পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আনিয়া ফেলিলেন। একটা হেঁচকা টানে চেয়ারটাকে কাছে আগাইয়া লইলেন, মেঝেতে ঘর্ষণে ও আকর্ষণে নিরীহ চেয়ারটা আর্ত চীৎকার করিয়া উঠিল। শরৎবাবু সেটার উপর চাপিয়া বসিলেন, নড়াদাঁতের মত বেসামাল হইয়া চেয়ারটা কোন মতে খাড়া রহিল।

 কিন্তু কতক্ষণ এই বোঝা কাঁধে লইয়া এ দাঁড়াইয়া থাকিতে পারিবে, নড়বড়ে পদচতুষ্টয়ের দিকে তাকাইয়া তাহা অনুমানের চেষ্টা করিলাম। যাহা মনে মনে চাহিতেছি, বরাত জোরে ঠিক তাহাই যদি ঘটে, অর্থাৎ পায়া যদি কাৎ হয়, তখনও কি যাহা চাহিব, ঠিক তাহাই ঘটিবে? অর্থাৎ ঘটোৎকচের মত আমার উপর চাপিয়া না পড়িয়া তিনি কি দয়া করিয়া পিছনের ঐ বিপজ্জনক স্থানেই গিয়া ভূমিশয্যা লইবেন? না, এতটা সৌভাগ্য আমার হইবে বলিয়া আমি আশা করিতে পারি না।

 শরৎবাবু ঠিক হইয়া বসিলে পর প্রশ্ন করিলাম—“গতিক খারাপের কথা কি বলছিলেন?”

 উত্তরের ধারকাছ দিয়াও তিনি গেলেন না, উল্টা আমাকেই প্রশ্ন করিলেন —“জিজ্ঞেস করি, আজ রাতটা স্টেশনে থাকবেন, না যাবেন?”

 —“মানে?”

 —“মানে সোজা, এই ছ’সাত মাইল চড়াই-উৎরাই করে ফোর্টে যেতে পারেন যদি তবে চলুন। নইলে স্টেশনেই থাকবার বন্দোবস্ত করুন।”

 ভয় পাইয়া গেলাম, উৎকণ্ঠিত হইয়া প্রশ্ন করিলাম—“হঁটে যেতে হবে?”

 উত্তর হইল—“কিসে যেতে চান, আমার কাঁধে চড়ে?

 অবশ্য তাঁর কাঁধে চড়িয়া যাওয়ার কথা উঠে না, শরৎবাবু নিজে রাজী হইলেও তাঁর কাঁধে চড়িয়া যাইতে রাজী হওয়া বা না হওয়া আমার ইচ্ছা। যে মেজাজের লোক, কাঁধ হইতে পাঁচশত হাত গভীর খাদের মধ্যে নামাইয়া দিয়া তিনি ভারমুক্ত হইবেন এমন সুযোগ তাঁকে দেই আর কি? বলিলেই হইল!

৩৫