পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

স্পর্শ করিয়াছে, ইহাতে সেদিন আমার দৃঢ় ধারণা হইল যে, আমি লিখিতে পারি এবং চেষ্টা করিলে সাহিত্যিক বলিয়াও হয়তো একদিন পরিচিত হইতে পারি। অর্থাৎ এই ঘটনা—যাহা ঘটে তাহাই ঘটনা নহে, যাহাতে চরিত্রের বিশেষ অভিব্যক্তি দেখা যায়, আমি তাহাকে ঘটনা আখ্যা দিয়া থাকি,—আমাকে আমার সম্বন্ধে বেশ খানিকটা সচেতন করিয়া তুলিয়াছিল। যে-মনোভাব আমার সেদিন আমি দেখিয়াছিলাম, তাহাকে নাম দেওয়া যাইতে পারে আত্ম-আদর।

 বয়স বাড়িয়াছে, রক্ত ঠাণ্ডা হইয়াছে, হয়তো মাথাও কিছু ঠাণ্ডা হইয়াছে, তাই আজ আর আমার আত্ম-আদর আত্ম-অনাদর কোন ভাবই মনে আসে না। যেটা আসে, তাহা একটি প্রশ্ন অথবা প্রত্যাশা।

 ‘প্রত্যভিনন্দন’-এর শেষ কথাটীতে কবি প্রশ্ন করিয়াছিলেন, “বন্দীর শৃঙ্খলচ্ছন্দে মুক্তের কে দিল পরিচয়?” উত্তরে আজ আর বলিতে পারি না, আমি বা আমরা। অপরের কথা জানি না, কিন্তু নিজের কথা যতটুকু জানি, তাহাতে বলিতে পারি যে, বন্দীর শৃঙ্খলচ্ছন্দে মুক্তের পরিচয় অন্ততঃ আমি দিতে পারি নাই। আমার মুক্ত পরিচয় আমার কাছে এখনও অনুদ্ঘাটিত রহিয়াছে, বাহিরের শৃঙ্খলচ্ছন্দে তাহার পরিচয় দেওয়ার কথা তো উঠেই না।

 কিন্তু কবি এমন কথা কেন লিখিলেন? ‘অমৃতের পুত্র মোরা,’ এ কথা তো আমরা জানি না, বিশ্বময় জানানো তো অনেক পরের কথা। কবি আমাদের সম্বন্ধে লিখিলেন, ‘আত্মারে কে জানিল অক্ষয়।’ অথচ শুনিতে পাই, ‘ঋষির নয়ন মিথ্যা হেরে না, ঋষির রসনা মিছে না কহে।’ প্রত্যভিনন্দনে আমাদের সম্বন্ধে ঋষিকবির এই উক্তি কি প্রকৃতই সত্য—ইহাই আমার প্রশ্ন।

 ইহাকে প্রশ্ন না রলিয়া প্রত্যাশাও বলা চলে। ঋষিকবি আমাদের নিকট কি প্রত্যাশা করেন, তাহাই প্রশ্নের আকারে ঐভাবে প্রত্যভিনন্দনে জানাইয়া গিয়াছেন, এই অর্থেই আজ আমার মন ঋষির ‘অভিনন্দন’ গ্রহণ করিয়াছে এবং আমার ধারণা, ইহাই প্রত্যভিনন্দনের প্রকৃত অর্থ।

১৫৪