পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আরদালী বাঁশী বাজাইয়া দিল, পাশেই ছিল পুলিশ ব্যারাক, লাঠিসোঁটা হাতে পুলিশের দল বাহির হইয়া আসিল। এদিক হইতে আসিল ক্লাবের ছেলেরা, তাদেরও হাতে লাঠি। সে এক হুলস্থুল কাণ্ড, ছোট্ট সহরের ডোবায় বিজয় যেন সমুদ্রের তুফান জাগাইয়া বসিয়াছে।

 ব্যাপারটা অবশ্য ভালোয় ভালোয় শেষ হইয়াছিল। সাহেব বলিলেন, “তোমার বয়স কত?”

 বিজয় বলিল, “ছাব্বিশ।”

 —“আমার সাতাশ। আমরা সমবয়সী। আমি ঘুঁষি মেরেছি, তুমিও মেরেছ, চুকেবুকে গেল। নেও, This is a present for you,” বলিয়া নিজের ছড়িটা বিজয়কে উপহার দিল।—এই সেই বিজয় দত্ত।

 আর ভূপেনবাবু (দত্ত), তাঁহারও এই বিষয়ে সুনাম আছে। শুনিয়াছিলাম যে, সাহেব দেখিলেই নাকি তাঁহার মাথায় রক্ত চড়িয়া বসে এবং তখন ইংরেজীতে যে বকুনী নির্গত হয়, তাহা প্রায় লাভা-স্রোতেরই সামিল। এই দুই দত্তের পাল্লায় কোট্টাম সাহেব নিপতিত হইয়াছেন। ইহার পরিণামটা যে নির্ঘাত রোমহর্ষক, তাহা দিব্য-চোখে দেখিয়া ফেলিলাম।

 রোগা পাতলা মানুষ আমি, ভীড়ের ফাঁকে অলিঘুঁজি গলিয়া একেবারে কেন্দ্রের অকুস্থানে উপস্থিত হইলাম। যে দৃশ্য দেখিয়াছিলাম, তাহা জীবনে বিস্মৃত হইব না। দোর্দণ্ডপ্রতাপ কোট্টাম সাহেব বংশপত্রের মত কম্পিত হইতেছেন। সাহেবও ভয়ে কাঁপেন, ইহা কে কবে ভাবিতে পারিয়াছেন! অন্ততঃ আমি পারি নাই।

 সাহেবের সার্টের আস্তিন কনুই পর্যন্ত গুটানো, হাতে একটা ঝাড়ন, তাহাতে ও সাহেবের দুই হাতে কালির দাগ। বুঝিলাম, বিগড়ানো ইঞ্জিনটাকে মেরামত করিতে নিজেই হাত লাগাইয়াছেন। সেই ঝাড়ন হাতে আমাদের সাহেব কাঁপিতেছিলেন। ভূপেনবাবু যত প্রশ্ন করিতেছেন, তাহার উত্তরে তিনি শুধু তো-তো করিতেছেন। ভয়ে জিভে জড়তা আসিয়া গিয়াছে। এই দৃশ্য দর্শনে হৃদয়ে দয়া উপজিল।

১৮৩