পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bFMAR পরে অবকাশমতে প্ৰতাপ, সন্দরীকে বেদগ্রামের সকল কথা জিজ্ঞাসা করিলেন। অন্যান্য কথার পর চন্দ্রশেখরের কথা জিজ্ঞাসা করিলেন। সন্দরী বলিলেন, “আমি সেই কথা বলিতেই আসিয়াছি, বলি শািন।” এই বলিয়া সন্দরী চন্দ্রশেখর-শৈবলিনীর নিব্বাসন-বত্তান্ত সবিস্তারে বিবত করিলেন। শনিয়া, প্ৰতাপ বিস্মিত এবং সন্তব্ধ হইলেন। কিঞ্চিৎ পরে মাথা তুলিয়া, প্রতাপ কিছ রক্ষভাবে সন্দরীকে বলিলেন, “এত দিন আমাকে এ কথা বলিয়া পাঠাও নাই কেন ?” স। কেন, তোমাকে বলিয়া কি হইবে ? প্রা। কি হইবে ? তুমি সত্ৰীলোক, তোমার কাছে বড়াই করিব না। আমাকে বলিয়া পাঠাইলে কিছল উপকার হইতে পারিত। স। তুমি উপকার করিবে কি না, তা জানিব কি প্রকারে ? প্রা। কেন, তুমি কি জান না—আমার সব্বস্ব চন্দ্রশেখর হইতে ? স। জানি। কিন্তু শনিয়াছি, লোকে বড়মনিষ হইলে পািবব কথা ভুলিয়া যায়। প্ৰতাপ ক্লদ্ধ হইয়া, অধীর এবং বাক্যশান্য হইয়া উঠিয়া গেলেন। রাগ দেখিয়া সন্দরীর বড় আহাদ হইল। • পরদিন প্ৰতাপ এক পাচক ও এক ভূত্য মাত্র সঙ্গে লইয়া মঙেগরে যাত্ৰা করিলেন। ভূত্যের নাম রামচরণ। প্রতাপ কোথায় গেলেন, প্রকাশ করিয়া গেলেন না। কেবল রােপসীকে বলিয়া গেলেন, “আমি চন্দ্রশেখর-শৈবলিনীর সন্ধান করিতে চলিলাম ; সন্ধান না করিয়া ফিরিব না।” যে গহে ব্ৰহ্মচারী দলনীকে রাখিয়া গেলেন, মঙ্গেরে সেই প্ৰতাপের বাসা। সন্দরী কিছ দিন ভগিনীর নিকটে থাকিয়া, আকাঙক্ষা মিটাইয়া শৈবলিনীকে গালি দিল। প্রাতে, মধ্যাহ্নে, সায়াহে, সন্দেরী, রপসীর নিকট প্রমাণ করিতে বসিত যে, শৈবলিনীর তুল্য পাপিষ্ঠ, হতভাগিনী আর পথিবীতে জন্মগ্রহণ করে নাই। এক দিন রােপসী বলিল, “তা ত সত্য, তবে তুমি তার জন্য দৌড়াদৌড়ি করিয়া মরিতেছ। কেন ?” সন্দরী বলিল, “তার মন্ডপাত করিব বলে—তাঁকে যমের বাড়ী পাঠাব। ব’লে—তাঁর মখে আগনি দিব ব’লে৷” ইত্যাদি ইত্যাদি। রাপসী বলিল, “দিদি, তুই বড় কুদলী!” সন্দরী উত্তর করিল, “সেই তা আমায় কুদলী করেছে।” পঞ্চম পরিচ্ছেদ ঃ গঙ্গাতীরে কলিকাতার কোন্সিল স্থির করিয়াছিলেন, নবাবের সঙ্গে যাদ্ধ করিব। সম্প্রতি আজিমাবাদের কুঠিতে কিছ অস্ত্র পাঠান আবশ্যক। সেই জন্য এক নৌকা অস্ত্র বোঝাই দিলেন। আজিমাবাদের অধ্যক্ষ ইলিস সাহেবকে কিছ গপত উপদেশ প্রেরণ আবশ্যক হইল। আমিয়ট সাহেব নবাবের সঙ্গে গোলযোগ মিটাইবার জন্য মঙেগরে আছেন—সেখানে তিনি কি করিতেছেন, কি বঝিলেন, তাহা না জানিয়াও ইলিসকে কোন প্রকার অবধারিত উপদেশ দেওয়া যায় না। অতএব একজন চতুর কৰ্ম্মমচারীকে তথায় পাঠান আবশ্যক হইল। সে আমিয়টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া, তাঁহার উপদেশ লইয়া ইলিসের নিকট যাইবে, এবং কলিকাতার কৌন্সিলের অভিপ্রায় ও আমিয়টের অভিপ্রায় তাঁহাকে বঝাইয়া দিবে। এই সকল কায্যের জন্য গভনর বান্সিসার্ট ফন্টরকে পােরন্দরপর হইতে আনিলেন। তিনি অস্ত্রের নৌকা রক্ষণাবেক্ষণ করিয়া লইয়া যাইবেন, এবং আমিয়টের সহিত সাক্ষাৎ করিয়া পাটনা যাইবেন। সতরাং ফন্টরকে কলিকাতায় আসিয়াই পশ্চিম যাত্ৰা করিতে হইল। তিনি এ সকল বত্তান্তের সম্ববাদ পকেবই পাইয়াছিলেন, এজন্য শৈবলিনীকে অগ্ৰেই মঙ্গের পাঠাইয়াছিলেন। ফন্টর পথিমধ্যে শৈবলিনীকে ধরিলেন। ফন্টর অস্ত্রের নৌকা এবং শৈবলিনীর সহিত মঙ্গের আসিয়া তীরে নৌকা বাঁধিলেন। আমিয়টের সহিত সাক্ষাৎ করিয়া বিদায় লইলেন, কিন্তু এমত সময়ে গরগণ খাঁ নৌকা আটক করিলেন। তখন আমিয়টের সঙ্গে নবাবের বাদানবোদ উপস্থিত হইল। আদ্য আমিয়টের সঙ্গে 8SN)