পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কোথায়? শিখরের পর শিখরশ্রেণী লইয়া যে হিমালয় চোখের সামনে ধরা দিয়াছিল, সে হিমালয় আড়াল হইয়া গেল। উত্তর-পশ্চিম-পূর্ব তিন দিকের তিনটি পাহাড় দৃষ্টির পথ রোধ করিয়া দুর্লঘ্য নিষেধের তর্জনীর মত খাড়া হইয়া রহিল।

 এক খোলা ছিল দক্ষিণের দিকটা। এদিকে চোখের দৃষ্টি আকাশের শেষ সীমান্ত অবধি বাধাহীন মুক্তি পাইত। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়াইয়া দেখিতে পাইতাম—অসীম আকাশের তলে আমাদের বাঙলাদেশ। ভালোই হইয়াছে, তিনদিকে দৃষ্টি নিষিদ্ধ হওয়ায় দেশের দিকে দৃষ্টি খোলা পাওয়া গেল। এতদিন ম্যাপে বাঙলাদেশ দেখিয়াছি, কিন্তু আজ বাঙলার শিয়রে দাঁড়াইয়া সমগ্র বাঙলাকে দেখিবার সুয়োগ পাইলাম। দৃষ্টিশক্তি সীমাবদ্ধ বলিয়া সবটা একই সময় দেখা যায় না বটে, কিন্তু দিগ্বলয়ে যেখানে আকাশ ও মাটি মিশিয়া গিয়াছে, সেখানে বাকী বাঙলা নেপথ্যেই অপেক্ষা করিতেছে, এ বোধ চেতনায় সব সময়ই থাকিত।

 দক্ষিণের বিস্তীর্ণ প্রান্তর নানা রংয়ের ছবির পর ছবি চোখের সামনে মেলিয়া ধরিত। এত রকম রংয়ের খেলা সেখানে দেখিতাম যে, চোখ ক্লান্তবোধ করিবার অবসরই পাইত না। মাঝে মাঝে সেখানে একটা নীলের প্রগাঢ় ছায়া এমনভাবে পড়িত যে, প্রান্তর বলিয়া চেনা যাইত না। অনেক সময় অনেকের ভুলও হইত। ভুলের একটা ঘটনা বলিতেছি।—

 ভোর হইয়াছে, কিন্তু কাক ডাকিতেছে না। কারণ বকসাতে কোনদিন কাক দেখি নাই, অতএব তার ডাকও শুনি নাই। কাক ছিল না, কিন্তু তাই বলিয়া পাখীর অভাব ছিল না, আকাশের আলোর অভ্যর্থনা তারাই তারস্বরে করিতেছিল। ঘড়ির কাঁটার হিসাবে দিন বেশ খানিকটা অগ্রসর হইয়াছে, কিন্তু আমাদের আকাশে সূর্য দেখা যাইতেছিল না, পূবের পাহাড়টা ভোরের সূর্যকে আড়াল করিয়া দাঁড়াইয়া আছে, ওটা ডিঙ্গাইয়া আসিতে প্রায় আটটা বাজাইয়া ফেলিবে।

৬৪