পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 নদীর জীবন-যাত্রা সমুদ্রে শেষ হয়, মানুষের যাত্রা কোন্ সমুদ্রে শেষ হয়? উত্তম প্রশ্ন। নদী তো পর্বত গুহা হইতে নির্গত হয়, মানুষের আদি উৎস-গুহাটী কি? এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে পারিলে, মানুষের যাত্রা কোন্ সমুদ্রে শেষ হয়, আপনাদের এ-প্রশ্নের উত্তর দিতে আমিও প্রস্তুত আছি, তার পূর্বে নহে। অর্থাৎ, আপনার আদি আগে আপনি আবিষ্কার করুন, আপনার অবসানও তখন আপনি জানিতে পারিবেন।

 পৃথিবীতে ঠ্যাঁটা মানুষের অভাব নাই, কেহ কোন কিছু বলিলেই তাহার প্রতিবাদ করিতে তারা যেন এক পায়ে খাড়া হইয়াই থাকে। তাহারা বলিবে যে, নদীর সঙ্গে মানুষের মিলটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নহে। কারণ, নদীর হাতে ম্যাপ নাই সত্য, কিন্তু মানুষের কপালে দুই দুটা চক্ষু আছে। অর্থাৎ, মানুষের বুদ্ধি আছে, তার আলোতেই সে জীবনের পথ দেখিয়া লইতে ও চলিতে পারে।

 কথাটা শুনিতে নিশ্চয় বুদ্ধিমানের মত, কিন্তু ইহাকেই বলা হয় পল্লবগ্রাহী বুদ্ধি। বুদ্ধির আলোতে পথ নিয়ন্ত্রিত হইতে পারে, কথাটা মানিয়া লইয়া একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতে চাই। মোটরেরও তো সামনে আলো থাকে, সে-আলোতে পথ দেখে কে? নিশ্চয় মোটর গাড়িটা নয়। এই আলোতে পথ দেখে গাড়ির চালক। মানুষের চালক কে? যাক্, নদীর ক্ষেত্রে যার নাম দেওয়া হইয়াছে গতি, মানুষের বেলা তার নামই প্রাণ-প্রবাহ বা স্ব-ভাব। এই স্ব-ভাবটিই বহির্জগতের ঘাত-প্রতিঘাতে বিশেষ অভিব্যক্তিতে ব্যক্ত হইয়া চলে।

 এত কূটকচালে আমাদের আবশ্যক নাই। কোন কিছুকেই আকার দিতে হইলে হাতুড়ীর আঘাত দিতে হয়, নইলে তাহা অর্থহীন একটা বস্তুপিণ্ড থাকিয়া যায় মাত্র! মানুষের স্বভাবটিকেও বিশেষ মূর্তিতে বা ব্যক্তিত্বে রূপ দিতে তেমনি আঘাত আবশ্যক, সংসারে ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাতই সেই হাতুড়ীর আঘাত। এই রকম একটি আঘাতেই বক্সাক্যাম্পে আমার স্বভাবের একটা দিক সুস্পষ্ট আকার গ্রহণ করিতে পারিয়াছিল। ব্যাপারটা এই—

১৬৪