পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কেহ কেহ আহার করিতেছিল, কেহ কেহ বা শয়ন করিয়াছিল, কেহ কেহ পড়াশুনা বা গল্পগুজব করিতেছিল, এই সময়ে এই আক্রমণ। সন্তোষ মিত্র শব্দ শুনিয়া বাহিরে আসিতেই তাঁহাকে তলপেটে গুলী করিয়া মারা হয়, আর তারকেশ্বর সেনকে কপালে গুলী করিয়া হত্যা করা হয়। গুলী ও বেয়নেটের চার্জে পঁচিশজন বন্দী মরণাপন্ন ভাবে আহত হয়।

 খবরে সমস্ত ক্যাম্প ম্রিয়মান ও স্তব্ধ হইয়া গেল। আমারও এক ভাই যে হিজলী ক্যাম্পে বন্দী, এই কথাটা নিজের মনে আনিতেও ভয় পাইতেছিলাম। আমাদের আহার বন্ধ হইয়া গেল। হিজলী গুলীবর্ষণের তদন্তের প্রতিশ্রুতি না পাওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন আরম্ভ করিলাম। সাতদিনের মধ্যেই খবর আসিল যে, এই ঘটনার জন্য তদন্ত কমিটি গঠিত হইয়াছে, আমরা অনশনব্রত ভঙ্গ করিলাম।

 ক্যাম্পের নেতৃস্থানীয়দের অশঙ্কা ছিল যে, এই ঘটনায় বক্সা-ক্যাম্পে বন্দীদের প্রতিহিংসা প্রবৃত্তি জাগ্রত হইতে পারে, হয়তো এখানেও ভয়ানক কিছু ঘটিতে পারে। কিন্তু তেমন কোন হঠকারিতা এখানে বন্দীদের পক্ষ হইতে কেহই দেখায় নাই। বঙ্গের বিপ্লবী দলগুলির নায়কগণ প্রায় সকলেই বক্সা-ক্যাম্পে থাকায় শিবিরে শৃঙ্খলা বস্তুটি ছিল, তাই হিজলীর পুনরাবৃত্তি আমাদের অদৃষ্টে দেখা দিতে পারে নাই। কিন্তু আমাদের বন্দিজীবন হইতে আনন্দ ও সহজ ভাবটুকু হিজলীর ঘটনায় লোপ পাইয়া গেল। সহজ ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়া পাইতে আমাদের বেশ কিছুদিন লাগিয়াছিল।

 দুঃখের দিন আমাদের শেষ হইল না। ক্যাম্পের কম্যাণ্ডাণ্ট হইয়া আসিলেন ঢাকার কুখ্যাত পুলিশ সুপার কোট্টাম সাহেব। এই বেঁটে-খাটো লোকটি, যাকে আমাদের সন্তোষবাবু বা রবিবাবু এক চপেটাঘাতে সাবাড় করিতে পারেন, তিনিই ঢাকাতে এত অত্যাচার করিয়াছেন, ইহা বিশ্বাস করিতে ইচ্ছা হইল না। ইঁহার হাতে লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হইয়াছেন, এমন অনেকেই বক্সা ক্যাম্পে তখন ছিলেন। তাঁহাদের কথার সত্যতা দুদিন না যাইতেই আমরাও স্বীকার পাইতে

১৭৭