পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 অপমান যে কত জ্বালা, সেদিন বুঝিয়াছিলাম। রাগে, ক্রোধে, ঘৃণায় চোখ দিয়া কয়েক ফোঁটা উষ্ণ জল নির্গত হইয়া আসিল। আজও স্পষ্ট মনে আছে যে, রাত তখন গোটা দেড়েক হইবে, চোখ দিয়া জল গড়াইয়া পড়িল, আর মনে মনে শপথ উচ্চারণ করিয়াছিলাম, “হে উদ্ধত ও গর্বিত বিপ্লবী নেতার দল, একদিন তোমাদের সকলকেই এই পায়ের তলায় আনিয়া আমি দাঁড় করাইব।”

 তখন বুঝি নাই, আজ মাথা ঠাণ্ডা হওয়ায় বুঝিতে পারিতেছি যে, উদ্ধত ও গর্বিত বলিয়া নেতাদের উপর আমি এতই ক্রুদ্ধ হইয়াছিলাম যে, আমার অহমিকাও যে সেদিন তাঁহাদের অহংকারকেও বহুগুণে ছাড়াইয়া গিয়াছিল, এ খেয়াল আমার ছিল না।

 মান-অপমান সমান জ্ঞান করিবার উপদেশ শুধু শাস্ত্রেই নহে, কর্মজীবনে বহু প্রতিষ্ঠাবান ব্যক্তিও দিয়া থাকেন। অপমানের জ্বালা সম্বন্ধে আমার যেটুকু অভিজ্ঞতা আছে, তাহাতে আমি দ্বিধাহীনভাবেই বলিব যে, ইহা এক অসম্ভব উপদেশ। যে-মন আমরা ব্যবহারের জন্য পাইয়াছি, সে-মনে মান-অপমান সমান-জ্ঞান কোনকালে সম্ভব নহে। ধৈর্যশক্তি অধিক থাকিলে মান-অপমানের ধাক্কা সামলানো বড় জোর চলিতে পারে, কিন্তু উহাকে সমান-জ্ঞানে গ্রহণ কদাচ চলিতে পারে না। যে পর্যন্ত মন হইতে মানুষ মুক্ত হইতে না পারিবে, সে পর্যন্ত ‘মানীর অপমান বজ্রাঘাত তুল্য’ কথাটা পরম সত্যরূপেই স্বীকৃত ও স্থিত থাকিবে। যাহার মান-অপমান বোধ নাই, সে হয় মৃত নয় মুক্ত পুরুষ। সংসারে আমরা এই দুইয়ের কোনটাই নহি।

২১৬