বঙিকম রচনাবলী ডুবিলে বাঁচিলাম কই। আবার ভাবিল যে, এই দইটা সত্ৰীলোককে জলে ফেলিয়া নৌকা হালকা করি।--নৌকা আরও শীঘ্ৰ যাইবে। অকস্মাৎ তাহার এক কুবদ্ধি উপস্থিত হইল। এই সত্ৰীলোকদিগের জন্য যবনেরা তাহার পশ্চাদ্ধাবিত হইয়াছে, ইহা তাহার দািঢ় বিশ্ববাস হইল। দলনী যে নবাবের বেগম, তাহা সে শনিয়াছিল—মনে ভাবিল, বেগমের জন্যই মসলমানেরা ইংরেজের নৌকা আক্ৰমণ করিয়াছেক অতএব বেগমকে ছাড়িয়া দিলে আর কোন গোল থাকিবে না। সে স্থির করিল যে, দলনীকে নামাইয়া দিবে। দলনীকে বলিল, “ঐ একখানি ক্ষদ্র নৌকা আমাদের পাছ পাছ আসিতেছে দেখিতেছ?” দলনী বলিল, “দেখিতেছি।” ফ। উহা তোমাদের লোকের নৌকা, –তোমাকে কাড়িয়া লইবার জন্য আসিতেছে। এরাপ মনে করিবার কোন কারণ ছিল ? কিছই না, কেবল ফন্টরের বিকৃত বদ্ধিই ইহার কারণ,--- সে রািজতে সাপ দেখিল। দলনী যদি বিবেচনা করিয়া দেখিত, তাহা হইলে এ কথায় সন্দেহ করিত। কিন্তু যে যাহার জন্য ব্যাকুল হয়, সে তাহার নামেই মগধ হয়, আশায় অন্ধ হইয়া বিচারে পরাঙামািখ হয়। দলনী আশায় মগধ হইয়া সে কথায় বিশ্ববাস করিল—বলিল, “তবে কেন ঐ নৌকায় আমাদের উঠাইয়া দাও না। তোমাকে অনেক টার্কা দিব।” ফ। আমি তাহা পারিব না। উহারা আমার নৌকা ধরিতে পারিলে আমাকে মারিয়া ফেলিবে । দ। আমি বারণ করিব । ফ। তোমার কথা শানিবে না। তোমাদের দেশের লোক সত্ৰীলোকের কথা গ্রাহ্য করে না। দলনী তখন ব্যাকুলতাবশতঃ জ্ঞান হারাইল—ভাল মন্দ ভাবিয়া দেখিল না। যদি ইহা নিজামতের নৌকা না হয়, তবে কি হইবে, তাহা ভাবিল না; এ নৌকা যে নিজামতের নহে, সে কথা তাহার মনে আসিল না। ব্যাকুলতাবশতঃ আপনাকে বিপদে নিক্ষেপ করিল, বলিল, “তবে আমাদের তীরে নামাইয়া দিয়া তুমি চলিয়া যাও।” ফন্টর সানন্দে সম্মত হইল। নৌকা তীরে লাগাইতে হকুম দিল। কুলসম বলিল, “আমি নামিব না। আমি নবাবের হাতে পড়িলে, আমার কপালে কি আছে বলিতে পারি না। আমি সাহেবের সঙ্গে কলিকাতায় যাইব—সেখানে আমার জানা শনা লোক আছে ৷ ” দলনী বলিল, “তোর কোন চিন্তা নাই। যদি আমি বাঁচি, তবে তোকেও বাঁচাইব ।” কুলসম। তুমি বাঁচিলে। ত ? কুলসমৰ কিছতেই নামিতে রাজি হইল না। দলনী তাহাকে অনেক বিনয় করিল-সে কিছতেই শনিল না। ཡུག་ কুলসমকে বলিল, “কি জানি, যদি তোমার জন্য নৌকা পিছৰ পিছ আইসে। ३) ने 3 वाटे ।” কুলসম বলিল, “যদি আমাকে ছাড়, তবে আমি ঐ নৌকায় উঠিয়া, যাহাতে নৌকাওয়ালারা তোমার সওগ না ছাড়ে, তাহাই করিব।” ফন্টর ভয় পাইয়া আর কিছ বলিল না—দলনী কুলসমের জন্য চক্ষের জল ফেলিয়া নৌকা হইতে উঠিল। ফন্টর নৌকা খলিয়া চলিয়া গেল। তখন সময্যাস্তের অলপমাত্র বিলম্পর্ব 5ा(ट । ফন্ডটরের নৌকা ক্ৰমে দন্টির বাহির হইল। যে ক্ষদ্র তরণীকে নিজামতের নৌকা ভাবিয়া ফন্টের দলনীকে নামাইয়া দিয়াছিল, সে নৌকাও নিকটে আসিল। প্রতি ক্ষণে দলনী মনে করিতে লাগিল যে, নৌকা এইবার তাহাকে তুলিয়া লইবার জন্য ভিড়িবে; কিন্তু নৌকা ভিড়িল না। তখন তাহাকে দেখিতে পাইয়াছে কি না, এই সন্দেহে দলনী অঞ্চল উদ্ধে ব্যাখিত’ করিয়া আন্দোলিত করিতে লাগিল। তথাপি নৌকা ফিরিল না। বাহিয়া বাহির হইয়া গেল। তখন বিদ্যুচ্চমকের ন্যায় দলনীর চমক হইল—এ নৌকা নিজামতের কিসে সিদ্ধান্ত করিলাম! অপরের নৌকা হইতেও পারে! দলনী তখন ক্ষিপতার ন্যায়। উচ্চৈঃস্বরে সেই নৌকার নাবিকদিগকে ডাকিতে লাগিল। “এ নৌকায় হইবে না” বলিয়া তাহারা চলিয়া গেল। 8 CS
