পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সুযোগ দেয় না। বিরাট বনস্পতি ধরণীকে কঠিন বন্ধ্যাত্ব হইতে মুক্তি দেয় বলিয়াই ধরণীর ধূলায় তৃণস্তর বিস্তারিত হইবার সুযোগ ও অধিকার পায়। সর্বশেষে, আকাশের ঝড়কে জাগ্রত ও আহ্বান করিবার শক্তি তৃণের নাই। বৃহৎ শক্তিই প্রকৃতির বৃহত্তম শক্তিকে জাগ্রত ও সক্রিয় করিয়া তুলিয়া থাকে।

 আর টিকিয়া থাকা? কতটুকু বন্ধন মাটির সঙ্গে তৃণের রহিয়াছে? ক্ষুদ্র বালিকার কচি অঙ্গুলীর আকর্ষণেই তাহা উৎপাটিত হইয়া আসে। আর বট? সমস্ত আকাশের ঝটিকার সহস্র বাহুতে তাকে আকর্ষণ করিয়াও সহজে উৎপাটন করা সম্ভব হয় না। অস্তিত্বের সাগরে তৃণ ক্ষণায়ু ক্ষণভঙ্গুর বুদ্বুদ, আর সেই সমুদ্রে বিরাট বনস্পতি অতলোত্থিত মগ্ন গিরি, সমুদ্রের শত তরঙ্গের আঘাত তার গায়ে মায়ের ঘুমপাড়ানী ছন্দের সুকোমল স্নেহস্পর্শ।

 তৃণের দীনতা বা নীচুতা মানুষের আদর্শ আচরণ হইতে পারে না এবং হওয়া উচিৎ নহে। বিরাট বনস্পতির শক্তিমান বলিষ্ঠতাই মানুষের চরিত্রে আদর্শ বলিয়া গৃহীত হওয়া উচিত। সৃষ্টির মূলে স্রষ্টার রাজসী শক্তিই ক্রিয়াশীল। মানুষকেও চরিত্রে ও স্বভাবে তার আপন স্রষ্টারই প্রতিরূপ হইতে হইবে। কিন্তু তার পথ তো শক্তিহীন তৃণের তামসিকতা নয়। ঈশ্বরের ঐশ্বর্য অর্থাৎ ঐ রাজসী শক্তিকে আয়ত্ত করিতে পারিলে ঈশ্বরসদৃশই হইয়া উঠা যায়। সে পথের সন্ধান শক্তিমান যিনি, শুধু তিনি দিতে পারেন।

 —কিছুদূরে যাইতেই পথের ধারে একটি ভূটিয়া ছেলের সাক্ষাৎ পাইলাম। এখানে মানুষ দেখিলে সত্যই চমকাইতে হয়। মানুষের মাথাটা কাঁধের উপর না থাকিয়া যদি মানুষের হাতে থাকিত, তবে যে রকম ঠেকিত, লোকালয়ে সমাজের মধ্য হইতে মানুষকে এখানে প্রক্ষিপ্ত দেখিলে তেমনি লাগে। অর্থাৎ মানুষকে এখানে মোটেই মানায় না, ছন্দপতন মনে হয়।

 ছেলেটাকে জিজ্ঞাসা করিলাম—“কি রে, এখানে বসে আছিস যে?”

 উত্তর দিল না, কেবল শ্রীমানের ভেকলাঞ্ছিত ‘নাসিকা-অতুল’-এর দুই পাশের খুদে চোখ দুইটি মিটমিট করিয়া উঠিল।

৪৫