পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७कश झा5नाववी সম্প্রীতি। কুন্দনন্দিনীকে নগেন্দ্র সেইখানে লইয়া গেলেন। কমলকে ডাকিয়া কুন্দের সবিশেষ পরিচয় দিলেন। কমলের বয়স অন্টাদশ বৎসর। মািখাবয়ব নগেন্দ্রের ন্যায়। ভ্ৰাতা ভগিনী উভয়েই পরম সন্দর। কিন্তু কমলের সৌন্দয্যগৌরবের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যার খ্যাতিও ছিল। নগেন্দ্রের পিতা মিস টেম্পল নাম্নী একজন শিক্ষাদাত্ৰী নিযক্ত করিয়া কমলমণিকে এবং সােয্যমখনীকে বিশেষ যত্নে লেখাপড়া শিখাইয়াছিলেন। কমলের শবশ্রা বৰ্ত্তমান। কিন্তু তিনি শ্ৰীশচন্দ্রের পৈতৃক বাসস্থানেই থাকিতেন। কলিকাতায় কমলাই গহিণী। নগেন্দ্র কুন্দের পরিচয় দিয়া কহিলেন, “এখন তুমি ইহাকে না। রাখিলে আর রাখিবার স্থান নাই। পরে আমি যখন বাড়ী যাইব-উহাকে গোবিন্দপরে লইয়া যাইব ।” কমল বড় দলটি। নগেন্দ্র এই কথা বলিয়া পশ্চাৎ ফিরিলেই কমল কুন্দকে কোলে তুলিয়া লইয়া দৌড়িলেন। একটা টবে কতকটা অনতিতপত জল ছিল, অকস্মাৎ কুন্দকে তাহার ভিতরে ফেলিলেন। কুন্দ মহাভীতা হইল। কমল তখন হাসিতে হাসিতে স্নিগধ সৌরভযক্ত সোপ হস্তে লইয়া স্বয়ং তাহার গাত্ৰ ধৌত করিতে আরম্ভ করিলেন। একজন পরিচারিকা, স্বয়ং কমলকে এরােপ কাজে ব্যাপােত দেখিয়া, তাড়াতাড়ি “আমি দিতেছি, আমি দিতেছি, “ বলিয়া দৌড়িয়া আসিতেছিল-কমল সেই তপত জল ছিটাইয়া পরিচারিকার গায়ে দিলেন, পরিচারিকা পলাইল । কমল স্বহস্তে কুন্দকে মাডিজত এবং স্নান করাইল-কুন্দ শিশিরধৌত পদ্মবৎ শোভা পাইতে লাগিল। তখন কমল তাহাকে শেবত চার বস্ত্র পরাইয়া, গন্ধতৈল সহিত তাহার কেশরচনা করিয়া দিলেন, এবং কতকগলি অলঙ্কার পরাইয়া দিয়া বলিলেন, “যা, এখন দাদাবাবকে প্ৰণাম করিয়া আয়। আর দেখিস-যেন এ বাড়ীর বাবকে প্ৰণাম করে ফেলিস না-এ বাড়ীর বাব দেখিলেই বিয়ে করে ফেলিবো।” নগেন্দ্রনাথ, কুন্দের সকল কথা সৰ্য্যেমখীকে লিখিলেন। হরদেব ঘোষাল নামে তাঁহার এক প্রিয় সহৃদ দরদেশে বাস করিতেন—নগেন্দ্র তাঁহাকেও পত্র লেখার কালে কুন্দনন্দিনীর কথা বলিলেন, যথা— বল দেখি, কোন বয়সে সত্ৰীলোক সন্দরী ? তুমি বলিবে, চল্লিশ পাবে, কেন না, তোমার ব্ৰাহ্মণীর আরও দই এক বৎসর হইয়াছে। কুন্দ নামে যে কন্যার পরিচয় দিলাম--তাহার বয়স তের বৎসর। তাহাকে দেখিয়া বোধ হয় যে, এই সৌন্দয্যের সময়। প্রথম যৌবনসঞ্চারের অব্যবহিত পকেবই যেরপে মাধৰ্য্য এবং সরলতা থাকে, পরে তত থাকে না। এই কুন্দের সরলতা চমৎকার; সে কিছই বঝে না। আজিও রাস্তার বালকদিগের সহিত খেলা করিতে ছটে; আবার বারণ করিলেই ভীত হইয়া প্রতিনিবাত্তা হয়। কমল তাহাকে লেখাপড়া শিখাইতেছে। কমল বলে, লেখাপড়ায় তাহার দিব্য বন্ধি। কিন্তু অন্য কোন কথাই বঝে না। বলিলে বহৎ নীল দাইটি চক্ষ—চক্ষ, দাইটি শরতের পদ্মের মত সব্বদাই স্বচ্ছ জলে ভাসিতেছে—সেই দাইটি চক্ষ আমার মাখের উপর সস্থাপিত করিয়া চাহিয়া থাকে; কিছর বলে না—আমি সে চক্ষ দেখিতে দেখিতে অন্যমনস্ক হই, আর বাবাইতে পারি না। তুমি আমার মতিসৈন্থয্যের এই পরিচয় শনিয়া হাসিবে, বিশেষ তুমি বাতিকের গণে গাছ কয় চুল পাকাইয়া ব্যঙ্গ করিবার পরওয়ানা হাসিল করিয়াছ ; কিন্তু যদি তোমাকে সেই দাইটি চক্ষর সম্মখে দাঁড় করাইতে পারি, তবে তোমারও মতিসৈন্থয্যের পরিচয় পাই। চক্ষ দাইটি যে কিরাপ, তাহা আমি এ পয্যন্ত স্থির করিতে পারিলাম 'না। তাহা দইবার এক রকম দেখিলাম না; আমার বোধ হয়, যেন এ পথিবীর সে চোখ নয়; এ পথিবীর সামগ্রী যেন ভাল করিয়া দেখে না ; অন্তরীক্ষে যেন কি দেখিয়া তাহাতে নিযক্ত আছে। কুন্দ যে নিন্দোেষ সন্দরী, তােহা নহে। অনেকের সঙ্গে তুলনায় তাহার মখাবয়ব অপেক্ষাকৃত অপ্ৰশংসনীয় বোধ হয়, অথচ আমার বোধ হয়, এমন সন্দেরী কখনও দেখি নাই। বোধ হয় যেন কুন্দনন্দিনীতে পথিবী ছাড়া কিছ আছে, রক্ত মাংসের যেন গঠন নয়; যেন চন্দ্রকর কি পৰস্পসৌরভকে শরীরী করিয়া তাহাকে গড়িয়াছে। তাহার সঙ্গে তুলনা করিবার সামগ্রী হঠাৎ মনে হয় না। অতুল্য পদার্থটি, তাহার সব্বাঙগীণ শান্তভাবব্যক্তি—যদি, সবচ্ছ সরোবরে শরচ্চন্দ্রের কিরণসম্প্রপাতে যে ভাবব্যক্তি, তাহা বিশেষ করিয়া দেখ, তবে ইহার সাদশ্য কতক অনভূত করিতে পরিবে। তুলনার অন্য সামগ্রী পাইলাম না।” ミVりぐり