পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিষবক্ষ Aকথা কাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন না—এ লজার কথা কি প্রকারে অপর লোককে মািখ ফটিয়া ' জিজ্ঞাসা করেন ? A অতি ব্যস্ত কমলমণি অন্তঃপরে প্রবেশ করিলেন ; এবার সতীশ যে পশ্চাতে পড়িয়া রহিল, তাহা ভুলিয়া গেলেন। বাটীর ভিতর প্রবেশ করিয়া, কপিভট সবরে, সাহসশন্য হইয়া দাসী দিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন যে, “সৰ্য্যমখী কোথায় ?” মনে ভয়, পাছে কেহ বলিয়া ফেলে যে, বিবাহ হইয়া গিয়াছে—পাছে কেহ বলিয়া ফেলে সৰ্য্যেমখনী মরিয়াছে। দাসীরা বলিয়া দিল, সােয্যমখী শয়নগহে আছেন। কমলমণি ছটিয়া শয়নগহে গেলেন। প্রবেশ করিয়া প্রথমে কাহাকেও দেখিতে পাইলেন না। মহত্তকাল ইতস্ততঃ নিরীক্ষণ করিলেন। শেষে দেখিতে পাইলেন, ঘরের কোণে, এক রন্ধ গবাক্ষসন্নিধানে, অধোবদনে একটি সত্ৰীলোক বসিয়া আছে। কমলমণি তাহার মািখ দেখিতে পাইলেন না; কিন্তু চিনিলেন যে সৰ্য্যমখী। পরে সােয্যমখী তাহার পদধবনি পাইয়া উঠিয়া কাছে আসিলেন। সােয্যমখেীকে দেখিয়া কমলমণি, বিবাহ হইয়াছে কি না, ইহা জিজ্ঞাসা করিতে পারিলেন না—সােয্যমখনীর কাঁধের হােড় উঠিয়া পড়িয়াছে।--নবদেবদার তুল্য সােয্যমখীর দেহতরা ধনকের মত ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে, সােয্যমখনীরু প্রফতুল্ল পদ্মপলাশ চক্ষ কোটরে পড়িয়াছে—সিযেমখনীর পদ্মমাখ দীঘর্ণাকৃতি হইয়াছে। কমলমণি বঝিলেন যে, বিবাহ হইয়া গিয়াছে। জিজ্ঞাসা করিলেন, “কবে হলো ?” সােয্যমখনী সেইরােপ মদ স্বরে বলিলেন, “কাল।” তখন দাই জনে সেইখানে বসিয়া নীরবে কাঁদিতে লাগিলেন—কেহ কিছ বলিলেন না। সােয্যমখী কমলের কোলে মাথা লকাইয়া কাঁদিতে লাগিলেন,-কমলমণির চক্ষের জল তাঁহার বক্ষে ও কেশের উপর পাড়িতে লাগিল। তখন নগেন্দ্র বৈঠকখানায় বসিয়া কি ভাবিতেছিলেন। ভাবিতেছিলেন, “কুন্দনন্দিনী! কুন্দ আমার! কুন্দ আমার সত্ৰী! কুন্দ! কুন্দ! কুন্দা! সে আমার!” কাছে শ্ৰীশচন্দ্ৰ আসিয়া বসিয়াছিলেন—ভাল করিয়া তাঁহার সঙেগ কথা কহিতে পারিতেছিলেন না। এক একবার মনে ಬ್ಲೌಸ್ ‘সােয্যমখী উদ্যোগী হইয়া বিবাহ দিয়াছে—তবে আমার এ সখে আর কাহার আপাত্ত !” সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ ঃ সােয্যমখী ও কমলমণি যখন প্রদোষে, উভয়ে উভয়ের নিকট সপশুট করিয়া কথ্য কহিতে সমর্থ হইলেন, তখন সােয্যমখী কমলমণির কাছে নগেন্দ্র ও কুন্দনন্দিনীর বিবাহবন্ত্তান্তের আমলে পরিচয় দিলেন। শনিয়া কমলমণি বিস্মিতা হইয়া বলিলেন, “এ বিবাহ তোমার যত্নেই। হইয়াছে—কেন তুমি আপনার মাতুর উদ্যোগ আপনি করিলে ?” সৰ্য্যেমখনী হাসিয়া বলিলেন, “আমি কে ?”—মদ, ক্ষীণ হাসি হাসিয়া উত্তর করিলেন,- বভিটর পর আকাশপ্রান্তে ছিন্ন মেঘে যেমন বিদ্যুৎ হয়, সেইরােপ হাসি হাসিয়া উত্তর করিলেন, “আমি কে ? একবার তোমার ভাইকে দেখিয়া আইস—সে মািখভরা আহাদ দেখিয়া আইস:- তখন জানিবে, তিনি আজ কত সখে সখী। তাঁহার এত সখি যদি আমি চক্ষে দেখিলাম, তবে কি আমার জীবন সার্থক হইল না ? কোন সখের আশায় তাঁকে অসখী রাখিব ? যাঁহার এক দন্ডের অসদুখ দেখিলে মরিতে ইচ্ছা করে, দেখিলাম দিবারাত্র তাঁর মম্পমান্তিক অসখ —তিনি সকল সখি বিসঙ্জন দিয়া দেশত্যাগী হইবার উদ্যোগ করিলেন—তবে আমার সখি কি রহিল ? বলিলাম, ‘প্ৰভু! তোমার সখই আমার সখ—তুমি কুন্দকে বিবাহ করা—আমি সখী হইব’,—তাই বিবাহ করিয়াছেন।” কমল। আর, তুমি সখী হইয়াছ ? সােয্য। আবার আমার কথা কেন জিজ্ঞাসা কর, আমি কে ? যদি কখনও স্বামীর পায়ে কাঁকর ফটিয়াছে দেখিয়াছি, তখনই মনে হইয়াছে যে, আমি ঐখানে বািক পাতিয়া দিই নাই কেন, স্বামী আমার বকের উপর পা রাখিয়া যাইতেন। বলিয়া সােয্যমখী ক্ষণকাল নীরবে রহিলেন—তাঁহার চক্ষের জলে বসন ভিজিয়া গেল— পরে সহসা মািখ তুলিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কমল, কোন দেশে মেয়ে হলে মেরে ফেলে ?” OOCA