পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৭০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজসিংহ মাণিক। বোধ হয়। যন্ধে লক্ষ জনকে মারিলেও দেখিয়া দঃখ হয় না। বসিয়া বসিয়া অনাহারে একজন লোেকও মরিলে দঃখ হয়। রাণা। তবে উহাদিগের সম্পবন্ধে কি করা যায় ? মাণিক। মহারাজ ! আমার এত বন্ধি নাই যে, আমি এমন বিষয়ে পরামর্শ দিই। আমার ক্ষদ্ৰ বদ্ধিতে সন্ধিস্থাপনের এই উত্তম সময়। জঠরাগিনর দাহের সময়ে মোগল যেমন নরম। হইবে, ভরা পেটে তেমন হইবে না। আমার বোধ হয়, রাজমন্ত্ৰিগণ ও সেনাপতিগণকে ডাকিয়া পরামর্শ করিয়া এ বিষয়ে মীমাংসা করা ভাল। রাজসিংহ এ প্রস্তাবে সম্মমত ও স্বীকৃত হইলেন। উপবাসে এত মানষে ম্যরাও তাঁহার ইচ্ছা নহে। হিন্দ, ক্ষধাত্তের অন্ন যোগান পরমধৰ্ম্ম বলিয়া জানে। অতএব হিন্দ, শত্রকেও সহজে উপবাসে মারিতে চাহে না। সন্ধ্যার পর শিবিরে রাজসভা সমবেত হইল। তথা প্রধান সেনাপতিগণ, প্রধান রাজমন্ত্রিগণ উপস্থিত হইলেন। রাজমন্ত্ৰিগণের মধ্যে প্রধান দয়াল সাহা। তিনিও উপস্থিত ছিলেন। মাণিকললও ছিল। রাজসিংহ বিচােয্য বিষয়টা সকলকে বঝাইয়া দিয়া, সভাসদগণের মত জিজ্ঞাসা করিলেন। অনেকেই বলিলেন, “মোগল ঐখানে ক্ষধা-তৃষ্ণায় মরিয়া পচিয়া থাকুক-ঔরঙ্গজেবের বেটাকে ধরিয়া আনিয়া উহাদের গোর দেওয়াইব । না হয়, দোসাদের দল আনিয়া মাটি চাপা দেওয়াইব । মোগল হইতে বার বার রাজপতের যে অনিষটি ঘটিয়াছে, তাহ্য সমরণ করিলে, কাহারও ইচ্ছা! হইবে না যে, মোগলকে হাতে পাইয়া ছাড়া যায়।” ইহার উত্তরে মহারাণা বলিলেন, “না হয় স্বীকার করিলাম যে, এই মোগলদিগকে এইখানে শকাইয়া মারিয়া মাটি চাপা দেওয়া গেল। কিন্তু ঔরঙ্গজেব। আর ঔরঙ্গজেবের উপস্থিত সৈন্যগণ মরিলেই মোগল নিঃশেষ হইল না। ঔরঙগজেব মরিলে শাহ আলম বাদশাহ হইবে। শাহ আলমের সঙেগ দক্ষিণাত্য-বিজয়ী মহাসৈন্য পৰ্ব্বব্যুতের অপর পারে সশস্ত্ৰে উপস্থিত আছে। আর দইটা মোগলসেনা আর দই দিকে বসিয়া আছে। আমরা কি এই সকলগলিকে নিঃশেষ ধবংস করিতে পারিব ? যদি না পারি, তবে অবশ্য একদিন সন্ধিস্থাপন করিতে হইবে। যদি সন্ধি করিতে হয়, তবে এমন সবসময় আর কবে হইবে ? এখন ঔরঙ্গজেবের প্রাণ কন্ঠাগত—এখন তাহার কাছে যাহা চাহিব, তাহাই পাইব । সময়ান্তরে কি তেমন পাইব ?” দয়াল সাহা বলিলেন, “নাই পাইলাম। তব, এই মহাপাপিৎঠ পথিবীর কণ্টকস্বরপ ঔরঙ্গজেবকে বধ করিলে পথিবীকে পািনরদ্ধার করা হইবে। এমন পণ্য আর কোন কায্যে নাই, মহারাজ মতান্তর করিবেন না।" রাজসিংহ বলিলেন, “সকল মোগল বাদশাহই দেখিলাম—পথিবীর কণাটক। ঔরঙ্গজেব শাহজাঁহার অপেক্ষাও কি নরাধম ? খস্র হইতে আমাদের যত অমঙ্গল ঘটিয়াছে, ঔরঙ্গজেব হইতে কি তত হইয়াছে ? শাহ আলম যে পিতৃপিতামহ হইতেও দরাচার না হইবে, তাহার স্থিরতা কি ? আর তোমরা যদি এমন ভরসাই কর—সে ভরসা আমিও না করি তা নয়—যে এই চারিটি মোগল সেনাই আমরা পরাজিত করিতে পারিব, তবে ভাবিয়া দেখ, কত অসংখ্য মনীষািহত্যার পর সে আশা। ফলে পরিণত হইবে। কত অসংখ্য রাজপত বিনষ্ট হইবে। অবশিষ্ট থাকিবে কয় জন ? আমরা অলপসংখ্যক ; মসলমান বহিসংখ্যক । আমরা সংখ্যায় কমিয়া গেলে, আবার যদি মোগল আসে, তবে কার বাহবিলে তাদের আবার তাড়াইব ?” দয়াল সাহা বলিল, “মহারাজ ! সমস্ত রাজপতনা একত্রিত হইলে মোগলকে সিন্ধা পার করিয়া রাখিয়া আসিতে কতক্ষণ লাগে ?” রাজসিংহ বলিলেন, “সে কথা সত্য। কিন্তু তােহা কখন হইয়াছে কি ? এখনও তা সে চেস্টা করিতেছি-ঘাঁটিতেছে কি ? তবে সে ভরসা কি প্রকারে করিব ?” দয়াল সাহা বলিলেন, “সন্ধি হইলেও ঔরঙ্গজেব সন্ধিরক্ষা করিবে, এমন ভরসা করি না। আমন মিথ্যাবাদী, ভান্ড কখনও জন্মগ্রহণ করে নাই। মন্তি পাইলেই, সে সন্ধিপত্রে ছিাড়িয়া ফেলিয়া দিয়া, যা করিতেছিল, তাহাই করিবে।” রাজসিংহ বলিলেন, “তাহা ভাবিলে কখনই সন্ধি করা হয় না। তাই কি মত?” GOS)