষে মন্তব্য করিলেন, “জালিওয়ানালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য তত দুঃখ আমার হয় না, কিন্তু পাঞ্জাব সেদিন বুকে হাঁটিয়াছিল, বাঁশের দণ্ডে স্থাপিত টুপিকে সেলাম করিয়াছিল, একটি প্রতিবাদও পাঞ্জাবে সেদিন হয় নাই। ফরিদপুর জেলে এক তরুণ বাঙালী অন্যায় অসম্মানের সম্মুখে প্রতিবাদ করিয়া বলিল—না, এ হুকুম মানি না।”

 পণ্ডিত মতিলাল নেহেরু ইহার কয়েক মাস পরে কলিকাতা আসেন, দেশবন্ধু তখন মুক্ত, বলেন, “দাশ, আমি সেই ছেলেটিকে দেখতে চাই।”

 দিন কয়েক হয় পঞ্চাননবাবু আলিপুর জেল হইতে মুক্তি পাইয়াছিলেন, দেশবন্ধুর গৃহে বৃদ্ধ পণ্ডিতজী পঞ্চাননবাবুর এক ফটো তুলিয়া লন, বলেন, “এই ফটো আমি আমার টেবিলে রাখব।”

 ইহার পর হইতেই রাজনৈতিক বন্দিদের ক্ষেত্রে “সরকার সেলাম” প্রয়োগ নিষিদ্ধ হয়। যত উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারীই হউক, কোন ক্ষেত্রেই সেলাম দিবার জেল-আইন রাজনৈতিক বন্দীদের অতঃপর আর পালনীয় নহে বলিয়া ঘোষণা করা হয়।

১৪৭