পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কল্পনা করিয়া দেখিতেছিলাম, তাহা নয়। আবার জোর করিয়া তাড়াইতেও ছিলাম না। আমাকে মোহাবিষ্ট করিয়া রাখিয়া ছবির পর ছবি দেখানো চলিতেছিল—শুধু এই জ্ঞানটুকু আমার ছিল যে, যেখান হইতে মন ফিরিয়া আসিয়াছে, তারই প্রতিক্রিয়া চলিতেছে এইভাবে।

 ছবিগুলি যা সেদিন দেখিয়াছিলাম, তা একই গোত্রের।

 গভীর বনে যেখানে কোনদিন সূর্যের আলো প্রবেশ করিতে পারে নাই, সেখানে অন্ধকার গর্ত হইতে দলে দলে সাপ-সাপিনী বাহির হইয়া আসিল। একে অপরকে জড়াইয়া লইয়া মদাতুর হইয়াছে, ছোবলে ছোবল পরস্পরের মুখ হইতে বিষের ফেনা উদ্গারিত হইতেছে এবং ঘন নিঃশ্বাসে উগ্র পিপাসায় সে ফেনপুঞ্জই আবার তাহারা পান করিয়া চলিয়াছে। দূর বনে বাঘিনী বাঘকে আমন্ত্রণ করিয়াছে, নখর-দন্ত-ঘর্ষণে ও লেহনে আশেপাশের গাছপালা ও মাটিতে পর্যন্ত রতি-রোমাঞ্চ জাগিয়াছে, বাঘের কাম-অগ্নি নিশ্বাসে ফুৎকারে জ্বালাইয়া লইয়া বাঘিনী অগ্নিস্নানে প্রবেশ করিয়াছে। প্রকাণ্ড মোটা গাছে গা ঠেকাইয়া হস্তিনীরা উর্দ্ধে শুঁড় তুলিয়া চীৎকার করিতেছে, দলে দলে দৈত্যের মত হাতীরা ছুটিয়া আসিল, তারপর মদস্রাবে সমস্ত বনটাই যেন ভিজিয়া সিক্ত হইল, পদতলে পৃথিবী এ দুর্দান্ত কামক্রীড়ার অসহ্য ভারে ক্লান্ত হইয়া আসিতেছিল, কক্ষ পথ হইতে সরিয়া ছিটকাইয়া পড়িবার ভয়ে তার সর্বাঙ্গে থরথর কম্পন উঠিয়াছে। উপরে গাছের ডালে ডালে পাখীর বাসায় মদকূজন জাগিয়াছে, বিহগীদের ডানার আড়ালে ঢাকিয়া লইয়া পাখীরা তীক্ষ্ণ চক্ষুঘায়ে কামক্ষত রচনা করিতেছিল, গাছগুলি উপরে একপায়ে দাঁড়াইয়া মাটির অন্ধকার অভ্যন্তরে শিকড়ে শিকড়ে জড়াইয়া রস-উদ্গার ও লেহন করিতেছিল। বনের যেদিকে তাকাই, সেই দিকেই এই ছবি, সমস্ত বনভূমি আজ কামভূমি হইয়াছে।

 কোন বিরাট শক্তিমানের এ কামরূপ দেখিয়াছিলাম, আজও তা আমি বুঝিতে পারি নাই।

৩৩