পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করেই জেনে নিতাম, এ কোন দেশী স্বদেশী? ঘুমোতে পারব না, একথা ব্যাটা আগে বলেনি কেন? জানলে কোন শালা আসত।”

 আমাদের হাসির শব্দে শীতের শেষ রাত্রিটাও চমকাইয়া উঠিল। দারোগা দুজনও হাসি চাপিয়া রাখিতে পারিলেন না। সেই বয়সে ছোট পদে-বড় দারোগবাবু জিজ্ঞাসাই করিয়া ফেলিলেন—“কি বলছেন?”

 সন্তোষবাবু বলিলেন— ও আপনারা বুঝবেন না। এমন স্বদেশীতে আমার কাজ নেই, ওর খুরে পেন্নাম” বলিয়া আলোয়ানের নীচেই হাত দুটো যুক্ত করিয়া প্রণামের মুদ্রাটি সম্পন্ন করিলেন।

 গাড়ী বদল করিয়া আর এক গাড়ীতে উঠিলাম এবং উঠিয়াই ঘুমাইয়া পড়িলাম। দেখিয়া মনে হইতে পারিত যে কোন হাঙ্গামাই হয় নাই, আমরা শুধু পাশ ফিরিয়া শুইয়াছি যেন।

 ভোরে যখন জাগিলাম, তথন জানালার পথে চাহিয়াই বিস্ময়ে স্তব্ধ হইয়া গেলাম—দূরে উত্তরে সারি সারি শিখর-শ্রেণী লইয়া হিমালয় আকাশের গায়ে গা লাগাইয়া দাঁড়াইয়া আছে।


 এই সেই হিমালয়—ভারতবর্ষের হিমালয়!

 প্রথমটা যেন বিশ্বাসই করিতে সাহস হইল না যে, সত্যই আমি হিমালয়কে দেখিতেছি। জন্মার্জিত পুণ্য আমার ছিল, তাই হিমালয়ের দর্শনলাভের সৌভাগ্য আমার হইল। আমার বন্দিত্বের সমস্ত ব্যথা ও ক্ষোভ মুছিয়া গেল, ইংরেজের উপর যেন আমার কোন নালিশই আর রহিল না। হিমালয়কে দেখিবার সুযোগ তাহারাই আমাকে দিয়াছে।—সমস্ত মনকে সংহত, শান্ত ও কেন্দ্রস্থ করিয়া ভারতবর্ষের হিমালয়কে, দেবাত্মা হিমালয়কে আমি আমার প্রণাম জানাইলাম।

 শরৎবাবু যে তাঁর জায়গা ছাড়িয়া আমার কাঁধ ঘেঁষিয়া আসিয়া দাঁড়াইয়াছেন, তা টের পাই নাই। কানের কাছে তাঁর গলা শুনিয়া তবে সচেতন হইলাম। হিমালয়ের মহান শান্তি আমার মনে সঞ্চারিত হইয়াছিল এবং

২৩