পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

না জোটে পায়ে হাঁটিয়াই এ পথটা মারিয়া দিতে হইবে—মনের হুকুম ও সম্মতি দুই-ই পাইয়া গেলাম।

 আঠারো বছর আগের ব্যাপার, রক্তে তখনও বেগ ছিল, মনে তখনও স্থবিরত্ব আসে নাই। যাইতে হইবে, এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ামাত্র মন নোঙ্গর তুলিয়া ফেলিল। শরীরে সায় পাইলাম, পথের জন্য পায়ের পেশী প্রস্তুত হইল এবং রক্তের পালে উৎসাহের বায়ু জোর ফুঁ দিল। চুরুটের ছাই ঝাড়িয়া উঠিয়া দাঁড়াইলাম।

 কহিলাম,—“বাইরে চলুন।”

 শরৎবাবু উঠিয়া দাঁড়াইলেন, বাহির হইবার জন্য চেয়ারটাকে পিছনে ঠেলিয়া দিলেন, চেয়ারটা আর্ত চীৎকার তুলিল—যেন বলিতে চায় যে, এ কেমন ব্যবহার, এতক্ষণ উপবেশনের পরে এই কি বিদায়?

 তিনি বিপজ্জনক স্থানটুকু পূর্ববৎ লম্ফ প্রদানে পার হইয়া গেলেন। আমিও মহাজনেরই যেন গত স পন্থায় বাহির হইয়া আসিলাম।

 শরৎবাবুকে জিজ্ঞাসা করিলাম,—“হেঁটে যেতে পারবেন তো?”

 শরৎবাবু শুধু হাস্য করিলেন। ভাবখানা এই যে, এমন অপমানজনক প্রশ্নের তিনি উত্তর দিতে প্রস্তুত নহেন। শরৎবাবু পালোয়ান লোক, বলিষ্ঠ ব্যক্তি, বয়স তখনও পঁচিশের অনেক নীচে, সবই আমি জানিতাম। কিন্তু শরীরের ওজনও তো কম নহে। সম্বলের মধ্যে তো ঐ আমারই মত দুইখানা ঠ্যাং, চতুষ্পদ হইলে নয় কোন কথা ছিল না। তা ছাড়া, আমি শুনিয়াছিলাম যে, যত উপরে উঠা যায়, ততই নাকি শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তাই শরৎবাবুকে প্রশ্ন করিয়াছিলাম যে, হাঁটিয়া যাইতে পারিবেন কিনা। তাঁর হাস্যে নিশ্চিন্ত হইয়া অগ্রসর হইলাম।

 প্ল্যাটফর্মে আসিয়া দাঁড়াইতেই দারোগার মুখোমুখি পড়িয়া গেলাম, তিনি আমাদের খোঁজেই আসিতেছিলেন। তিনি কি যেন বলিতে চাহিতেছিলেন, বাধা দিয়া কহিলাম,—“এদিকে আসুন,” বলিয়া আর একটু দূরে সরিয়া লইলাম।

৩৯