পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গোস্বামীর ঘোড়ার খুরের শব্দ তো এ রকম হওয়ার কথা নহে। রীতিমত আশঙ্কিত হইয়া উঠিলাম। চাক্ষুষ দেখিবার জন্য ঘাড় ফিরাইলাম। যাক্‌ গোস্বামী নয়, দারোগা সাহেব ঘোড়ায় চাপিয়া আসিতেছেন।

 গোস্বামীর জন্য দুশ্চিন্তাটা দূর হইল বটে, কিন্তু দারোগার উপর রাগ জন্মিয়া গেল। যাঁদের জন্য ঘোড়া, তাঁরা পায়ে হাঁটিয়া পাহাড়ের পথ ভাঙ্গিতেছেন, আর উনি নবাবের মত—

 চিন্তাটা শেষ করিতে পারিলাম না, অর্থাৎ ভাষায় ব্যক্ত করিয়া তাহা শরৎবাবুকে শুনাইবার ফুরসৎ পাইলাম না, দারোগাবাবু পাশে আসিয়া ঘোড়া হইতে অবতীর্ণ হইয়াছেন। রাগ হইলেও মনে মনে এর অশ্বচালনা ও অশ্ব হইতে অবতরণ-ভঙ্গীটির প্রশংসা না করিয়া পারিলাম না।

 নামিয়াই কহিলেন,—“ওঁরা কেউ আর ঘোড়ায় চড়তে চান না, আপনার জন্য নিয়ে এলাম। নিন, উঠুন—”

 —“আর কাউকে দিয়ে দিন, আমার ঘোড়ার দরকার নেই।”

 বুদ্ধিমান ব্যক্তি, তাই বুঝিয়া নিলেন যে, আমি রাগ করিয়াছি। বলিলেন,—“বিশ্বাস করুন, কাউকে বঞ্চিত করে আনিনি। ওঁরা পায়ে হেঁটে দল বেঁধে আসছেন, ঘোড়ার চেয়ে তাতেই নাকি আরাম। কাজেই এটা চেপে এসেছি—আপনাকে ধরবার জন্য ছুটিয়ে এনেছি, ব্যাটার ঘাম বেরিয়ে গেছে,” বলিয়া ঘর্মাক্ত বাহনটির উপর চক্ষু বুলাইয়া লইলেন।

 সুর আমার কি কারণে এত আন্তরিক ও নরম হইল, জানি না। বলিলাম,—“আমার জন্য এত কষ্ট করেছেন, সত্যই আমি খুসী হয়েছি। আমরা হেঁটেই যাব, তাতেই আরাম বেশী।”

 পরে আসল কারণটি ব্যক্ত করিলাম,—“আর দেখছেন তো,” বলিয়া ওদিকের ছ’সাতশত হাত গভীর খাদটার দিকে ইঙ্গিত করিলাম।

 দারোগাবাবু এবার হাসিয়া ফেলিলেন, ভাবখানা এই যে, ছোঃ, এরা আবার বিপ্লবী, ঘোড়ায় চড়িয়া ঘোড়াশুদ্ধ খাদে পড়িতে ভয় পায়।

৫৫